আপনজন ডেস্ক: নিজের পরিচয়পত্র অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করা এবং এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে উপহার গ্রহণের অভিযোগে শুক্রবার তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে বহিষ্কার করল লোকসভা। মৈত্রকে কথা বলতে না দেওয়া নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্কের পরে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী “অনৈতিক আচরণের” জন্য তৃণমূল সদস্যকে বহিষ্কারের প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন, যা কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়েছিল। লোকসভার স্পিকার জোশীর উত্থাপিত প্রস্তাবের উপর ভোটদান প্রক্রিয়া শুরু করার সাথে সাথে সোনিয়া গান্ধি সহ ইন্ডিয়া জোটের সংসদ সদস্যরা হাউস থেকে ওয়াকআউট করেন।এদিন সাংসদ এবং লোকসভায় তৃণমূল সংসদীয় দলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অনুরোধ করেন, তাদের দলের সাংসদ মহুয়া মৈত্র, যার বিরুদ্ধে নৈতিকতা কমিটি রায় দিয়েছে, তাকে কথা বলার এবং নিজেকে রক্ষা করার অনুমতি দেওয়া হোক। কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেন, এথিক্স প্যানেলের রিপোর্ট দেখার জন্য আমাদের ৩-৪ দিন সময় দিন। কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি প্রশ্ন তোলেন, এথিক্স প্যানেল কি প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের নীতিকে অগ্রাহ্য করতে পারে? যদিও মহুয়া মৈত্র নিয়ে এথিক্স প্যানেলের রিপোর্ট নিয়ে আলোচনার জন্য মাত্র ৩০ মিনিট সময় দেন স্পিকার। স্পিকার ওম বিড়লা বলেন, যদি কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে কিছু কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয় তবে তা সংসদের মর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্য নিতে হবে। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে এথিক্স প্যানেলের রিপোর্টের সুপারিশ গ্রহণের প্রস্তাব পেশ করে সরকার। হট্টগোলের জেরে দুপুর ২টা পর্যন্ত মুলতবি লোকসভা। তবে, ‘ক্যাশ ফর কোয়েরি’ অভিযোগে মহুয়া মৈত্রকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে লোকসভার এথিক্স কমিটি।মহুয়া মৈত্র বিজেপিকে বললেন, ‘আগামী ৩০ বছর সংসদের ভিতরে ও বাইরে আপনাদের বিরুদ্ধে লড়বেন তিনি।লোকসভা থেকে বহিষ্কারের কয়েক মিনিটের মধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্র সংসদের বাইরে সাংবাদিকদের কাছে বিজেপিকে প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের “যথাযথ প্রক্রিয়া উপেক্ষা” করার জন্য এবং “আইনের প্রতিটি নীতির অপব্যবহার” করার জন্য সমালোচনা করেন। সপ্তদশ লোকসভার মেয়াদে শেষবারের মতো নতুন সংসদ ভবনের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ছিলেন কংগ্রেস নেতা সোনিয়া গান্ধি ও রাহুল গান্ধিসহ বিরোধী ভারতীয় শিবিরের নেতারা।লোকসভায় আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার পর বহিষ্কৃত সংসদ সদস্য সাংবাদিকদের কাছে বলেন, কোথাও কোনো নগদ টাকা বা কোনো উপহারের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বহিষ্কারের সুপারিশটি কেবল মাত্র এই ভিত্তিতে যে আমি আমার লোকসভা পোর্টাললগইন শেয়ার করেছি তার উপর ভিত্তি করে। লগইন ভাগ করে নেওয়ার জন্য কোনও নিয়ম নেই। এথিক্স কমিটির শুনানিতে দেখা যায়, আমরা সবাই জনসাধারণের কাছ থেকে, নাগরিকদের কাছ থেকে প্রশ্ন পেতে এবং সংসদে তা বলার জন্য কনভেয়ার বেল্ট।গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, মোদী সরকার যদি মনে করে যে আমাকে চুপ করিয়ে দিয়ে তারা আদানি ইস্যুর অবসান ঘটাতে চলেছে, তাহলে আমি আপনাদের বলতে চাই যে এই ক্যাঙ্গারু আদালত সমগ্র ভারতকে দেখিয়ে দিয়েছে যে আপনি যে তাড়াহুড়ো এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার অপব্যবহার করেছেন তা প্রমাণ করে মিঃ আদানি আপনার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি একজন মহিলা সাংসদকে আত্মসমর্পণে বাধা দেওয়ার জন্য কতদূর যেতে পারেন।মহুয়অ আরও বলেন, আগামীকাল সিবিআই আমার বাড়িতে পাঠানো হবে, আমি নিশ্চিত। আগামী ছয় মাস তারা আমাকে হয়রানি করবে। কিন্তু আমি জানতে চাই আদানির ১৩,০০০ কোটি টাকার কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে কী হবে, যা সিবিআই এবং ইডি দেখার জায়গা পায়নি।আপনি আমাকে বলুন যে আমি একটি পোর্টাল লগইন দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তার সাথে আপস করেছি? মিঃ আদানি আমাদের সমস্ত বন্দর, আমাদের সমস্ত বিমানবন্দর কিনছেন এবং তাঁর শেয়ারহোল্ডাররা বিদেশী পেশাদার বিনিয়োগকারী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তাদের আমাদের সমস্ত অবকাঠামো কেনার ছাড়পত্র দিচ্ছে।
মহুয়অ অভিযোগ করেন, বিজেপির ৩০৩ জন সাংসদ রয়েছেন এবং একজন মুসলিমকে সংসদে পাঠাননি। ২০ কোটি মুসলমানের দেশে মাত্র ২৬ জন মুসলিম সাংসদের একজন দানিশ আলিকে বলেন সংসদে দাঁড়িয়ে বিজেপি সাংসদ রমেশ বিধুড়ি বলেছিলেন, ইয়ে ভাড়োয়া, ইয়ে কাটোয়া। কিন্তু এখনও তার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।আপনি (বিজেপি) সংখ্যালঘুদের ঘৃণা করেন, আপনি মহিলাদের ঘৃণা করেন, আপনি নারী শক্তিকে ঘৃণা করেন এবং ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব (তাদের) পরিচালনা করতে পারেন না।মহুয়া আরও বলেন, আমার বয়স এখন ৪৯ বছর। আমি আগামী ৩০ বছর সংসদের ভিতরে ও বাইরে, নর্দমায়, রাস্তায় আপনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব।সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার লাইন ‘আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই স্বজনহারানো শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবই” বলে মহুয়া জানিয়ে দেন, আমরা আপনাদের শেষ দেখতে পাব।এখানেই থেমে থাকেননি মহুয়া। দাপুটে এই তৃণমূল সাংসদ বলেন, পাঞ্জাব, সিন্ধু, গুজরাট, মারাঠা, দ্রাবিড়, উৎকল, বঙ্গ... আপনাদের পাঞ্জাব নেই, সিন্ধু আমাদের নয়। দ্রাবিড়, উৎকল এবং বঙ্গ তোমার নয়। আপনি কোথায় আমাদের শাসন করবেন বলে মনে করেন? আপনি কোথা থেকে এই নিষ্ঠুর সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছেন বলে আপনি মনে করেন?বহিষ্কারের ক্ষমতা নৈতিকতা কমিটির নেই। আপনি একটি আধা-বিচারিক কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন এবং আমার উপর একটি জরিমানা আরোপ করেছেন যা আপনার করার ক্ষমতা নেই। আপনি যথাযথ প্রক্রিয়া, আনুপাতিকতা উপেক্ষা করেছেন এবং প্রতিটি নীতির অপব্যবহার করেছেন। এরপর মহুয়া শায়েরি আওড়ান, ‘জব নাশ মানুষ পার ছতা হ্যায়, তাব পেহল বিবেক মার জাতা হ্যায়।’ উল্লেখ্য, গত অক্টোবরে ঝাড়খন্ডের বিজেপির সাংসদ নিশিকান্ত দুবে মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, শিল্পপতি হিরানন্দানির কাছ থেকে নানাবিধ ‘সুবিধা’ নিয়ে তাঁর ব্যবসায়িক স্বার্থে মহুয়া প্রশ্নই শুধু করেননি, ই-মেইলের লগইন পাসওয়ার্ড পর্যন্ত ওই ব্যবসায়ীকে দিয়েছিলেন, যাতে তিনি সরাসরি প্রশ্ন পাঠাতে পারেন যেটা ‘দেশের নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক’। এরপর বিষয়টি লোকসভার এথিক্স কমিটির কাছে যায়। এথিক্স কমিটি যে রিপোর্ট দেয় তার ভিত্তিতে মহুয়াকে বহিষ্কার করা হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct