সাদ্দাম হোসেন, শিলিগুড়ি, আপনজন: রাজ্যের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের ব্লক স্তরের অফিস যে ঘুঘুর বাসা তা আরও একবার স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে রাজ্যের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরার পাশাপাশি কতিপয় বিএলআরওদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। মমতা বলেন, দু’একজন বিএলআরও দুষ্টু লোকেদের সাথে মিলে জমি কেনা-বেচায় জড়িয়ে গিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। দুর্নীতিতে জড়ালে কোনওভাবেই ছেড়ে কথা বলা হবে না বলে হুঁশিয়াির দেন। সেই সঙ্গে সরকারি আদিকারিকদের প্রতি সচেতনতা বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজনীতির লোকেরা পাঁচ টাকার দুর্নীতি করলে তাকে দশবার দেখানো হয়। তাই কোনও সরকার অফিসার এবাবে দুর্নীতে জড়িয়ে পড়লে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভরা মঞ্চ থেকে এবার রাজ্যের প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশকে কড়া ভাষায় হঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়দের। কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে এদিন আবারও একশো দিনের কাজেরও আবাস যোজনায় বাংলার বকেয়া নিয়ে কেন্দ্রের মধ্যে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বেলন, ১০০ দিনের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সবেতেই এখন জিএসটি বসিয়েছে। নকুলদানা কিনলেও জিএসটি। এই টাকা কাদের পকেটে যাচ্ছে? বিজেপি সরকারের পকেটে। আমাদের টাকা দিচ্ছে না। উন্নয়নের টাকা দেওয়া বন্ধ করে রেখেছে।মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, কেন্দ্র বাংলার মানুষের সঙ্গে সৎ মায়ের মতো আচরণ করছে। সংখ্যালঘু এবং অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষকে সুবিধাভোগী হিসাবে লক্ষ্য করে বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পের জন্য তারা আমাদের অর্থ দিচ্ছে না। এমনকি গ্রাম বাংলায় রাস্তা নির্মাণের জন্য তারা অর্থও ছাড় করছে না। কেন্দ্র ইতিমধ্যেই বাংলায় ১০৮টি দল পাঠিয়েছে এবং জিএসটি-তে বাংলার অংশীদারিত্ব সহ রাজ্যের বকেয়া পরিশোধে কোনও আগ্রহ দেখায়নি।উল্লেখ্য, বাঙলার বকেযা আদায়ে মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি যাচ্ছেন। সূত্রের খবর, বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার বৈঠকে যোগা দেওয়ার পামাপাশি আগামী ২০ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন মুখ্যমন্ত্রী।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উত্তরবঙ্গে তাঁর চার দিনের সফরে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে এক জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতা বলেন। ‘কোনও অফিসার দুর্নীতিতে জড়ালে আমি ছেড়ে কথা বলব না।’ মঙ্গলবার শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে এভাবেই রাজ্য সরকারি আধিকারিকদের একাংশকে সতর্কতার পাঠ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সাম্প্রতিক সময়ে গরু, কয়লা, নিয়োগ, রেশন-সহ একাধিক দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে রাজ্যের শাসকদলের তাবড় নেতা-মন্ত্রী-বিধায়কদের। ইতিমধ্যেই দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়ে জেল খাটছেন তাঁদের অনেকেই। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডল, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মানিক ভট্টাচার্য, জীবনকৃষ্ণ সাহারা দিনের পর দিন ধরে জেলে রয়েছেন। কয়লা কেলেঙ্কারিতে ইতিমধ্যেই একাধিকবার ইডির সমন পেয়েছেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বারবার ডেকে পাঠিয়ে চোখা চোখা প্রশ্ন করেছে ইডি। শাসকদলের হেভিওয়েট একাধিক নেতা-মন্ত্রী কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার স্ক্যানারে থাকায় ফি দিন তৃণমূলকে তুলোধনা করে সোচ্চার বিরোধীরা। তবে এবার খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন আশঙ্কা নয়া বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। দলের নেতা-মন্ত্রী কিংবা বিধায়ক নন, এবার প্রশাসনের অন্দরেই বিরাট অনিময়ের আঁচ পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার ভরা সভায় সেই আশঙ্কার কথাই নিজে মুখে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু জানানোই নয়, অনিয়ম রুখতে কড়া বার্তাও দিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান।“একটা রাজনৈতিক লোক ৫ টাকা চুরি করলেও ১০ বার টিভিতে দেখানো হয়। কিন্তু কোনও অফিসারও যদি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন আমি কিন্তু ছেড়ে কথা বলব না। দু’একজন বিএলআরও দুষ্টু লোকেদের সাথে মিলে জমি কেনা-বেচায় জড়িয়ে গিয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।”এরই পাশাপাশি এদিন ফের একবার শিলিগুড়ির সভা থেকেও কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে সরব মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “১০০ দিনের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সবেতেই এখন জিএসটি বসিয়েছে। নকুলদানা কিনলেও জিএসটি। এই টাকা কাদের পকেটে যাচ্ছে? বিজেপি সরকারের পকেটে। আমাদের টাকা দিচ্ছে না। উন্নয়নের টাকা দেওয়া বন্ধ করে রেখেছে।”কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে সোচ্চার হতেই ফের একবার দিল্লি যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে বৈঠকের সময় দিয়েছেন। জানা গিয়েছে, আগামী ২০ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকেই রাজ্যের পাওনাগণ্ডা নিয়ে দরবার করবেন তিনি।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct