মনিরুজ্জামান, বারাসত, আপনজন: বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা ব্লকের চাকলায় তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কোর কমিটির উদ্যোগে কর্মী সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেংস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বেলা ১২ টার কিছু পরে চাকলা লোকনাথ মন্দিরের পাশে হেলিপ্যাডে নেমে হেঁটে লোকনাথ মন্দির গিয়ে পুজো দিয়ে মন্দির চত্বরেই এক অনুষ্ঠান থেকে একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কর্মী সভায় যোগ দেন। এই কর্মীসভায় তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমি দুয়ারে সরকার করে অনেক কাজ করেছি গ্রাম সভায়,পঞ্চায়েত সমিতিতে এবং জেলা পরিষদে যারা আছেন তাদের বলবো কাজগুলো ত্বরান্বিত করুন। মন্ত্রী যারা আছেন তাঁদের বলব একটু জেলায় বেশি করে ঘুরুন। মানুষের কাছে ঘুরুন। দরকার হলে চায়ের দোকানে আড্ডা মারুন। আমি যখন ছোটবেলায় রাজনীতি করতাম আমি দেখেছি একটা হাসপাতালে পর্যন্ত আমরা ভর্তি করতে পারতাম না।আর আজকে স্বাস্থ্য সাথী থেকে শুরু করে লক্ষীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, সবুজ সাথীর সাইকেল, ১২ ক্লাসের স্মার্ট ফোন দেওয়া থেকে শুরু করে কোনটা হয়নি? সংখ্যালঘুদের জন্য ঐক্যশ্রী স্কলারশিপ, কোটি কোটি ছেলেমেয়েদের আমরা পড়াচ্ছি ৯৭ শতাংশ সংখ্যালঘু ভাইবোনেরা ওবিসির মধ্যে ঢুকে গিয়েছেন ১৭ শতাংশ রিজার্ভেশন এর মধ্যে। আমাদের এখানে সংখ্যালঘু ভাই-বোনেরা মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছেন। তপশিলি ভাই বোনেরা আজকে শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের দ্বারা উন্নত হচ্ছেন। তারা তপশিলি বন্ধু পেনশন পাচ্ছেন। আদিবাসীরা জয় যোহর পেনশন পাচ্ছেন। আজকে যারা লক্ষীর ভান্ডারের টাকা পাচ্ছেন তাদের যখন ৬০ বছর বয়স হবে তখন অটোমেটিক্যালি যতদিন তিনি বেঁচে থাকবেন এই লক্ষীর ভান্ডার তাকে বার্ধক্য ভাত পেনশন দেবে অর্থাৎ নতুন করে।এদিন সংখ্যালঘুদের উদ্দেশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ভোটটা বিজেপিকে বা সিপিএমকে কাউকে দেবেন না। এরা তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট কাটার জন্য আছে। একদল বসন্তের কোকিল এসেছে। তারা এলাকায় এলাকায় ঘুরছে ধর্মীয় সভা করার নামে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট কাটার চেষ্টা করছে। সংখ্যালঘু বন্ধুরা সাবধান। মনে রাখবেন আপনাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত। আপনাদের আর্থিক নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তা সবকিছুই আমরা করেছি। বাংলাকে তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে রাখতে হবে। আমরা যদি আসন কম পাই তাহলে বিজেপির অত্যাচার আরো বাড়বে। বিভিন্নভাবে অত্যাচার বাড়বে। আপনারা দেখেছেন সিএএ থেকে শুরু করে এনআরসি থেকে শুরু করে কম করেনি ওরা। আমরা যতদিন আছি আপনাদের ওপর কেউ কোনও ক্ষতি করার চেষ্টা করলে আমি আপনাদের পাহারাদার ছিলাম, আছি এবং থাকব। আমি লক্ষ্য রাখবো।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার সব টাকা আমাদের বন্ধ করে দিয়েছে। ১০০ দিনের কাজ যারা করছে তাদের টাকা পর্যন্ত দেয়নি। ১০০ দিনের কাজ বাংলাকে ওরা দেয়নি। তা সত্ত্বেও আমরা প্রায় ৪৫ দিন রাজ্য সরকারের প্রচেষ্টায় ১০০ দিনের কাজ করেছি নানারকম ভাবে। যাতে গরিব মানুষ ক্ষুধায় না মরে। নির্বাচন আসলে বিজেপি ঘোষণা করে আমি পাঁচ কেজি চাল দেব। আরে, আমি তো প্রথম থেকেই দিই। তিনি বলেন, আমি বিনা পয়সায় রেশন দেবো বলেছি দিয়েছি, স্বাস্থ্য সাথী কার্ড দেবো বলেছি দিয়েছি, লক্ষীর ভান্ডার করাবো বলেছি করেছি। আমরা বলেছিলাম স্মার্ট কার্ড দেব দিতে শুরু করেছি। নবম শ্রেণীতে উঠলে সাইকেল পায় সবুজ সাথী প্রকল্পে, দ্বাদশ শ্রেণীতে উঠলে স্মার্ট ফোন পাচ্ছে। জানুয়ারির মধ্যে সাইকেল দেওয়া কমপ্লিট হয়ে যাবে এ বছরের। স্মার্ট ফোন পেয়ে যাবে জানুয়ারির পর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে। এ কাজগুলো আমাদের চলছে। সামাজিক প্রকল্প কেউ করেনা। আমরা করছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মতুয়ার ঠাকুর বাড়ির উন্নয়ন করেছি, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মতুয়া বাড়ির সৌন্দর্য আমরাই করে দিয়েছি। কেউতো করেনি। তাদের বড় বড় কথা। ইলেকশনের সময় মতুয়া ঠাকুরের বাড়ি ঘুরে বলবে ভোটটা আমাদের দাও। সারা বছর কি করেন? তিনি আরো বলেন, আপনারা সবাই নাগরিক এদেশের। নাগরিক যদি না হন তাহলে রেশন পাচ্ছেন কি করে? নাগরিক যদি না হন তাহলে আপনার স্বাস্থ্য সাথী পাচ্ছেন কি করে? প্যান কার্ড হচ্ছে কি করে? আধার কার্ড হচ্ছে কি করে? আগে সিটিজেনশিপ কার্ড ডি এম দের হাতে ছিল। এখন কেড়ে নিয়েছে রাজনীতি করার জন্য। সমাজে সমাজে ভাগ করার জন্য। বলছে একে দেব ওকে দেব না। এটাতো করা উচিত নয়। করলে সবার জন্য করো। ‘৭১ সাল পর্যন্ত ওপার থেকে যারা এসেছেন তারা যত কলোনিতে আছেন এবং পরেও যারা এসেছেন আমরা প্রত্যেকটা উদ্বাস্তু কলোনিতে পাট্টা দিচ্ছি তাদের নাম হচ্ছে চিরস্থায়ী ঠিকানা আমরা সকলকে পাট্টা দিচ্ছি। যাতে তাদের উদ্বাস্তু হয়ে আর থাকতে না হয়। তিনি বলেন, কেন্দ্র ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে দিয়েছ, বাংলার যোজনার টাকা বন্ধ করে দিয়েছে বাংলার গ্রামীণ রাস্তার টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা ক্ষমতায় আসার পর এক লক্ষ ১০ হাজার কিমি রোড তৈরি করে দিয়েছি। আগামী দিনে আরো ১১০০০ নতুন রাস্তা তৈরি করে দেব নিজেদের টাকা দিয়ে। কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের এখান থেকে ট্যাক্স তুলে নিয়ে যায়। সেই টাকা থেকে আমাদের শেয়ারটা দিয়ে বলছে আমরা দিয়েছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সবাইকে দেখে বিজেপি বলছে চোর চোর। সব থেকে বড় চোর ওরা। ডাকাতদের সর্দার ওরা। চোরের মায়ের বড় গলা। বিজেপি করলেই ওয়াশিং মেশিন। আর তৃণমূল করলে জেলে ভরো। সব নেতাদের জেলে ভরো। কোন কেসের বিচার হয়নি। জেলে ভরে রেখে দিচ্ছে। কারণ যাতে ইলেকশনটা করতে না। পারে পার্টির কাজ করতে না পারে। বিজেপির কটা চোর গ্রেপ্তার হয়েছে? কটা খুনি গ্রেপ্তার হয়েছে? শুধু এজেন্সির গণতন্ত্র চলছে। এজেন্সিকে দিয়ে। নেতারা বলছেন গ্রেফতার করাও তা না হলে জেতা যাবেনা। ইন্ডিয়া জোট তিনি বলেন ইন্ডিয়া জোট সারা ভারতবর্ষে থাকবে। আর বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস লড়াই করবে। বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসই বিজেপিকে শিক্ষা দিতে পারে। সারা ভারতবর্ষকে পথ দেখাতে পারে। বালুকে এরেস্ট করে অনেক কাজ করেছ। এরেস্ট করেছ কিসের জন্য? যাতে পার্টির কাজ করতে না পারে। যাতে ইলেকশন করতে না পারে। সেই সুযোগে সিপিএম কংগ্রেস বিজেপি একসাথে বেরিয়ে পড়েছে রাস্তায়। রোজ মিছিল করছে রাস্তায়। আর সবাইকে বলছে চোর চোর। তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন সংখ্যালঘুদের ওপর, খ্রিস্টানদের ওপর দলিতদের ওপর, তপশিলিদের ওপর, আদিবাসীদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে সারা ভারতবর্ষে। কি অত্যাচার চালাচ্ছে। এই অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। এই অত্যাচার বন্ধ করবার ডাক দিয়ে যাই।কেউ যদি ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে তাদের বলব বিজেপির টাকা নিয়ে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করতে যাবেন না। মনে রাখবেন ক্ষমতায় কিন্তু আমরাই থাকবো। আমরা লক্ষ্য রাখবো। আপনাদের মতো এজেন্সি লেলিয়ে দিয়ে আমরা কাজ করি না। আমরা মনে রাখি লক্ষ্য রাখি। দলীয় শৃংখলার ব্যাপারে তৃণমূল সুপ্রিম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কিছু কিছু এলাকায় আমি শুনতে পাচ্ছি নিজেরা কেউকেটা হয়ে গেছেন। নিজেদের জন্য তারা পার্টির মুখটা মনে রাখছেন না। আমাকে এত খাটতে হচ্ছে এটা মনে রাখছেন না।তিনি বলেন, আপনাদের এখানে অনেক নেতা আছেন, অনেক মন্ত্রী আছেন। আমি একটি কোর গ্রুপ তৈরি করে দিয়ে যাব। এমপিদের এই কোর গ্রুপে রাখছি না। কারণ সামনে তাদের ইলেকশন আছে। তৃণমূল কংগ্রেসের জয়কে সুনিশ্চিত করার জন্য নির্মল ঘোষ কে চেয়ারম্যান করে ব্রাত্য বসু, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, রথীন ঘোষ, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সুজিত বসু, তাপস রায়, নারায়ণ গোস্বামী, বীণা মন্ডল, নুরুল ইসলাম, বিশ্বজিৎ দাস, গোপাল শেঠ, মমতা বালা ঠাকুর, সুরজিৎ বিশ্বাস, সুকুমার মাহাতো, রফিকুল ইসলাম মন্ডল, তাপস দাশগুপ্ত, রফিকার রহমান, এটিএম আব্দুল্লাহ, গোবিন্দ দাস এদেরকে নিয়ে এই কোর কমিটির তৈরি হবে। অন্যান্য সাংসদরা এবং বিধায়কদের এই কোর কমিটিতে আমন্ত্রণ জানানো হবে। প্রতি দশদিন কমিটিকে রিপোর্ট পেশ করতে হবে। তিন চার জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করেন যারা দলীয় নেত্রীকে রিপোর্ট দেবেন। নির্মল ঘোষ যেমন চেয়ারম্যান আছেন তেমনি দমদম বসিরহাটের জন্য সুজিত বসু ব্যারাকপুরের জন্য পার্থ ভৌমিক হাবড়ার জন্য নারায়ণ গোস্বামী। তিনি বলেন, সিনিয়র লিডারদের যোগ্য মর্যাদা দিতে হবে। এটা আমি বারবার বলছি। পুরনো চাল ভাতে বাড়ে আর নতুন চাল আগে বাড়ে। দুটো চালকেই আমার দরকার। সবাইকে নিয়ে চলতে হবে। এই কর্মীসভা থেকে তিনি তিনি কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা স্লোগান তুলুন, আওয়াজ তুলুন অলি গলি মে শোর হ্যায়, বিজেপি পার্টি চোর হ্যায়।এদিনের এই কর্মীসভায় উপস্থিত ছিলেন সংসদ সৌগত রায়, ডাক্তার কাকলি ঘোষ দস্তিদার, অর্জুন সিং, নুসরাত জাহান, মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, পার্থ ভৌমিক, রথীন ঘোষ, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সুজিত বসু, বিধানসভার মুখ্য সচেতন নির্মল ঘোষ, বিধায়ক তাপস রায়, নারায়ণ গোস্বামী, কাজী নুরুল ইসলাম, রহিমা মন্ডল, কাজী আব্দুর রহিম,কর্মাধ্যক্ষ একেএম ফারহাদ,মফিদুল হক সাহাজি সহ রাজ্য ও জেলার বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্ব।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct