সজিবুল ইসলাম, ডোমকল, আপনজন: নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে এবার মুর্শিদাবাদের ডোমকলে পৌঁছাল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল সিবিআই । বৃহস্পতিবার সকাল প্রায় নটা নাগাদ ডোমকলের বিধায়ক তথা ডোমকল পুরসভার প্রশাসক জাফিকুল ইসলামের বাড়ি, এডুকেশনাল হাবে তল্লাশি চালানো হয়। সিবিআই সূত্রের খবর বিধায়কের বাড়ি থেকে নগদ প্রায় চব্বিশ লক্ষ টাকা , সোনা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার হয়েছে। জাফিকুলের স্ত্রী বীণা সরকারের ঘরে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু সোনার গয়নার হদিস মিলেছে। এ বিষয়ে বীণা সরকারের দাবি, কলেজের অধ্যক্ষা হিসেবে তিনি যে বেতন পান, সেখান থেকেই এই সোনা কেনা।যদিও বিধায়ক জাফিকুল ইসলামের দাবি প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণেই তাকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জড়ানো হয়েছে। আর যেই টাকা উদ্ধার হয়েছে সেটা জমি বিক্রির টাকা ওখানে রাখা ছিল। এদিন আট’টা পঁয়তাল্লিশ নাগাদ তিনটি গাড়িতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের নিয়ে ডোমকলের ১৪ নং ওয়ার্ডের গোবিন্দপুরে বিধায়কের বাড়িতে হাজির হয় সিবিআই। যদিও সেই সময় বাড়িতে অনুপস্থিত ছিলেন বিধায়ক, বিধানসভার অধিবেশন চলার কারণে তিনি বিধানসভায় আছেন বলে সূত্রে জানা যায়। তদন্তকারীরা বাড়িতে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দেয়। পাশপাশি বাইরে টহল দিতে থাকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরাও। তার কিছুক্ষন পরেই ওই টিমের কয়েকজন আধিকারিক বেরিয়ে পাশের একটি পিটিটিআই কলেজে হানা দেয়। এরপর সেখান থেকে সিবিআই আধিকারিকরা জাফিকুল ইসলামের গোবিন্দপুরের এডুকেশনাল হাবের আরও একটি পিটিটিআই কলেজে হানা দেয়। তল্লাশির মাঝে কয়েকজন আধিকারিক বেশ কয়েকবার বিধায়কের বাড়ি থেকে কলেজ, কলেজ থেকে বাড়িতে যাওয়া আসা করে। সিবিআই হানা দেওয়ার পরেই বিধায়ক অনুগামীরা তার বাড়ির সামনে ভিড় করতে শুরু করে। অনুগামীরা দাবি তোলে তাদের বিধায়ককে ইচ্ছাকৃতভাবে ফাঁসানো হচ্ছে। যদিও তাদের সরিয়ে দেয় পুলিস। তদন্ত চলাকালীন একাধিকবার ডোমকলের আইসিকে ভেতরে যেতে দেখা যায়। এদিন দুপুর আড়াইটা নাগাদ ডোমকলের একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে জাফিকুলের বাড়িতে টাকা গোনার মেশিন নিয়ে আসে সিবিআই আধিকারিকরা। প্রায় ঘন্টাখানেক পর সেখান থেকে মেশিনটিকে ফের ব্যাংকে পাঠানো হয়। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে , তদন্ত চলাকালীন বিধায়কের বাড়িতে নগদ টাকার হদিস পেয়েছিল তারা। আর সেই টাকার অঙ্ক অনেক বেশি হওয়ায় বাধ্য হয়ে ওই মেশিন নিয়ে আনা হয় ব্যাংক থেকে। এরপর ফের তল্লাশি চালাতে শুরু করে সিবিআই। সন্ধ্যা আটটা পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েও তদন্ত শেষ করতে পারেনি সিবিআই।
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, রাজনীতিতে পা দেওয়ার অনেক আগে থেকেই জাফিকুল দশটির অধিক এডুকেশনাল কলেজের মালিক ছিলেন। বছর সাতেক আগে ডোমকল পৌরসভা হওয়ার সময়েই রাজনীতিতে আসেন তিনি। পুরসভার প্রথম নির্বাচনে নিজের এলাকা থেকেই তৃণমূলের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ২০১৯ সালের দিকে সৌমিক হোসেনের পুরসভার চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত জাফিকুল পুরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকেন । চেয়ারম্যান থাকাকালীন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে ডোমকলের বিধায়ক হন জাফিকুল ইসলাম। এরপর থেকেই বিধায়ক ও পুরসভার প্রশাসক দুটি পদ একই সঙ্গে সামলাচ্ছেন জাফিকুল ইসলাম। পাশাপাশি রাজনীতিতে পা দিলেও এডুকেশনাল কলেজের ব্যবসাতে একই সঙ্গে সক্রিয় রয়েছেন তিনি। ডোমকলের পাশপাশি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গাতেও তার নামে কলেজ রয়েছে। সেই সব কলেজগুলির অন্যতম হল, সৈয়দ মেমোরিয়াল পি টি টি আই, গোবিন্দপুর একাডেমিক পিটিটিআই, ড. আম্মেদকর প্রাইমার টিচার ইনস্টিটিউট, গোবিন্দপুর পলেটেকনিক কলেজ, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ কলেজ ও এডুকেশন, অঅরজেটিজিএ ডিপ্লোমা ও ফার্মেসি কলেজ।, ডোমকল বি এড কলেজ। তবে, সিবিআই হানা দেওয়ায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।যদিও বিধায়ক জাফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিহিংসায় রাজনীতির কারণেই আমার নামে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হচ্ছে।আমি নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে কোনও ভাবে জড়িত নয়। আর সিবিআই এর তরফে যে টাকা পাওয়ার দাবি তোলা হচ্ছে সেই টাকা আমি জমি বিক্রি করে বাড়িতে রেখেছিলাম। আমাদের তরফ থেকে সমস্ত নথি দেখানো হয়েছে সেইসবের। পাশপাশি তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করছি আমরা।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct