যা দেখলাম
এম মেহেদী সানি
গন্তব্যে পৌঁছাতে ব্যস্ত সকলেই।
দৌড়ে রেলগাড়ীর শেষ কামরায় উঠলাম কোনো ক্রমে।
বারাসাতে দাঁড়িয়ে ৫ঃ৪০ এর বনগাঁ লোকাল ছাড়তে বেশ কিছুটা বিলম্বিত।
যাত্রী সাধারণের চাপে দুই সিটের মাঝখানে জানালার পাশে সেঁটে গেলাম।
সম্মুখে বসে কালো সোয়েটারে এক কপোত-কপোতী।
হাতে হাত চেপে দু’জন দু’জনে মগ্ন গল্পে।
কথা বোঝা না গেলেও তুই তুই করে গল্প করছিল ওরা।
সম্পর্ক ভালোবাসায় পরিপূর্ণ, নেহাত আবেগ নয়।
বয়স ২৫ পেরিয়েছে মনে হলো।
হঠাৎ ছন্দপতন, হাতে হাত নেই !
দু’জনের দু’হাতে মুঠো ফোনের আবির্ভাব।
বিবর্ণ হলো দুটি বদন !
ছেলেটি শুরু করলো তাস খেলা, আর মেয়েটি ?
তেমন কিছুই না ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ স্ক্রল।
তবে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি অবিরাম।
‘সিনক্রিয়েট’ শব্দটা বার বার ভেসে আসছিল কানে।
অবাধ্য প্রেমিকা ! প্রেমিকের মেজাজেই ছন্দপতন তা নিশ্চিত হলাম।
সুন্দরীর মলিন বদনে কাজল ভরা আঁখির বাঁকা ইশারায় মায়া হল যুবকের।
শুরু হলো একে অপরের মুঠোফোন দেখাদেখি,
নিমেষেই মিটে গেল সবকিছু, যেন কিছুই হয়নি।
দুটি ফোনের ঠিকানা হলো প্রেমিকার ব্যাগে৷
এবার যেন হাতে হাত রেখে দু’জন দু’জনের মান-অভিমান ভাঙানোর পালা
যুবতীর মুখমণ্ডলের উপর থেকে এলোকেশ সরিয়ে.. এমন করো কেন ? প্রশ্ন যুবকের।
যুবতীর হাসিমাখা উত্তরে প্রায় ফিরে পেল সম্পর্ক, তা বোঝাই যাচ্ছে।
ফিস ফিস করে কতো কথা, কতো ভাব, অনুভূতি,
ভালোবাসা তা অনুমান করায় যায়।
ক্ষণিক যুবকের বাম বাহুতে আবদ্ধ রমণী কী বলছিল
তা বোঝা বেশ কষ্টসাধ্য।
তবে সম্মুখে ভালোবাসার আদান-প্রদান দৃষ্টি গোচর হওয়ার উপক্রম নেই।
কিছুক্ষণই ওরাও কিছুটা স্বাভাবিক ছন্দে !
জীবনে কি পেলাম ? যুবকের কাছে
যুবতির হঠাৎ এমন প্রশ্নে অবাক হলাম আমিও।
বিয়ের পর ও ছিল বেকার, মনে পড়ে ৩০ টাকা দিয়ে একটা চুল চাঁপা কিনে দিয়েছিল, আর..., মনে পড়ছে না।
যুবকের একেবারে সোজা উত্তর, আমি তো তোকে অনেক কিছুই দিয়েছি।
আরো অনেক কথাই কান পর্যন্ত পৌঁছালো না,
অনুভূতিটাই অনুভব করছিলাম।
হঠাৎই তাড়াহুড়ো করে ওরা নেমে গেল অশোকনগর।
আমি চললাম গন্তব্যে৷
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct