আপনজন ডেস্ক: সরকারের ‘স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের’ হাত থেকে গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নেতারা শুক্রবার দিনভর রাজধানী দিল্লির যন্তর মন্তরে ধরনা দিলেন। ধরনামঞ্চ থেকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বললেন, সংসদ থেকে ১৪৬ জন সদস্যের বহিষ্কার দেশের সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর ৬০ কোটি মানুষের অপমান। এই সরকার এইভাবে দেশের মানুষের কণ্ঠ রোধ করছে। তারা গণমাধ্যমকে মুঠোয় পুরে নিয়েছে। দেশের সব সম্পদ আদানির হাতে তুলে দিচ্ছে। ভেবেছে, এইভাবে সব স্বর স্তব্ধ করে দেবে। কিন্তু আমি নিশ্চিত, ওরা দেশের যুবসমাজকে এখনো বুঝতে পারেনি।ইন্ডিয়া জোটের পক্ষে এই বিক্ষোভ সভার আয়োজক ছিল প্রদেশ কংগ্রেস। আম আদমি পার্টির বিরুদ্ধেও এত দিন সবচেয়ে সরব ছিল দিল্লির প্রদেশ নেতৃত্ব। প্রদেশ নেতৃত্ব দিল্লির শাসক দলের সঙ্গে আসন সমঝোতারও বিরোধিতা করে এসেছে এত দিন। শুক্রবার প্রথম দেখা গেল কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির দিল্লির নেতারা এক মঞ্চে বসে একযোগে ‘ইন্ডিয়া জোট জিন্দাবাদ’ ধ্বনি দিলেন। হাতে হাত ধরাধরি করে ঐক্যের বার্তা দিলেন।এই সমাবেশে রাহুল বলেন, সংসদ ভবন আক্রমণের মধ্য দিয়ে দুটি বিষয় স্পষ্ট হয়। প্রথমত, নিরাপত্তাব্যবস্থার গলদ। যার দায় কেন্দ্রীয় সরকারের। দ্বিতীয়ত, বিক্ষোভকারীরাই বলেছেন, তাঁরা ওই কাজ করেছেন বেকারত্বের জ্বালা থেকে, বেকারত্ব নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। অথচ দুটি বিষয়ের একটি নিয়েও এই সরকার সংসদে জবাবদিহিতে রাজি নয়; বরং সেই ন্যায্য দাবি জানানোর ‘অপরাধে’ বিরোধীদের বের করে দেওয়া হল।রাহুল বলেন, ‘বিজেপির নেতারা নিজেদের দেশভক্ত বলে জাহির করেন। অথচ ওই হাঙ্গামার সময় সবচেয়ে আগে সভা ছেড়ে পালান বিজেপির সদস্যরাই। টিভিতে তা দেখায়নি। কিন্তু আমরা সভায় বসে তা দেখেছি।’
ইন্ডিয়া জোটের চতুর্থ বৈঠকেই ঠিক হয়েছিল শুক্রবার সব রাজ্যে বিরোধী জোটের নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা গণতন্ত্র রক্ষার দাবিতে সমাবেশ করবেন। দিল্লিতেও সেই সমাবেশ হবে। ওই দাবিতে গত বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়া জোটের নেতারা সংসদ ভবন থেকে মিছিল করেছিলেন বিজয় চক পর্যন্ত।আজ সকালেই যন্তর মন্তরে উপস্থিত হন ইন্ডিয়া জোটের নেতারা। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, রাহুল গান্ধী, শশী থারুর, দিগ্বিজয় সিংয়ের সঙ্গে ধরনামঞ্চ ভাগাভাগি করে নেন এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআইয়ের ডি রাজাসহ তৃণমূল কংগ্রেস, শিবসেনা, আরজেডি, জেডিইউসহ সব শরিক দলের নেতারা। জেএমএমের মহুয়া মাজি, ডিএমকের তিরুচি শিবা, আরজেডির মনোজ কুমার ঝা, তৃণমূল কংগ্রেসের মৌসুম নূর, এনসির হাসনাইন মাসুদি, বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক দলের এন কে প্রেমচন্দ্রন এবং এসপির এস টি হাসানও বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন।প্রত্যেকেই সরকারের ‘স্বৈরতান্ত্রিক’ মনোভাবের সমালোচনা করে বলেন, শাসক দল গণতন্ত্রের খোলস পরে দেশকে একদর্শী করে তুলছে। নেতারা বলেন, আজ ওরা ১৪৬ জন সংসদ সদস্যকে বহিষ্কার করছে, আরও একবার ক্ষমতায় এলে সংসদকেই তুলে দেবে।কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বিজেপির পাশাপাশি সংসদের স্পিকারদেরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, সংসদের স্পিকারকে নিরপেক্ষ হতে হয়। সাংবিধানিক পদে যিনি আসীন, তাঁকে সেই পদের মর্যাদা রক্ষা করতে শিখতে হয়। অথচ রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জাতপাতের আশ্রয় নিলেন। খাড়গে বলেন, তিনি বলতে উঠলেই সরকারপক্ষের সদস্যরা তাঁকে বাধা দেন। তাই বলে তিনি কখনো বলেননি, দলিত বলে তাঁকে বলতে দেওয়া হচ্ছে না।এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার বলেন, সংসদ আক্রান্ত হলো অথচ তার মাশুল দিতে হলো ১৪৬ জন বিরোধী সদস্যকে। তিনি বলেন, দেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, যুব, কোটি কোটি বেকারের কথা শোনার মতো কেউ নেই। জোটবদ্ধভাবে তাঁরাই এই সরকারের মোকাবিলা করবেন। সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, এই নৈরাজ্য থেকে পরিত্রাণের জন্যই প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করা। সেটাই আজকের দাবি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct