এম মেহেদী সানি, গোবরডাঙ্গা, আপনজন: অপেক্ষার অবসান, গোবরডাঙ্গা সহ পার্শ্ববর্তী এলাকার সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে পুনরায় চালু হতে চলেছে গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতাল ৷ শনিবার গোবরডাঙ্গা হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী, সিএমওএইচ সমুদ্র দাশগুপ্ত সহ, জেলা পরিষদের জন স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ অজিত সাহা প্রমুখ, উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, গোবরডাঙ্গা পৌরসভার চেয়ারম্যান শংকর দত্ত, এন সি কর সহ অন্যান্যরা ৷ হাসপাতাল পরিদর্শন এসে জরুরী বৈঠকের পর নারায়ণ গোস্বামী সমস্ত সমস্যার সমাধান করে পুনরায় দ্রুত হাসপাতাল খোলার জন্য উত্তর ২৪ পরগনা ডিএম এবং রাজ্য স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম (আইএএস) এর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন ৷ এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নারায়ণ গোস্বামী গোবরডাঙ্গা হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণ ব্যাখ্যা করে জানান, ‘গোবরডাঙ্গা পৌরসভার জমিতে জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকা গোবরডাঙ্গা হাসপাতাল বিভিন্ন সমস্যার কারণে স্বাস্থ্য দপ্তরের স্বীকৃতি মেলেনি ৷ আজকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আমরা গোবরডাঙ্গা হাসপাতাল সম্পূর্ণটাই স্বাস্থ্য দপ্তরের অধীনে দিয়ে দিতে চাই ৷ ডিএম, স্বাস্থ্য সচিব এর সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছে, এটা আমরা এখন ‘আরবান প্রাইমারি হেলথ সেন্টার’ করতে চলেছি ৷ এটার অর্থনৈতিক কাঠামো নিয়ন্ত্রণ এবং কর্মচারী নিয়ন্ত্রণ গোবরডাঙ্গা পৌরসভা করবে ৷ আমাদের টার্গেট থাকবে আগামী মার্চ এপ্রিলের মধ্যে এটা যাতে সম্পূর্ণরূপে চালু করা যায় ৷ সিএমওএইচ কে আমরা দায়িত্ব দিয়েছি আগামী সাত দিনের মধ্যে সমস্ত কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানোর জন্য ৷’
প্রসঙ্গত ৬ দশকেরও বেশি পুরানো গোবরডাঙ্গা হাসপাতাল । ২০০১ সালে দায়িত্ব নিয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ । সে সময় থেকেই ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে হাসপাতালের পরিষেবা । ২০১৪ সালে আচমকা জেলা পরিষদের তরফে নোটিস জারি করে জানানো হয় যে গোবরডাঙা হাসপাতালে আপাতত বন্ধ করা হল ইন্ডোর পরিষেবা । আউটডোর বিভাগ কোনোরকম চালু থাকলেও গোবরডাঙার তৎসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা বঞ্চিত ছিলেন ওই হাসপাতালটির পরিষেবা থেকে । সাম্প্রতিক সময়ে আউটডোর পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়, তবে করোনাকালীন সময়ে করোনা হাসপাতাল হিসাবে নতুনভাবে উদ্বোধন হয় গোবরডাঙ্গা হাসপাতাল, পরে তো আবারো বন্ধ হয়ে যায় ৷ সামনে লোকসভা ভোট তার আগে গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা পরিষেবা চালু করতে পদক্ষেপ করল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ ও স্বাস্থ্য দপ্তর । বিরোধী দলগুলির অবশ্য বক্তব্য, এটি নির্বাচনী চমক ছাড়া কিছু নয় । তবে গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে জিতলে বিজেপির তরফ থেকেও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল গোবরডাঙ্গা হাসপাতাল চালু করা হবে, যদিও তা বাস্তবায়ন হয়নি ৷ এলাকার মানুষের কথায়, ভোটের আগে সব দলের ভোট প্রচারের ক্ষেত্রে মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায় গোবরডাঙ্গা হাসপাতাল, তবে ভোট আসে ভোট যাই তবুও হাসপাতালের বেহাল দশা কাটে না। অতীতে হাসপাতালে ৩০টি শয্যা ছিল। সর্বক্ষণ চিকিৎসক-নার্স থাকতেন । অপারেশন থিয়েটার ছিল । যন্ত্রপাতি ছিল। ছোটখাটো অস্ত্রোপচার হত। প্রসূতিদের স্বাভাবিক প্রসবও হত । হাসপাতালের নিজস্ব অ্যাম্বুল্যান্স ছিল । চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের থাকার জন্য কোয়ার্টার ছিল । এক্স রে, প্যাথোলজি, নেবুলাইজার-সহ নানা পরিষেবা পাওয়া যেত । পানীয় জলের ব্যবস্থা ছিল । হাসপাতালে আলাদা হোমিওপ্যাথি বিভাগ ছিল । দীর্ঘদিন এই সমস্ত পরিষেবা না পাওয়ায় প্রবল ক্ষুব্ধ গোবরডাঙ্গার বিপুলসংখ্যক মানুষ । এই হাসপাতাল বন্ধ থাকায় যে কোনও প্রয়োজনে হয় বনগাঁ নয়তো বারাসত জেলা হাসপাতালে ছুটতে হয় গোবরডাঙাবাসীকে । তবে শহরবাসী চাইছেন, জোড়াতালি নয়, সত্যি সত্যিই দিনরাতের সব পরিষেবা আগের মতো চালু হোক।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct