মাননীয়াসু
সাধারণ বাঙালি হিসেবে, বিদেশ থেকে শিক্ষিত আপনার প্রজ্ঞা ও বাগ্মিতার ফ্যান প্রথম থেকেই। প্রথমবার সংসদ হয়েও লোকসভায় আপনার আগুনে বক্তব্যের সাথে অনেকের মতো আমার একাত্মতাও প্রথম দিন থেকেই। আপনার ঝরঝরে ইংরেজিতে কম সময়ের মধ্যে সোজা আক্রমণ, তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষন আপনাকে করে তুলেছে খাস। সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার মতামত ও এলিট মিডিয়ায় প্রচারের ফলে সরকার পক্ষের চক্ষুশূল আপনি। তথাকথিত হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি এবং আইটি সেলে আপনাকে নিয়ে তুমুল চর্চা গো বলয়েও আপনাকে করেছে জনপ্রিয়। প্রথম কয়েক বছরেই আপনি সারা ভারতের মানুষের কাছে সংসদের বিরোধী বক্তা হিসেবে আপনি প্রথম সারির। পাঞ্জাব থেকে দ্রাবিড়, দক্ষিণের সাথে হিন্দি বলয়েও আপনি সমান জনপ্রিয়। মানুষ যখন মানিয়ে নিচ্ছে সবকিছু তেই,কোনোরকমে নিজে পিঠ বাঁচিয়ে আরামে বেঁচে থাকতেই স্বচ্ছন্দ, ভাঁড় মে যায়ে দেশ, তখন লোকসভায় দাঁড়িয়ে আপনার আগুনে আশা করতাম দেশে নতুন স্ফুলিঙ্গের সূচনা হবে আপনার মত সাংসদদের হাত ধরেই একদিন।
সেই আপনিই .....
আজ আপনি ও বিরোধীরা বলছেন, আপনাকে ডিফেন্ড করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। আপনি তো জানতেনই পাবেন না। এই অমিত ক্ষমতার অধিকারী বিপক্ষের (সরকার ও ধনীতম শিল্পপতি) সাথে লড়াই করতে গেলে ডিফেন্স আপনাকে আঁটাসাটো করতেই হতো, সেখানে “পরিত্যক্ত প্রেমিক” আর “পরিচিত শত্রু” র যুগলবন্দী তে কুকুরের কাস্টডি পেলেও ব্যক্তিগত জীবন নিজের কর্মজীবনের ডিফেন্সের ফালাফালা করে দিল।
মহাশয়া, এরপরেও হয়তো আপনি ভেসে উঠতে পারতেন, কফিনের শেষ পেরেক দিয়ে গেলো আপনার শিল্পপতি বন্ধুর নিজেকে ও ব্যাবসাকে বাঁচাতে আপনাকে বিসর্জন দেওয়ার সওদা। আমরা সকলেই রাজনীতিতে এই বলিদান এর সাথে পরিচিত। নেতারা সহজেই কর্মীকে বলিদান দেয় নিজের স্বার্থের রক্ষার্থে , আপনার শিল্পপতি বন্ধু আজ আপনাকে দিল। আপনি নিজেও হয়তো অন্তর থেকে বিশ্বাস করেন, প্রশ্ন করার জন্য লোকসভার লগইন আইডি পাসওয়ার্ডটা দেশের বাইরে ব্যবহার হওয়া আপনার অবর্তমানে অন্য কারো মাধ্যমে কোন নির্দিষ্ট নিয়ম না থাকলেও এটা ব্যাকরণসম্মত নয়। আপনার সাংসদ তহবিল থেকে প্রশ্ন করার একটা ছেলে রাখাই যেত হয়তো, কিংবা ব্যস্ত সময়ের মধ্যে একটু সময় করে নেওয়া যাতে নিজের সমস্ত কিছু নিজের নখদর্পণে থাকে। হয়তো তখনও আপনি ব্যবসায়ী বন্ধুর প্রশ্নগুলোই নিতেন, তবুও আজ এই দিনটা দেখতে হতো না।
মাননীয়া, আপনার বাড়ির জন্য ডিজাইন করা, কিংবা দামী উপহার দেওয়া বা হোটেল বুকিং করা এগুলোতে দেশের আমজনতার কিছু আসে যায় না আমরা নেতাদের সম্পত্তি দেখতে উপহার পেতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। বাকিদের তুলনায় এগুলো খুবই ছোটখাটো ব্যাপার। আপনাকে পরিষ্কারের কারণ নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার সত্ত্বেও আখেরে সাধারণ মানুষের ক্ষতি হয়ে গেল কারন কারণ তাদের কথা তুলে ধরার একটা জোরালো কন্ঠ স্তব্ধ হয়ে গেল আপাতত ।
তবু আশাবাদী রইলাম যখন আপনি নিজেই বললেন আরও ৩০ বছর বাকি। আশা করব আপনি আরো তীক্ষ্ণ ও ধারালো হয়ে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাংসদ হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে নেবেন। আপনার কন্ঠস্বর সংসদে আরও জাগরিত হবে এই আশা রেখে..
আপনার এক শ্রোতা
তন্ময় সিংহ
শালবনী, পশ্চিম মেদিনীপুর
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct