অন্তরালে
শংকর সাহা
বইয়ের সেল্ফ থেকে ম্যাগাজিনটি হাতে নিয়ে পড়তে বসে নবনীতা। অবসরে সময়ে সংসারের সমস্ত কাজ সামলে এই বই পড়াটাই আজ যেন অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে তার। মনের কোণে আজও স্বপ্নগুলোকে যে বেঁচিয়ে রাখতে চেয়েছে সে। বাবার সাথে হারমোনিয়ামে গান শেখা, আবৃত্তি পাঠ আজ বিয়ের আগের সেইসব কথা মনে পড়লে যেন চোখে জল চলে আসে তার। ম্যাগাজিনটি উল্টোতে উল্টোতে তার নজরে আসে একটি গল্প ‘ বিন্নি ধানের খই’ গল্পটি উৎসুকভাবে পড়তে থাকে নবনীতা। পড়তে পড়তে গায়ে শিহরণ দিয়ে উঠে তার। এ যে শুধু গল্প না মনে হচ্ছে তারই এক জীবন্তদর্পণ। লেখক কত সুন্দর ভাবে লিখেছেন একটি মেয়ের জীবনের না বলা কথাগুলো। গল্পটি পড়ার পর থেকে নবনীতার মনে একটি ভাবনা আসে এমন ভাবনা শুধু যে সৌম্যই জানতো। এই পৃথিবীতে বাবার পরে যদি কেউ থাকে তবে সৌম্যই সবসময় তার পাশে থেকেছিল। তাকে নূতন করে স্বপ্ন দেখানো, গানকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে শেখা এ যেন সৌম্যই শিখিয়েছিল তাকে।সেই যে অভিমান করে কোথায় যে চলে গেছে আজ নতুন করে আবার তাকে মনে পড়ছে তার সেইদিন যে তার করার কিছুই ছিলনা। শুধুমাত্র বাড়িতে বাবার কথা রাখতেই এতোবড়ো সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল তাকে। অভিমানের শব্দগুলো যে কতটা কষ্ট দেয় আজ নবনীতার প্রতিটি মুহুর্ত সৌম্যর কথা মনে হতে থাকে।বইটি হাতে নিয়ে লেখক পরিচিতিতে নবনীতার চোখে আসে শুধুই লেখা’ পুনশ্চ ‘। কলম প্রকাশনী।পরের দিন ছেলে ঋষিকে স্কুলের গাড়িতে উঠে দিয়ে কলেজ স্ট্রীটের সেই দোকানটিতে যায় সে। কলম প্রকাশনীর কাছে গিয়ে নবনীতা জানতে চায় গল্পটির আসল লেখক কে? প্রকাশক প্রথমে নামটি বলতে চাননি। পরে নবনীতার অনুরোধে জানান এই বইটির লেখক ড: সৌম্যনীল সাহা। নবনীতার বুঝতে দেরি হয়না ড: সৌম্যনীল আর কেউ নন এ যেন তার সৌম্য। আজ সৌম্যের লেখা আমার পড়ছে গোটা দেশ। প্রকাশককে অনুরোধ করে কোনোভাবে সৌম্যর নম্বর আর বাড়ির ঠিকানটি জানতে পারে সে।পরের দিন ছেলে স্কুলে গেলে হাতে মোবাইলটি নিয়ে সেই নম্বরটি ডায়াল করে। দুইবার ফোনটি বেজে গেলেও কেউ ধরেনা। অবশেষে ফোনের উপার থেকে একটি কন্ঠ ভেসে আসে, ‘হ্যালো, এটি কি সৌম্যনীল সাহার নম্বর। ওনি বাড়ি আছেন? ‘‘আপনি কে বলছেন ‘নবনীতা মৃদু গলায় বলে উঠেন, ‘আমি ওনার একজন পাঠিকা বলছি। ওনাকে ফোনটি দেওয়া যাবে? ‘‘সরি, আসলে বাবুকে ডাক্তার বাবু কথা বলতে বারণ করেছেন। ওনি খুব অসুস্থ। বাবু সুস্থ হলো আপনি না হও কথা বলবেন। ‘‘কি হয়েছে ওনার.. ‘ ওপার থেকে ফোনটি কেটে দেয়।নবনীতা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। দুচোখ বেয়ে জল গড়িয়ে আসে। আজ সৌম্যের এমন অবস্থার জন্যে সে যে দায়ী। সেদিন যদি বাড়ির সবার কথা বা শুনতো তবে আজ....জানালার পাশ দিয়ে বাইরের আকাশটাকে উদাসীন ভাবে দেখতে থাকে সে। আজ যে বাঁধভাঙা কান্নায় নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না সে.
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct