অমরজিৎ সিংহ রায়, বালুরঘাট, আপনজন: বার্ধ্যক্যের কারণে শরীরে নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। দৃষ্টিও ক্ষীণ। স্বামীর মাত্র তিন শতক বসত ভিটাতে তৈরি ভাঙ্গা বাড়িতে অক্ষম ছেলে, ছেলে বউ এবং নাতিপুতি নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে সকিনা বেওয়ার (৬৬)।ছেলে অসুস্থ্ হয়ে কাজ করতে না পারায় অন্যের দয়া এবং খাদ্য সাথী প্রকল্পে পাওয়া চালের জন্যই দুমুঠো ভাত পেটে পড়ছে। নুন আনতে পান্তা ফুরানো পরিবারের এই বৃদ্ধা অসহায় মহিলার বাড়ি বংশীহারী ব্লকের অন্তর্গত ব্রজবল্লভপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বেলকুড়িয়া গ্রামে।অনেক চেষ্টা করেও বার্ধক্য ভাতা প্রকল্পে নাম তুলতে পারেন নি সকিনা বেওয়া। এদিন বেলকুড়িয়া গ্রামে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল বয়সের কারনে সারা মুখ জুড়ে বলিরেখা স্পষ্ট।মুখে কোন দাঁত না থাকলেও কথা কিন্তু পরিষ্কার। সারা বাড়ি,বলা ভালো ঝুপড়ি জুড়ে অভাবের ছাপ স্পষ্ট।কিছু জানতে চাওয়া হলে ইতস্তত কন্ঠে তিনি বলেন, আজ থেকে প্রায় ৪৫ বছর আগে আমার স্বামী আব্দুল গনি মারা যায়। তার পর অতি কষ্টে দুই ছেলে এবং এক মেয়েকে বড় করি। লোকের সাহার্যে মেয়ের বিয়ে দিই। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে তার পরিবার নিয়ে দিল্লিতে মজুরের কাজ করে। আর ছোট ছেলে সইদ আলি চপ ঘুগনির দোকান করে কোনরকমে সংসার চালাতো। কিন্তু, গত দেড় বছর থেকে অসুস্থ্ হয়ে পড়ায় দোকান করতে পারে না।
বর্তমানে বাড়িতে বসে আছে। তার আবার তিন মেয়ে এবং এক ছেলে।সকলেই নাবালক। এছাড়া আমার এক স্বামী পরিত্যক্তা নাতনীর দুই নাবালক ছেলে মেয়ে। সব মিলিয়ে বাড়িতে আট জন সদস্য। ছেলে অসুস্থ্য হওয়ায় কামাই নাই। নিজেদের জমিও নাই। পড়শীরা মাঝে মধ্যে সাহার্য করে। খাদ্য সাথী প্রকল্পের চাল পাওয়ায় কোন রকমে বেঁচে আছি।অনেক চেষ্টা করেও বার্ধক্য ভাতা প্রকল্পে নাম তুলতে পারি নি। ছেলে টাকার অভাবে ওষুধ কিনতে না পারায় দিনদিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।বয়স হলেও আমি তো মা।ছেলের এই অবস্থা দেখে খুব কষ্ট হয়। আমাদের ভাতই ঠিক মতো জোটে না তো ওষুধ! পুরানো টিনের ঝুপড়িতে থাকি।ঝড় বৃষ্টিতে ঘরে জল পড়ে।ঝড় এলে খুব ভয় হয়,এই বুঝি টিন উড়ে গেল।সরকারি কোন সাহার্যও পাই না।শুধু পাওয়ার মধ্যে বৌমার লক্ষ্মী ভান্ডারের ৫০০ টাকা।বাইরে কাজ করা স্বামীহারা নাতনীর পাঠানো এক হাজার এবং বৌমার লক্ষ্মীভান্ডারের ৫০০ টাকা ও খাদ্য সাথীর চাল দিয়ে খেয়ে আবার কোনদিন আধপেটা খেয়ে দিন চলছে। এই বুড়ো বয়সে এত কষ্ট সহ্য হয় না।ছেলেটা চপ ঘুগনীর দোকানটা চালাতে পারলে এত অভাব থাকতো না।ছেলের এক পা প্রায় অবশ হয়ে যাওয়ায় ঠিক মতো হাঁটতে পারে না।অন্য দিকে কোমড়ে অস্ত্র প্রচারের পর লোহার রড লাগানো থাকায় নীচু হতেও পারে না।সেজন্য প্রায় দেড় বছর থেকে দোকান বন্ধ।প্রচুর টাকা ধার দেনা করে কলকাতায় ছেলের চিকিৎসা হয়েছে। এখন টাকার অভাবে ওষুধ কিনতে পারছে না।আমাদের খুব কষ্ট বাবা। সত্যি কথা বলতে কি,এখন আমরা কোনদিনও পেট ভরে খেতে পাই না।কোন দিন মুড়ি খেয়েও দিন কাটে।এই বয়সে না খেতে পারার যে কি যন্ত্রনা,যে ভুক্তভুগী, একমাত্র সেজনই জানে।স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, সকিনা খালার পরিবারের কষ্ট চোখে দেখা যায় না। অর্থাভাবে একটা পরিবার যে কি নিদারুন দুর্দশায় পড়ে, সকিনা খালার পরিবার তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct