এক চিলতে রোদ্দুর
শংকর সাহা
কোর্টের জর্জসাহের বিদিতার দিকে চেয়ে বলন, ‘আপনি এতোদিন চুপ করে ছিলেন কেন? এখন সমাজ অনেক বদলে গেছে। আইন তো এখন মেয়েদের ন্যায়ের পক্ষে। ‘বিদিতা তখনও চুপ করে থাকে। জর্জ সাহেব বুঝতে পারেন বিদিতার নীরবতা। উকিল মারফত বিদিতার সব কথা শোনেন জর্জ সাহেব। যে মেয়েটি শুধুমাত্র সবার সুখের কথা ভেবে এতদিন নিজের জগত বলে কিছু ভাবেনি, অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে গিয়ে তিল তিল করে গড়ে তুলেছে এ সংসার কিন্তু বিনিময়ে পেয়েছে শুধুই গ্লানি আর অপবাদ।মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে বলে সবসময় উঠতে বসতে কথা শোনাতো রজতাভ। নিজের পছন্দে বিয়ে করলেও আজ যেন রজতাভ শুধুই প্রয়োজনে বিদিতাকে ব্যবহার করেছে। মেয়েকে মানুষ করা থেকে শুরু করে এক হাতে সব কাজ গুলো করতে গিয়ে কোথাও হলে নিজের স্বপ্ন গুলোকে যেন হারিয়ে ফেলে বিদিতা। সেবার পুজোতে বাবার বাড়িতে আসতে চেয়েছিলো বলে কত কথাই না শুনতে হয়েছিল বিদিতাকে। কিছু সত্যিকে আড়াল করতে গিয়ে ফোনে বাবাকে যেন মিথ্যে কিছু বলতে হয়েছিল তাকে সেদিন। বিদিতা সব সময় চেষ্টা করেছিল রজতাভকে যেন বাবার বাড়ি কেউ খারাপ না ভাবে তাই শত কষ্টের পরেও মুখ বুঝে সহ্য করেছিল সবকিছু।এদিকে দিনে দিনে রজতাভ-র ব্যবহার আরও খারাপ হতে থাকে।সেদিন পাশের বাড়ির রঞ্জাকাকিমা বিদিতাকে ডেকে বলেন, ‘ বৌমা, প্রায় দিন রাতে রজতাভ-র চিৎকার শোনা যায়। ও কি এখনো ভালো হয়নি। তুমি হাসিমুখে আর কতদিন নিজের কষ্টগুলোকে লুকিয়ে রাখবে। এবার নিজের জন্যে একটু ভাবো বউমা। ‘ সেদিন রঞ্জাকাকিমার কথাগুলো যেন বিদিতাকে স্পর্শ করেছে। সেই ছোটো বয়সে বিয়ে হসে এসে কুড়ি বছর এমন করেই তো কাটিয়ে দিয়েছে সে। বাবার দেওয়া পাঁচলাখ টাকার চেকটিও রজতাভ-র হাতে তুলে দিয়েছিল শুধুই সংসারে শান্তিটুকু যেন বেঁচে থাকে কিন্তু বিদিতার শত চেষ্টার পরেও রজতাভ-র মধ্যে কোনো পরিবর্তনই নেই।এজলাসে দাঁড়িয়ে আজ যেন বিদিতার সবকিছু আবার নূতন করে মনে পড়ে। বাবা-মায়ের কতই না আদরের ছিল সে। নিজের পছন্দ করে বিয়ে করার পরেও বাবা-মা মেনে নিয়েছিল শুধুই মেয়ের সুখের কথা ভেবে কিন্তু বিদিতার যে কপালে সুখটুকু লেখা নেই! জর্জ সাহেব রজতাভ-র দিকে তাকিয়ে খানিকটি বিরক্তির সুরে বলেন,’ আপনি কি ভাবছেন এখনো পুরুষতান্ত্রিক অধিকার বজায় রেখে যাবেন সংসারে। সংসারে সুখটুকু কিন্তু শুধুই আপনার হাতের খেলনা না। স্ত্রীর আধিকার ও স্বপ্নগুলোর কথা ভেবেছেন কখনো? ‘ রজতাভ লজ্জায় মাথা নিঁচু করে থাকে। এদিকে উকিলের সাথে কোর্ট থেকে বেরিয়ে আসে বিদিতা।এদিকে বসন্তকাল পড়ে গেছে। প্রকৃতির রুক্ষতা যেন ধরা পড়েছে চারিদিকে। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের আকাশটাকে আজ উদাসীন ভাবে দেখতে থাকে বিদিতা। চোখ দিয়ে তার জল গড়িয়ে পড়ে।সবার জন্যে সুখটুকু খুঁজতে গিয়ে নিজের স্বপ্নগুলোকে কোথায় যেন হারিয়ে ফেলেছে সে..
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct