রাহুল গান্ধী এখন আর কংগ্রেসের সভাপতি নন, তবে দলটি গান্ধী পরিবারকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস তাদের সরকার হারিয়েছে এবং মধ্যপ্রদেশেও বিজেপির কাছে পরাজিত হয়েছে। মিজোরামে মাত্র একটি আসন পেয়েছে তারা। তবে তেলেঙ্গানায় কেসিআর বিআরএস-এর দলকে পরাজিত করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে তারা। এখন প্রশ্ন উঠছে যে পাঁচটি বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে চারটিতে পরাজয় গান্ধী পরিবারের হার নাকি শুধুমাত্র রাহুল গান্ধীর? লিখেছেন মহম্মদ শাহীদ (বিবিসি সংবাদদাতা)।
আমি কংগ্রেসের সমস্যা বুঝতে পারি। বছরের পর বছর ধরে যে জিনিস ব্যর্থ হয়েছে, সেটাই আবার লঞ্চ করা হয়েছে। প্রতিবারই সেই চেষ্টা অসফল হয়েছে আর এখন তার ফলে যা হচ্ছে, তা হল তাদের প্রতি ভোটারদের ঘৃণাও সপ্তম স্বর্গে পৌঁছেছে,” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সংসদে বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবের সময় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সম্পর্কে এ কথা বলেছিলেন গত ১০ই আগস্ট । আসলে এমনটা বলা হচ্ছে এই কারণে যে, রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস সভাপতি থাকাকালীন ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিশেষ কিছু অর্জন করতে পারেনি দলটি।এ ছাড়া বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনে যেখানে হয় কংগ্রেস সরকারের পতন হয়েছে অথবা বিরোধী দে হিসাবে থাকলেও উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেনি।এই তালিকায় উত্তর ভারতের একাধিক রাজ্য রয়েছে যেখানে কংগ্রেসের কাছ থেকে ভাল ফল আশা করা হয়েছিল। কিন্তু কিন্তু রাহুল গান্ধীর নির্বাচনী প্রচারণার পরেও তা হয়নি।রাহুল গান্ধী এখন আর কংগ্রেসের সভাপতি নন, তবে দলটি গান্ধী পরিবারকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে কংগ্রেস তাদের সরকার হারিয়েছে এবং মধ্যপ্রদেশেও বিজেপির কাছে পরাজিত হয়েছে। মিজোরামে মাত্র একটি আসন পেয়েছে তারা।তবে তেলেঙ্গানায় কেসিআর বিআরএস-এর দলকে পরাজিত করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে তারা।এখন প্রশ্ন উঠছে যে পাঁচটি বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে চারটিতে পরাজয় গান্ধী পরিবারের হার নাকি শুধুমাত্র রাহুল গান্ধীর?রাহুল গান্ধীর জন্য কত বড় পরাজয়?রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং তেলেঙ্গানায় বিজেপির প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সামনে ছিলেন আর রাজ্যগুলির নেতা এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতারা ছিলেন পেছনে।অন্যদিকে কংগ্রেসের প্রচারের ক্ষেত্রে রাজ্য নেতারা কিন্তু সামনে ছিলেন এবং রাহুল গান্ধী পিছনের আসনে ছিলেন। রাজস্থানে নির্বাচনী প্রচার কিছুটা কম হলেও তেলেঙ্গানায় কিন্তু তিনি অনেকটাই প্রচার করেছিলেন।তেলেঙ্গানা ছাড়া অন্যান্য রাজ্যে তাঁর দেওয়া স্লোগান খুব জোর দিয়ে ব্যবহার করা হয়নি। যদি ছত্তিশগড়ের কথাই বলা যায়, তাহলে ভূপেশ বাঘেল সেখানে তাঁর সরকারের অর্জনগুলোকে তুলে ধরেছিলেন। একইভাবে রাজস্থানে নির্বাচনের বিষয়ে অগ্রণী ভুমিকা নিয়েছিলেন অশোক গেহলট।আর মধ্যপ্রদেশের কথা বলতে গেলে, সেখানে নির্বাচনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন কমলনাথ। অন্যদিকে, তেলেঙ্গানার নির্বাচনের দায়িত্ব ছিল রেবন্ত রেড্ডির কাঁধে।একইভাবে দেখা যায়, বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় কংগ্রেসের বিভিন্ন মুখ ছিল। তাই এই পরাজয়ের জন্য কি শুধুমাত্র এককভাবে রাহুল গান্ধীকে দায়ী করা ঠিক?নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাংবাদিকের মতে, কংগ্রেস যদি হেরে যায়, তার মানে মানুষ দলটির নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখছে না এবং নেতৃত্ব মানেই কিন্তু গান্ধী পরিবার।
তিনি সহজ ভাষায় বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, নির্বাচনের সময় রাজ্য ও কেন্দ্রের কংগ্রেস নেতারা সমান ভাবে প্রচার করছিলেন। তাই এটা বাঘেল, গেহলট ও কমলনাথেরও পরাজয়। একই ভাবে, কেন্দ্রীয় স্তরে এটা গান্ধী পরিবার ও রাহুল গান্ধীর পরাজয়।প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক নীরজা চৌধুরি বলছেন, এই বিধানসভা নির্বাচনে রাহুল গান্ধীর মুখ সেভাবে সামনে আনা হয়নি এবং তাঁকে নিয়ে তেমন আকর্ষণও ছিল না।তাঁর কথায়, “সব রাজ্যেই সেখানকার স্থানীয় নেতারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। ছত্তিশগড়ে অনেকেই আমাকে জানিয়েছিলেন, তাঁরা তাদের প্রার্থীর উপর ক্ষুব্ধ কিন্তু বাঘেলের নেতৃত্বের কারণে তারা কংগ্রেসকে ভোট দেবেন। আর ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানের বিষয়ে স্পষ্ট বলেছিলেন যে কংগ্রেস যদি নির্বাচনে জয়ী হয় তবে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন।”“রাজস্থানে মানুষ গেহলটকে নিয়ে কথা বলত, রাহুল গান্ধীকে নিয়ে কখনও কথা বলত না। রাহুল তার বেশিরভাগ নির্বাচনী সমাবেশ তেলেঙ্গানায় করেছিলেন। তাই রাহুল গান্ধী নয়, বরং এটি রাজ্য নেতাদের পরাজয়। কারণ ওই রাজ্যগুলির নির্বাচনের বিষয়ে রাহুল সেভাবে সামনের আসনে ছিলেন না,” মি চৌধুরী বলেন।প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক রশিদ কিদওয়াই, যিনি কংগ্রেসকে খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করেছেন, তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলি এমন একটি আখ্যান তৈরি করে এসেছে যেটা দেখে মনে হয় জয়ীর শিরোপা যেন শুধুমাত্র দলের বড় নেতাদের মাথাতেই পরানো হয়।তিনি বলেন, কংগ্রেস এবারের বিধানসভা নির্বাচন রাজ্যের নেতাদের হাতে ছেড়ে দিয়েছিল এবং রাহুল গান্ধী-প্রিয়াঙ্কা গান্ধী শুধু প্রচার করেছেন, এই কারণে আমি মনে করি এই নির্বাচনটি রাহুল গান্ধীকে ঘিরে ছিল না।‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ র প্রভাব কতটা ছিল?কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী গত বছরের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ ভারতের কন্যাকুমারী থেকে ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা শুরু করেছিলেন। প্রায় চার হাজার কিলোমিটার জোড়া এই ১৩৭ দিনের সফরে তিনি দক্ষিণ থেকে উত্তর ভারত যান।এই সফরটি ছিল তামিলনাড়ু, কেরালা, কর্ণাটক হয়ে তেলেঙ্গানার মধ্য দিয়ে। কংগ্রেস কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনেও জিতেছে এবং এই জয়ের কৃতিত্ব রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রাকেও দেওয়া হয়েছে।তেলেঙ্গানায় কংগ্রেস জিতেছে। তবে ভারত জোড়ো যাত্রা মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানের মধ্য দিয়েও গেছে, সেখানে কিন্তু কংগ্রেসের ফল ভাল হয়নি।‘ভারত জোডো যাত্রা’ কি উত্তর ভারতে কোনও প্রভাব হয়েছে বলে মনে হচ্ছে?এই প্রশ্নের উত্তরে নীরজা চৌধুরী বলেন, ‘’ভারত জোড়ো যাত্রার ফলে রাহুল গান্ধীর ভাবমূর্তি পাল্টে গেছে এবং মানুষ তাঁকে গুরুত্বসহকারে দেখে এবং বিশ্বাস করে যে তিনি সৎ। কিন্তু তাঁকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো বলে মনে করেন না।’’মি চৌধুরীর কথায়, ‘’যদি তরুণ প্রজন্মদের জিজ্ঞেস করা হয় যে রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য নরেন্দ্র মোদীকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন কিনা, তাহলে দেখা যাবে তাঁরা সেই প্রশ্ন শুনে হাসছেন। তাঁরা (নবীন প্রজন্ম) ভারত জোড়ো যাত্রার প্রশংসা করলেও রাহুলকে কিন্তু যোগ্য নেতা হিসাবে দেখেন না।’’এর পাশাপাশি নীরজা চৌধুরী বলছেন, ভারত জোড়ো যাত্রার সাফল্যকেও দলের পক্ষ থেকে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে, কর্ণাটক ও তেলেঙ্গানায় স্থানীয় নেতাদের কারণেই কংগ্রেস জিতেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct