আপনজন ডেস্ক: বিলকিস বানু ধর্ষণ মামলায় বিরাট ধাক্কা খেল গুজরাত সরকার। গুজরাত দাঙ্গার সময় অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ বিলকিস বানুকে ধর্ষণ এবং তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের মুক্তির সিদ্ধান্ত দেওয়ার কোনো এখতিয়ার গুজরাত হাইকোর্টের নেই বলে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিল। সুপ্রিম কোর্টের এ রায়ের ফলে মুক্তি পাওয়া ১১ অপরাধীকে আবার কারাগারে ফিরতে হবে। তাদেরকে আত্মসমর্পণের জন্য দুই সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। যে ১১ জন দোষীকে মুক্তি দিয়েছিল গুজরাত সরকার, তারা হল যশবন্ত নাই, গোবিন্দ নাই, শৈলেশ ভট্ট, রাধেশাম শাহ, বিপিন চন্দ্র জোশী, কেসরভাই ভোহানিয়া, প্রদীপ মোরধিয়া, বাকাভাই ভোহানিয়া, রাজুভাই সোনি, মিতেশ ভাট এবং রমেশ চন্দনা।সোমবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি ভি নাগরত্না ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঁইয়ার বেঞ্চ জানায়, অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল গুজরাতে। অপরাধীরা সেই রাজ্যের কারাগারে বন্দি ছিল। কিন্তু মামলা হয়েছিল মহারাষ্ট্রে। অতএব মুক্তিদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কেবল মহারাষ্ট্রের আদালতের, গুজরাতের নয়। গুজরাতে সরকারের কোনও এখতিয়ারই নেই। আদালত বলেছে, “গুজরাট সরকারের ১ থেকে ১৩ নম্বর উত্তরদাতার ক্ষমা চেয়ে প্রার্থনা গ্রহণ করার কোনও এখতিয়ার ছিল না, কারণ বিধানগুলির অর্থের মধ্যে এটি উপযুক্ত সরকার ছিল না। সুতরাং, ২০২২ সালের ১০ আগস্ট তাদের পক্ষে করা ক্ষমার আদেশগুলি অবৈধ, বিকৃত এবং তাই বাতিল করা হয়েছে।
বিচারপতি নাগরত্না ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঁইয়া তাঁদের রায়ে জানান, ওই মুক্তিদানের বিরোধিতা করে বিলকিস বানু যে আবেদন জানিয়েছিলেন, তা যুক্তিযুক্ত বলেই গ্রহণযোগ্য। এ মামলার শুনানি সুপ্রিম কোর্টে চলবে। সেই সঙ্গে বিচারপতিরা এ কথাও জানিয়েছেন, সাজা মওকুফ করতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের সময় অনেক তথ্য গোপন করা হয়েছিল, জালিয়াতি করা হয়েছিল। তাই মুক্তিসংক্রান্ত বিষয়ে ২০২২ সালের ১৩ মে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায় বাতিলযোগ্য।২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গার সময় ২১ বছরের গৃহবধূ বিলকিস বানু ধর্ষণের শিকার হন। তখন তিনি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। হামলাকারীদের হাতে তার পরিবারের সাত সদস্যও নিহত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ছিল বিলকিসের তিন বছর বয়সি শিশুকন্যাও। ওই ঘটনায় করা মামলা ‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে’ গুজরাত থেকে মহারাষ্ট্র নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মুম্বাইয়ের সিবিআই আদালত ওই অপরাধকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ আখ্যা দিয়েছিল। ২০০৮ সালে অপরাধীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল।২০২২ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিন গুজরাত সরকার সাজাপ্রাপ্ত ১১ অপরাধীকে মুক্তি দেয়। সেই সিদ্ধান্ত বিতর্কের ঝড় তোলে। বিতর্ক ওঠে বন্দি থাকাকালে বহুবার তাঁদের প্যারোলে মুক্তি পাওয়াকে কেন্দ্র করেও। মুক্তির পর সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে বিজেপি নেতারা তাদের বরণ করেছিলেন। নেতাদের সভায় সাজাপ্রাপ্ত কাউকে কাউকে দেখাও যায়। তাদের পক্ষে বিজেপি নেতাদের কেউ কেউ ভালো ভালো মন্তব্যও করেছিলেন। এমন কথাও বলা হয়েছিল, তারা ব্রাহ্মণ, ওই অপরাধ করতে পারেন না।রাজ্য সরকারের দাবি ছিল, বন্দি অবস্থায় তারা ভালো ব্যবহার করেছিলেন। বিলকিসের অভিযোগ, মুক্তির বিষয়টি তাকে জানানোও হয়নি। এরপর বিলকিস নিজেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct