জিয়াউল হক, চুঁচুড়া, আপনজন: হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভা থেকে মেরে কেটে শখানেক মিটারের দূরত্ব পিপুলপাতি মোড়। পাঁচরাস্তার এই ব্যাস্ততম মোড় শহরে ঢোকার অন্যতম দ্বার। এই মোড়েই হাসপাতাল রোডের ডানপাশে গড়ে উঠেছে ঝাঁ চকচকে আবাসন। কিছু কাজ এখনও বাকি থাকলেও আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কোনওরূপ নিকাশি ব্যবস্থা ছাড়াই সেই আবাসন গজিয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠল। যা নিয়ে রীতিমতো বিতর্ক শুরু হয়েছে শহরের রাজনীতিতে। নিয়ম বলছে, নিকাশি ছাড়া কোনও বাড়ি কিংবা আবাসনের অনুমোদন মেলার কথা নয়। বিরোধীরা সেই প্রশ্নই তুলছে। পুর প্রধান অমিত রায় জানান, আগের তৃণমূল বোর্ড ওই অনুমোদন দিয়েছিল। তাঁর দাবি, নিকাশি নিশ্চয়ই দেখানো হয়েছিল। না হলে অনুমোদন মিলত না। তবে, এলাকার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার কিন্তু বলছেন, “বিষয়টি সবে জানলাম। খোঁজ নিচ্ছি। অনিয়ম হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ওই আবাসন তৈরি করছেন শহরের একজন পরিচিত ওষুধ ব্যবসায়ী সুনীত চন্দ। পুরসভা সূত্রে খবর, প্রথমে চারতলার অনুমোদন দেওয়া হলেও পরে আবাসনের পিছন দিকের অংশে আরও একটি তলার অনুমোদন দেওয়া হয়। দিন কয়েক ধরে সেই আবাসনের নিচে রাস্তার পাশে নিকাশি তৈরির কাজ চলছে। রাস্তার উপরেই নির্মাণ সামগ্রী মিশ্রণের কাজ চলায় ব্যস্ত ওই রাস্তায় চরম যানজট হচ্ছে। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পথচারীরাও। নির্মাণ শ্রমিকদের দাবি, আবাসনের কোনও নিকাশি না থাকায় তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ম্যানেজারও জানিয়ে দেন, নিকাশি ছাড়াই আবাসন গড়া হয়েছে। তবে, সাংবাদিক জানতে পেরেই তিনি বলেন, “আমি কিছু জানি না। মালিককে জিজ্ঞাসা করুন।” সুনীত সে ভাবে কথা বলতে না চাইলেও তাঁর দাবি, “পুরসভাকে নিকাশি ব্যবস্থা দেখিয়েই অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল।” কিন্তু কোথায় সেই নিকাশি! তার উত্তর মেলেনি। এলাকাটি ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। সেখানকার তৃণমূলের পুরসদস্য (কাউন্সিলর) ইন্দ্রজিৎ দত্তর অভিযোগ, পুরসভা তাঁকে কিছুই জানায়নি। তাঁর দাবি, এর পিছনে কোনও রহস্য থাকতে পারে। তিনি বলেন, “সোমবার রাত এগারোটা নাগাদ স্থানীয়দের কাছ থেকে বিষয়টি শুনেছি। এরপরেই পুর পারিষদ সদস্য (পূর্ত) সৌমিত্র ঘোষকে বিষয়টি জানাই। সৌমিত্র আমাকে জানায়, সংশ্লিষ্ট দফতরের ভারপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার ঘটনাস্থল খতিয়ে দেখেছেন। তারপরেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।” তাঁর সংযোজন, “যাই হোক, বেআইনি কাজ কিংবা মানুষের সমস্যা হলে আমি আগেও প্রতিবাদ করেছি, এখনও করব।” বিগত পুর ভোটের পরে পূর্ত দফতরের দায়িত্ব পাওয়া সৌমিত্রের দাবি, আগের বোর্ড ওই আবাসন তৈরির অনুমোদন দিয়েছিল। নিশ্চয়ই, নিকাশি ব্যবস্থা দেখেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি তিনি জানান, নতুন করে নিকাশি নালার জন্য আবাসন কর্তৃপক্ষ আবেদন জানানোয় তার অনুমতি দেওয়া হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct