যোগেন্দ্র যাদব: ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে, আমি একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম ‘Never Mind the Pollsters, the Race is Still Open’ (দ্য হিন্দু, মার্চ ১৫, ২০০৪)। যেখানে বলা হয়েছিল: ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’ সম্পর্কে প্রচার হওয়া সত্ত্বেও, নির্বাচনী সংখ্যার প্রতি এক নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পরিস্কার দেখা যাচ্ছে যে বিজেপির পরাজয়ের একটি সম্ভাবনা আছে। সম্প্রতি তিন বিধানসভা নির্বাচনের ফলে চারপাশে বিজেপির হ্যাটট্রিকের হাওয়া প্রচারের পরিপ্রেক্ষিতেও বলা দরকার: দরবারি মিডিয়ারা কিছু মনে করবেন না, দৌড় এখনও বাকি আছে।আমি যে কথা বলছি তা এবার আমাকে স্পষ্ট করতে দিন। এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ের ফলাফল কংগ্রেসের জন্য এবং যারা ২০২৪-এ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার দেখতে চায় তাদের জন্য একটি ধাক্কা। উত্তর ভারতের তিনটি রাজ্যে বিজেপির জয় তেলেঙ্গানায় কংগ্রেসের ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনকে ছাপিয়ে গেছে। জাতীয় নির্বাচনের দৌড়ে বিজেপির জন্য অবশ্যই এটি এক অনুকূল অপটিক্স তৈরি করেছে। কিন্ত চারটি রাজ্যের এই ফলাফলে, নির্বাচনী গণিত আগে যেখানে দাঁড়িয়েছিল, তার কোন পরিবর্তন হয়নি। ২০২৪ এর প্রতিযোগিতার দরজা বিরোধীদের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে এমনটা আমি দেখতে পাচ্ছি না। আমাদের এই দাবিটি ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।আসুন রাজ্য এবং আসনের পরিবর্তে আমরা ভোটের হিসেব করি। পাঁচটি রাজ্যের জন্য দুই দলের ভোট যোগ করি। সমস্ত রাজ্যে প্রাপ্ত ১২.২৯ কোটি ভোটের মধ্যে, বিজেপি ৪.৮২ কোটি ভোট পেয়েছে, যেখানে কংগ্রেসের রয়েছে ৪.৯২ কোটি (যদি আপনি INDIA - র সব দলগুলির ভোট অন্তর্ভুক্ত করেন তাহলে সংখ্যাটা ৫.০৬ কোটি)। মধ্যপ্রদেশ বাদে বিজেপির জয়ের ব্যবধান জনপ্রিয় ভোটের নিরিখে খুবই কম। তেলেঙ্গানায় বিজেপির থেকে কংগ্রেসের লিড, বাকি অংশে তার ঘাটতি মেটাতে যথেষ্ট। সুতরাং, যেভাবে বিজেপির জনপ্রিয়তার কথা ছড়ানো হচ্ছে এবং মিডিয়া হাইপ তোলা হচ্ছে, আসলে বিজেপি সাম্প্রতিক নির্বাচনে জনগনের তেমন ব্যাপক সমর্থন পায়নি।
আসুন আমরা এই ভোটগুলিকে সংসদীয় আসনে রূপান্তর করি। একটি চমক আছে. এই পাঁচটি রাজ্যে লোকসভায় ৮৩টি আসন রয়েছে, যার মধ্যে গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৬৫টি-র মতো এবং কংগ্রেস মাত্র ৬টি আসন পেয়েছিল। এই রাজ্যগুলির নাগরিকরা যদি পরের বছর লোকসভা নির্বাচনে ঠিক একইভাবে ভোট দেয় যেমনটি তারা সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে করেছে, তাহলে লাভবান হবে কংগ্রেস, বিজেপি নয়। এই হ্যাটট্রিকের পরেও, ২০১৯ সালে পুলওয়ামা-পরবর্তী নির্বাচনে বিজেপি যে সমর্থন পেয়েছিল পারফরম্যান্স তার চেয়ে অনেক নীচে থেকে গেছে। আমরা যদি প্রতিটি সংসদীয় আসনের জন্য বিধানসভাভিত্তিক ভোট হিসেব করি, তাহলে মধ্যপ্রদেশে বিজেপি পাচ্ছে ২৪ এবং কংগ্রেস পাচ্ছে ৫ (২০১৯ সালে ছিল ২৮-১), ছত্তিশগড়ে বিজেপি পাচ্ছে ৮ এবং কংগ্রেস ৩ (২০১৯ সালে ছিল ৯-২), রাজস্থানে বিজেপি পাচ্ছে ১৪ এবং কংগ্রেস ১১ (২০১৯ সালে ছিল ২৪-০) এবং তেলেঙ্গানায় বিজেপি পাচ্ছে ০ এবং কংগ্রেস ৯ (২০১৯ সালে ছিল ৪-৩)। সব মিলিয়ে দাঁড়াচ্ছে বিজেপি মোট পাচ্ছে ৪৬টি আসন (১৯ আসন হাতছাড়া) এবং কংগ্রেস পাচ্ছে ২৮টি আসন (২২টি লাভ)। যদি আমরা INDIA জোটের ভোট একত্রিত করি, তাহলে সংখ্যাটি হবে বিজেপি ৩৮টি আসন এবং INDIA জোট ৩৬টি আসন। আমি বলছি না যে সংসদ নির্বাচনে এটাই সম্ভাব্য ফলাফল। কিন্তু এই গাণিতিক হিসেব এই ধারণাকে নস্যাৎ করে দেয় যে ইতিমধ্যেই বিজেপির জয়ে সিলমোহর পড়ে গেছে।আসুন এখন এই সুস্পষ্ট যুক্তিটি বিবেচনা করা যাক যে লোকসভার ফলাফল বিধানসভার রায়ের অনুরূপ নাও হতে পারে। সেটা সত্য, আমরা ২০১৮ সালে বিজেপির পক্ষে এবং ২০০৪ সালে কংগ্রেসের পক্ষে একটি বিপরীতধর্মী অবস্থা দেখেছি। কিন্ত এই যুক্তির সমস্যা হল যে এটি উভয় দলের ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। আগামী কয়েক মাসে বিজেপি যদি তার অবস্থানের উন্নতি করতে পারে, তাহলে কংগ্রেসও তা করতে পারে। আপনি এই পরিস্থিতিগুলির মধ্যে কোনটি বেশি সম্ভাবনাময় তা চয়ন করতে পারেন, তবে সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলাফল আগামী কোনও নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তি নয়। জাতীয় নির্বাচনের আগে বিজেপি তার ভোট প্রাপ্তির উন্নতি ঘটানোর বাধ্যবাধকতার কারণে ২০১৯-এর মত দুই নির্বাচনের মাঝে বালাকোটের ঘটনার স্মৃতি উসকে দেয়।আসুন আমরা এক মুহুর্তের জন্য অনুমান করি যে বিজেপি আগামী কয়েক মাসে আরও উন্নতি করবে এবং লোকসভায় তিনটি হিন্দিভাষী রাজ্যেই গতবারের মত ঝড় তুলে জয়ী হবে। আরও অনুমান করুন যে একই ঘটনা গুজরাট, দিল্লি এবং হরিয়ানার মতো প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতে ঘটবে। তাহলেও কি জাতীয় নির্বাচনের ফয়সালা হয়ে গেল? একদম নয়। কারণ বিজেপি ইতিমধ্যে এই রাজ্যগুলিতে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। উত্তর-পশ্চিমের এই রাজ্যগুলিতে সুইপ করা জরুরি হলেও তা কিন্তু বিজেপির জন্য যথেষ্ট নয়। ২০২৪ সালের জন্য বিরোধী দলের গেম প্ল্যান এই রাজ্যগুলির উপর নির্ভরশীল নয়।এবার বড়ো করে ছবিটা দেখুন, ২০১৯ সালে বিজেপি ৩০৩টি আসন জিতেছিল, সংখ্যাগরিষ্ঠতার সংখ্যার চেয়ে মাত্র ৩০টি আসন বেশি। কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে বিজেপি বাংলায় (যেখানে এখন তার সমর্থন নিন্মমূখী), কর্ণাটকে (যেখানে, বিজেপি-জেডিএস জোট হয়ে লড়া বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল অনুসারে, কংগ্রেস ১০টি আসন পাবে), মহারাষ্ট্রে (যেখানে বিজেপি এমভি এর সম্মুখীন), বিহার (নতুন মহাজোটের বিরুদ্ধে লড়তে হবে) এবং উত্তরপ্রদেশের (যেখানে ২০২২ সালের বিধানসভার ফলাফলের পুনরাবৃত্তি হওয়া মানেও বিজেপি ১০টি আসন হারাতে পারে)। এর সাথে হিমাচলপ্রদেশ, হরিয়ানা, তেলেঙ্গানা এবং আসামে প্রায় নির্দিষ্ট কিন্তু সামান্য ক্ষতি যোগ করুন। বিজেপির এই ক্ষয়ক্ষতির যে কোনও সংখ্যা ধরলেই নিশ্চিতভাবে তা ৩০ ছাড়িয়ে যাবে। প্রশ্ন হল: বিজেপি সম্ভাব্য কোথায় তাদের ২০১৯ সালের সংখ্যায় বাড়তি আসন যোগ করতে পারে এবং এই ঘাটতি পূরণ করতে পারে?আমি বলছি না যে বিজেপির ক্ষতি সামাল দেওয়া বা পূরণ করার কোনও উপায় নেই। আমি কেবল নির্বাচনী গণিতের এই দেওয়াল লিখনের দিকে ইঙ্গিত করে বলছি, আমাদের ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখা গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৪-এর লড়াই শেষ হয়ে যায়নি। এখনও না। যদি না বিরোধী দলগুলো এই মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং খেলা শুরুর আগেই ময়দান ছেড়ে চলে যায়।
অনুবাদ: শুভম সেনগুপ্ত
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct