আপনজন ডেস্ক: ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধি এবং আইন প্রণেতারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আইন তৈরির বিষয়ে প্রাথমিক চুক্তিতে একমত হয়েছেন। বিশ্বে এটিই হবে এমন প্রথম আইন। এই যুগান্তকারী চুক্তির লক্ষ্য হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা। এই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে চ্যাটজিপিটি এবং সরকারের বায়োমেট্রিক নজরদারিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের মতো বিষয়ও।অবশ্য এটাই এই আইনের চূড়ান্ত পরিণতি নয়। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মতে, নতুন চুক্তিটি বিশ্বের প্রথম এআই আইন হিসেবে একটি নজির স্থাপন করেছে। এমন আইন প্রথম বাস্তবে প্রয়োগ করা অঞ্চলও হতে চায় ইইউ।ইইউ কমিশনার থিয়েরি ব্রেটন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন, ‘ঐতিহাসিক! ইইউ প্রথম মহাদেশ হিসেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের জন্য সুস্পষ্ট নিয়ম নির্ধারণ করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইন শুধু একটি নিয়মের সংকলন নয়, বরং এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্টার্টআপ এবং গবেষকদের জন্য বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌড়ে নেতৃত্ব দিতে একটি লঞ্চ প্যাড হিসেবে কাজ করবে।’ ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লেয়েন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইনের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘মানুষ ও ব্যবসার নিরাপত্তা এবং মৌলিক অধিকারের জন্য এটিই বিশ্বব্যাপী প্রথম।’ ইইউ রাষ্ট্রগুলোর একমত হওয়া নিয়ে নিশ্চিতভাবেই উদ্বিগ্ন হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন কম্পানি। এই আইন পাস হলে তা বিশ্বের নানা প্রান্তে এরই মধ্যে এ নিয়ে চিন্তিত অন্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপিত হবে। ২০২১ সালে প্রথম নিয়মের খসড়া তৈরি করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণে বৈশ্বিক মান নির্ধারণ করে ইইউ। সর্বশেষ চুক্তিটি হয়েছে প্রায় ২৪ ঘণ্টার বিতর্ক এবং তারপর আরো প্রায় ১৫ ঘণ্টা আলোচনার পর।
চেহারা শনাক্তকরণ নজরদারির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার ছিল বিতর্কের কেন্দ্রে এবং এ নিয়েই সবচেয়ে জোরালো বিতর্ক হয়েছে। চুক্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে স্বচ্ছতা এবং সুরক্ষা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে এবং তা না করা হলে সাড়ে তিন কোটি ইউরো বা প্রতিষ্ঠানের বৈশ্বিক রাজস্বের ৭ শতাংশ জরিমানার মতো গুরুতর দণ্ডের বিধানও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দ্রুতই এই আইন চূড়ান্ত করার বিষয়ে একমত হয়েছে সদস্য রাষ্ট্রগুলো। ব্রাসেলস আশা করছে, ২০২৫ সালের মধ্যে আইনটি কার্যকর করা হতে পারে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্বেগ ইউরোপের এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে এমন এক সময়ে আলোচনা হচ্ছে, যখন ওপেনএআইয়ের মতো কম্পানিগুলো তাদের নানা প্রকল্পের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে। গুগলের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট বৃহস্পতিবার জেমিনি নামের একটি নতুন এআই মডেল প্রকাশ করেছে। বিশ্বব্যাপী সরকারগুলো নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সুবিধার ভারসাম্য বজায় রাখতে চাইছে। অক্টোবরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এআই নিরাপত্তার মানদণ্ড নির্ধারণে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। আগস্টে চীনও একই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। ইইউর আলোচনায় এ বিষয়টিও উঠে এসেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে অতিরিক্ত নিয়ম এবং বিধি আরোপ করা হলে জার্মানির আলেফ আলফা বা ফ্রান্সের মিস্ট্রাল এআইয়ে মতো ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে। এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে ইইউর বিতর্কেও।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct