আপনজন ডেস্ক: বাংলার বকেয়া আদায়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বারে বারে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাকে ঢাল করে আন্দোলনের মাত্রা চড়িয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজভবনে ধর্না থেকে শুরু করে দিল্লি অভিযান সর্বত্রই আটকে থাকা একশো দিনের কাজের মজুরির দাবিতে আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করেছেন অভিষেক। যদিও তা কেন্দ্রে মন গলেনি। এমনকী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের সঙ্গে এ বিষয় দেখা করতে গেলেও তিনি দেখা করেননি। সব মিলিয়ে বঞ্চনাই অব্যাহত। তাই কেন্দ্রের ‘বঞ্চনা’র গন্ধ পেয়ে অক্টোবরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, দু বছর ধরে কেন্দ্রীর সরকারের দিকে তাকিয়ে আছি কখন তারা বাংলার বকেয়া দেবে। একশো দিনের কাজে শ্রমিকদের টাকা কেন্দ্র দু মাসের মধ্যে না মেটালে তিনি নিজ উদ্যোগে সেই টাকা মেটাবেন। দলের তরফ থেকে বিধায়ক ও সাংসদরা এক মাসের বেতনের টাকা দিয়ে ধাপে ধাপে বকেয়া মেটাব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অবশেষে লোকসভা ভোটের আগে সেই প্রতিশ্রতি রক্ষায় একশো দিনের কাজের শ্রমিকদের মজুরির টাকা মেটানো শুরু করে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অষিভেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার থেকেই একেশা দিনের কাজের শ্রমিকদের মজুরি দিতে শুরু করলেন অভিষেক। কেন্দ্রের কাছ থেকে যারা একেশা দিনের কাজের মজুরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের বাড়িতে এই মর্মে চিঠি পাঠানোও শুরু হয়ে গেছে। উল্লেখ্য, দিল্লিতে ধর্নার সময় অভিষেকের সঙ্গে বাংলা থেকে প্রায় তিন হাজার বঞ্চিত গিয়েছিলেন। তাদেরকেই বাড়ি বাড়ি চিঠি দিয়ে বকেয়া মেটানোর কথা জানানো হচ্ছে।
এর আগে অভিষেক হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, বকেয়ার দাবিতে ফের দিল্লিতে গিয়ে আন্দোলন করা হবে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছিল শুধু ১০০ দিনের কাজ নয়, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, গ্রামসড়ক যোজনা প্রভৃতি কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কেন্দ্রীয় সরকার আটকে রাখায় তার বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন শুরু হবে। সেই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে গত ২৩ নভেম্বর তৃণমূলের এক সম্মেলন থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, বকেয়ার দাবিতে তৃণমূল। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সময় চাওয়া হবে। সময় দিলে ভাল, না হলে রাস্তাতেই আন্দোলন হবে। আর সেই দিল্লি অভিযানে মমতা নিজেই শামিল থাকবেন বলে জানিয়েছিলেন। ইঙ্গিত ছিল লোকসভা ভোটের আগে বাঙলায় কোনওভাবে বিজেপিকে স্থান না দেওয়া। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়েনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু করে দিলেন একশো দিনের কাজের শ্রমিকদের বকেয়া টাকা মেটানো। অভিষেক শ্রমিকদের বকেয়া মেটানোর খবর দিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে যে চিঠি লিখেছেন, তাতেও কেন্দ্রের বঞ্চনার কথা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এমনকি তিনি রাজভবনের সামেন ধর্না কিংবা দিল্লিতে গিযে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর তরফে প্রত্যাখ্যানের বিষয়টিও তুলে ধরেছেন। এ বিষয়ে অভিষেক চিঠিতে হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের এক একমো দিনের কাজের শ্রমিকের পাওনা মেটানো নিয়ে চিঠিতে ‘প্রিয় সাথী’ সম্বোধন করে লিখেছেন,’ আপনারা জানেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকার রাজ্যকে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে। বিভিন্ন খাতে প্রায় ১৫০,০০০ কোটি টাকার বেশি বকেয়া। এর মধ্যে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের প্রাপ্য টাকাও রয়েছে। একশো দিনের কাজ করিয়েও সেই টাকা বিজেপি নেতাদের কথায় প্রতিহিংসাপরায়ণ ভাবে আটকে রেখেছে। বাংলা জুড়ে নবজোয়ার যাত্রাতেও আমরা এই বকেয়া আদায়ের দাবিতে ঝড় তুলেছি। এরপর আমরা দিল্লিতে রাজঘাটে ধরনা দিয়েছিলাম। পঞ্চায়েতও গ্রামোন্নয়ন দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের সময় দিয়েও দেখা করেননি। উল্টে আমাকে এবং সহযোদ্ধা সাংসদদের তাঁর দফতরের মধ্যেই পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে নিগ্রহ করে গ্রেফতার করা হয়।এরপর আমরা রাজভবনের সামনে ধরনা শুরু করি। সারা বাংলার মানুষ তাতে সাড়া দেন। এই আন্দোলন চলছে এবং চলবে। বন্ধু, ৩ অক্টোবর জমি ঘোষণা করেছিলাম যে সকল জব কার্ড হোল্ডার আমাদের সঙ্গে দিল্লি গিয়েছেন, এমনকি কেন্দ্র রেল বাতিল করলেও কষ্ট করে নারী-পুরুষ সবাই বাসেও গিয়েছেন, তাঁদের যদি কেন্দ্র টাকা না মেটায়, আমি আমার তরফ থেকেই তাঁদের প্রাপ্যের টাকা নিয়ে পাশে দাঁড়াবে । বন্ধু, সেই সূত্রেই আজকের এই চিঠি। প্রতিশ্রুতিমতো আর্থিক সাহায্য পাঠালাম। সপরিবারে ভালো থাকুন। লড়াইয়ে থাকুন। মা মাটি মানুষের আন্দোলনে থাকুন। বকেয়া আদায়ের এই অধিকারের লড়াই চলাতে থাকবে। জনবিরোধী, বাংলা বিরোধী কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এই লড়াই আমরা জিতবই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct