শূন্য অনুভূতি
শংকর সাহা
তিন বছর থেকে এপাড়ায় বসবাস শ্রীজিতার। কলেজ পাশ করে চাকরি। আজ যেন জীবনের ঠিকানাটি সেই শহর কলকাতা ছেড়ে এই ছোট্ট শহরে আসা। এখানে একটি রাষ্ট্রয়ত্ব ব্যাঙ্কে চাকরি করে শ্রীজিতা। কষ্ট হলেও এই ছোট্ট শহরকে আজ সে মানিয়ে নিয়েছে। সকাল নয়টায় বেরিয়ে গিয়ে আবার সেই সন্ধ্যে সাতটায় বাড়ি ফেরা। ছোটো থেকে কোনোদিন একগ্লাস জল পর্যন্ত নিয়ে খেতে হয়নি তাকে কিন্তু আজ যেন সময়ই তাকে সবকিছুকে শিখিয়ে দিয়েছে। প্রতিদিন রাতে শোবার সময় রবিঠাকুরের “গল্পগুচ্ছ” পড়ে শ্রীজিতা যা তাকে বাঁচতে শিখিয়েছে।এখানে আসার পরে ওপাড়ার হরিচরণ গয়লা প্রতিদিন দুধ দিয়ে যেত তাকে কিন্তু আজ হরিচরণ অসুস্থ তাই তার বছর দশের ছোট্ট ছেলে কানাই আজ শ্রীজিতাকে দুধ দিয়ে যায়। প্রথম যেদিন কানাইকে দেখেছিল শ্রীজিতা সেদিন খুব আশ্চর্য হয়েছিল সে। আর মনে পড়েছিল নিজের শৈশবের দিনগুলোর কথা যখন বাবার সাথে গাড়িতে স্কুলে যেত। প্রতিদিন শ্রীজিতাকে দুধ দিতে আসার সময় হাতে করে কিছু ফুল নিয়ে আসত কানাই। মুখে কিছু বলতো না শুধু বারান্দার এককোণে দুধের কেটলি রেখে তার উপরে ফুলগুলো রেখে চলে যেত সে। শ্রীজিতার ফুলগুলো বেশ ভালো লাগত।সেদিন ঘুম থেকে উঠে অফিসে যাবার সময় শ্রীজিতার নজরে পড়ে বারান্দায় দুধের কেটলিও নেই আর ফুলও নেই। এমন করে পরপর চারদিন কেটে যায়। কানাই আর আসেনা...সেদিন অফিস থেকে ফেরার সময় ওপাড়ার বস্তিতে যায় শ্রীজিতা। সেখানে কানাইদের বাড়ি যেতেই শ্রীজিতা জানতে পারে কানাইয়ের কঠিন অসুখ। ডাক্তার বাবু বলেছেন কিছুদিনের মধ্যে শহরে না নিয়ে গেলে তাকে বাঁচানো সম্ভব হবেনা। কানাইয়ের মাথার কাছে বসে শ্রীজিতা বলে ওঠে ,” কানাই তুই সু্স্থ হয়ে উঠবি রে। আবার আমায় ফুল দিবি।জানিস তোর ফুলগুলো দিয়ে আমি রবিঠাকুরের ছবিতে মালা পড়াতাম”।সেই রাতেই কানাইকে নিয়ে শহর কলকাতায় পাড়ি দেয় শ্রীজিতা। ট্রেনের সিটে বসে কানাইয়ের মাথায় হাত বুলোতে থাকে। রাত্রি তখন দুটো। ট্রেনের শব্দের সাথে ভেসে এলো জোনাকির আওয়াজ। হঠাত তার বুকটি চমকে উঠে। কানাইকে শক্ত করে জড়িয়ে থাকে শ্রীজিতা..!!
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct