মাফরুজা মোল্লা, সুন্দরবন, আপনজন: শীতের সুন্দরবনে প্রকোপ বৃদ্ধি পেতেই পরিযায়ী পাখিরা ভিড় জমাতে শুরু করেছে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে। সাম্প্রতিক নতুন করে গড়ে ওঠা কৃত্রিম ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে পাখিদের আনাগোনা অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। ফিনল্যান্ড,রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইরান সহ একাধিক দেশ থেকে হাজার হাজার পাখি সমুদ্র পথ ধরে দলে দলে চলে আসছে সুন্দরবনের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্যে সুন্দরবনের জঙ্গলে। ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন জায়গায়। এই পাখিদের মধ্যে বেশিরভাগই সামুদ্রিক এলাকার জলচর, দিবাচর এবং নিশাচর। সুন্দরবনের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ জঙ্গলে পাখিদের খাওয়ার জন্য উপযুক্ত কোন ফলের গাছ নেই। তবুও বিশেষ কোনও আকর্ষণে পাখিরা হাজার হাজার মাইল আকাশপথ বিরামহীন ভাবে উড়ে আসছে সুন্দরবনে বৃহত্তম বাঘ-অরণ্যে জঙ্গলে। এখানে আসা এবং ফেরার পথে দুর্যোগ- দুর্ঘটনায় পড়ে বহু পাখির মৃত্যুও ঘটছে। তবুই তারা প্রতি বছর শীতের সঠিক সময়ে নির্দিষ্ট জায়গায় চলে আসছে। বন বিভাগের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার মিলন কান্তি মন্ডল বলেন, ‘আমরা কয়েক বছর ধরে ম্যানগ্রোভ রোপণ করে কৃত্রিম বন সৃষ্টি করেছি। সেইসব জায়গায় প্রচুর খাবার পাওয়া যাচ্ছে। সেই খাবারের টানে
পরিযায়ী পাখিরা ভিড় জমাচ্ছে।’বন বিভাগের আরও একটিদপ্তর ‘সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প’উল্লেখ্য ‘প্রকৃতি সংসদ’ নামে কলকাতার একটি পক্ষী পর্যবেক্ষক সংস্থা গত বছর সুন্দরবনে সমীক্ষা চালিয়ে জানতে পেরেছে, রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪০ টি প্রজাতির বিদেশী পরিযায়ী পাখি এই শীত মরশুমে সুন্দরবনে বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য জঙ্গলে আসেন। এই সময় শীতপ্রধান দেশগুলিতে শীতের মাত্রা বেড়ে যায়। ওই শীত সহ্য করতে না- পেরে তারা কম শীতপ্রধান সুন্দরবন ও ভারতের বিভিন্ন যায়গায় চলে আসে। কিছুদিন সময় কাটানোর পরে আবার নির্দিষ্ট সময় ফিরে যায়। বংশ বিস্তারের পর পরের বছর আবার সপরিবারে চলে আসে।
বন বিভাগ সূত্রের খবর, এবার জম্বুদীপ, কলস, ঠাকুরাণ, মেছুয়া, ছাইমারি চরে সন্ধ্যার পর হাজার হাজার বিদেশী পরিযায়ী পাখি আস্তানা গেড়েছে। বকখালি,ভগবতপুর, গঙ্গাসাগরের রামকর চর এবং মাতলা চরে ভিনরাজ্যের পরিযায়ী পাখিদের ভিড় জমে। বিকেলের পরিযান বৈচিত্র্যের একটি আশ্চর্যের ঘটনা উল্লেখ করে জানিয়েছেন, পাখিরা সাধারণত দু’হাজার ফুট উচ্চতা দিয়ে সপ্তাহ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত উড়ে আসে। সারাদিন-সারারাত অবিরাম ওড়ে। ওড়ার সময় কোথাও থামে না, কিছুই খায় না। যাত্রা শুরুর আগে ভাল করে খেয়ে নেয়। ঘন্টায় ৫০ মাইল গতিবেগে প্রতিদিন ১৫০-৬০০ মাইল পথ উড়ে চলে। নির্দিষ্ট যায়গায় পৌছতে তারা উপকূলরেখা, নদীপথ, সূর্য-চন্দ্র-গ্রহ-তারা- নক্ষত্র কে লক্ষ্য করে চলে এই পাখি।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct