সারিউল ইসলাম, মুর্শিদাবাদ, আপনজন: বছরের শেষে সর্বসাধারণের জন্য খুলে যাবে মুর্শিদাবাদের ওয়াসেফ মঞ্জিল বা নিউ প্যালেস। পর্যটনের মরশুমে আইন বিভাগ এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দপ্তরের যৌথ প্রচেষ্টায় নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে নিউ প্যালেস। নবাবী দিনের বহু দলীল-দস্তাবেজ সহ ইতিহাসের বিভিন্ন সামগ্রী সংরক্ষণ করা রয়েছে এই প্যালেসে। নবাব পরিবার সূত্রে খবর, উনবিংশ শতকের শেষ দিকে একটি তিনতলা প্রাসাদ ছিল কেল্লা নিজামত চত্বরে। ১৮৯৭ সালের ২রা জুন ভয়াবহ ভূমিকম্পে সেই প্রাসাদ টি ভেঙে পড়ে। নবাব স্যার ওয়াসেফ আলী মির্জা নতুন একটি প্রাসাদ তৈরি করার পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা থেকে উনবিংশ শতকের শেষ দিকে ভেঙ্গে পড়া প্রাসাদের উপরেই শুরু হয় নতুন প্রাসাদ তৈরির কাজ। বিংশ শতকের প্রথম দিকে ১৯০৩-১৯০৪ সাল নাগাদ ওয়াসেফ মঞ্জিলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। প্রথমে এর নাম রাখা হয়েছিল ভিক্টোরিয়া হাউস। পরবর্তীতে ওয়াসিফ আলী মির্জার মায়ের পরামর্শ মত নিজের নামে ওয়াসেফ মঞ্জিল নামে প্রাসাদের নামকরণ করেন। হাজারদুয়ারির পরে নতুন একটি প্রাসাদ নির্মাণ হওয়ায় ব্রিটিশরা একে নিউ প্যালেস বলতো। প্রথমদিকে সেই প্রাসাদে বসবাস করতেন নবাব ওয়াসেফ আলী মির্জা। ১৯৩০ নাগাদ তিনি কলকাতাতে চলে যান। ইতিহাসবিদদের মতে, নবাব ওয়াসেফ আলী মির্জা খরচ করতে ভালবাসতেন, তাই বিভিন্ন জায়গায় ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। পরে সরকার তার সমস্ত কিছু বাজেয়াপ্ত করে এবং সমস্ত সম্পত্তির উপর এস্টেট ম্যানেজারকে দায়িত্বে রাখা হয়। এখনো পর্যন্ত একজন সরকারি আধিকারিক সেই এস্টেট ম্যানেজার পদে বহাল রয়েছেন।
ওয়াসেফ মঞ্জিলে একটা সময় বসবাস করেছেন বর্তমান মুর্শিদাবাদের ছোটে নবাব সৈয়দ রেজা আলী মির্জা সহ তার পরিবার। কিন্তু ১৯৮০ সাল বা তার পরবর্তী সময় তারাও সেই প্রাসাদটি ছেড়ে দেন। বর্তমানে সেই প্রাসাদ নিয়ে এস্টেটের সঙ্গে নবাব পরিবারের উচ্চ আদালতে মামলা চলছে। ২০০৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দপ্তরের হাতে যায় ওয়াসেফ মঞ্জিল। নবাবী আমলের বিভিন্ন দলিল, দস্তাবেজ এবং ইতিহাসের বিভিন্ন সামগ্রী প্রদর্শনীর জন্য জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার করা হতো ওয়াসিফ মঞ্জিলকে। কিন্তু বছর কয়েক ধরে তা বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। প্রায় পাঁচ বছর পর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দপ্তর এবং আইন বিভাগের বা এস্টেটের যৌথ প্রচেষ্টায় নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে ওয়াসেফ মঞ্জিল বা নিউ প্যালেস। পুরনো দিনের সেই সমস্ত দলিল দস্তাবেজ এবং নবাবী আমলের বিভিন্ন ইতিহাসের সামগ্রী আবারও পরিদর্শন করতে পারবেন পর্যটকরা। মুর্শিদাবাদ এস্টেটের এস্টেট ম্যানেজার দেবব্রত রায় বলেন, ‘বছর শেষ হওয়ার আগেই মাননীয় জেলা শাসক মহাশয়ের নির্দেশ মতো আমরা সর্বসাধারণের জন্য ওয়াসেফ মঞ্জিল খুলে দিচ্ছি। পর্যটকেরা বিভিন্ন পর্যটনস্থল ভ্রমণের পাশাপাশি ওয়াসেফ মঞ্জিল পরিদর্শন করতে পারবেন এবার থেকে।’অন্যদিকে ডিসেম্বরের শেষ দিকে ওয়াসেফ মঞ্জিলকে আলোর রসনায় নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। নিউ প্যালেসের সামনে থাকা মাঠের জঙ্গল পুরোপুরি পরিষ্কার করা হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষে সর্ব সাধারণের জন্য এই প্রাসাদ খুলে দেওয়া হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct