সেখ রিয়াজুদ্দিন ও আজিম শেখ, বীরভূম, আপনজন: নলহাটি হীরালাল ভকত কলেজের সভাঘরে ৫ ও ৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হল শের-এ বাংলা এ কে ফজলুল হকের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্র। প্রথম দিনে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ তথা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ চেয়ার প্রফেসর অমিত দে, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমিরেটস ও বঙ্গরত্ন আনন্দ গোপাল ঘোষ, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান সৈয়দ তানভীর নাসরিন, রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান বাবুলাল বালা, হীরালাল ভকত কলেজের অধ্যক্ষ ড. নুরুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়া বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মিসবাহ কামাল ও শিলচর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান সাহানুর রহমান অনলাইনে বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
হীরালাল ভকত কলেজের অধ্যক্ষ ড. নূরুল ইসলাম মহাশয় স্বাগত ভাষণ প্রদান করে আলোচনার সূচনা করেন। তিনি এ কে ফজলুল হকের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। শের-এ বাংলা এ কে ফজলুল হকের জীবনদর্শন ও সমকালীন রাজনীতি বিষয়ে তিনি আলোকপাত করেন। অধ্যাপক অমিত দে তাঁর বক্তব্যে এ কে ফজলুল হকের পরিবারের ঐতিহ্য তুলে ধরেন। তাঁর ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র বিশ্লেষণ করেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনে স্ববিরোধী অবস্থানের ব্যাখা দিতে গিয়ে বলেন, হক সাহেব বলতেন, তাঁর লক্ষ্য ছিল অভিন্ন, সময় নিরপেক্ষ। কিন্তু পদ্ধতি ছিল ভিন্ন, সময় সাপেক্ষ। অমিত দে বলেন, ব্যক্তিগত কারিশমা রাজনৈতিক সাফল্যের চাবিকাঠি। এই কারিশমা কখনো অর্জিত হয় আবার কোনো ক্ষেত্রে তা ঐশ্বরিক বা প্রাকৃতিক হয়। হক সাহেবের কারিশমা ছিল অর্জিত। এপ্রসঙ্গে অধ্যাপক অমিত বলেন, দীর্ঘ সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলন ছেড়ে ১৮৭০ থেকে বাঙালি মুসলিম সম্প্রদায় আধুনিক তথা ব্রিটিশ প্রবর্তিত শিক্ষা গ্রহণ শুরু করে। বাঙালি মুসলিম আত্মপরিচিতি নির্মাণ শুরু হয়। এক্ষেত্রে যেসব পরিবার অগ্রণী ভূমিকা পালন করে তাদের কথা উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য , বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ভারতের সফল রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধিকাংশ ব্যক্তি ছিলেন আইনজীবী। তাত্বিক রাজনৈতিক নেতা খুব কম ছিলেন। এ কে ফজলুল হক সাহেবের পরিবার তেমনি একটি পরিবার। হক সাহেব ও তাঁর পিতাও ছিলেন আইনজীবী। অধুনা বাংলাদেশের বরিশালে তাদের পৈতৃক বাড়ি ছিল। স্মরণীয়, অধ্যাপক অমিত দে এ কে ফজলুল হকের পরিবারের উত্তরপুরুষ। তিনি ফজলুল হকের নাতি। অধ্যাপক আনন্দ গোপাল ঘোষ তাঁর দীর্ঘ ভাষণে সমকালের প্রেক্ষাপটে এ কে ফজলুল হকের রাজনৈতিক মতাদর্শ তুলে ধরেন। অধ্যাপিকা সৈয়দ তানভীর নাসরিন আলোচনা চক্রে নাতিদীর্ঘ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। বিশেষ করে, মুসলিম মহিলাদের আধুনিক শিক্ষা অর্জনের আকুতি তুলে ধরেন। বিভিন্ন বক্তা বলেন, হক সাহেব ছিলেন আগাগোড়া ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদী। তিনি বাঙালি জাতিসত্ত্বার কঠোর সমর্থক ছিলেন। বাঙালি জাতিকে অবাঙালি হিন্দু ও মুসলিমরা কিভাবে প্রভাবিত করেছে এবং বাঙালি ঐক্য ধ্বংস করেছে তার বর্ণনা দেন একাধিক বক্তা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct