দেশ-বিভাগ পরবর্তী পশ্চিমবাংলার একটি শক্তিধর পরিবার থেকে উত্থিত খাজিম আহমেদ প্রায় ছয় দশক ধরে নিরলস বৌদ্ধিক চর্চা আর সাহিত্য নির্মাণে সম্পৃক্ত হয়ে রয়েছেন। তাঁর ‘চেকার্ড’, আর ‘মাভেরিক’ জীবনের বর্ণময় পরিচয় বর্তমান আলোচনাটির মারফত উত্থাপন করা হচ্ছে। অনেকেই তাঁকে এই বঙ্গের বাঙালি মুসলমানদের মর্যাদার অন্বেষক হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। তাঁর অগণন রচনার অনিঃশেষ গ্রহণযোগ্যতা উভয়বঙ্গে তাঁকে বিশিষ্ট করে তুলেছে।
রাধারঞ্জন গুপ্ত রুচিবান, সংস্কৃতিবান শিক্ষিত ভদ্রলোক। উদার মনের সচেতন মহিলা ঈপ্সিতা গুপ্ত ছিলেন সঙ্গিনী। নিঃসন্তান এই দম্পতি ধর্মীয় সম্প্রীতির Symbol ছিলেন যেন। সমস্ত ধর্মীয় মানুষের অবাধ যাতায়াত ছিল হরিবাবুর চালের ভাড়াবাড়িতে। বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের কালে ক্যাপটেন রশিদ প্রায়ই আসতেন। তাঁর বেসক্যাম্প ছিল কাজিপাড়ায়। উলটোদিকেই রাজশাহি। রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘Emeritus’ অধ্যাপক ড. কাজি আবদুল মান্নান (প্রণেতা: আধুনিক বাংলা সাহিত্যে মুসলিম সাধনা) ‘গুপ্ত দম্পতি’-র আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন। তখন আমি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সিকস্থ ইয়ার’-এর ছাত্র ছিলাম। গত শতাব্দীর আটের দশকের প্রথমেই আবার রাধারঞ্জন গুপ্ত এবং ঈপ্সিতাদির আতিথ্য গ্রহণ করলেন, তখন অতি বিদ্বান এই পণ্ডিতের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। দিদি শুধুমাত্র আমাকে ডেকেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। এক জীবনে কত কিছু শেখার আর চেনা-জানার বিষয় রয়েছে তা ভাবলেও বিস্মিত হই। ড. মান্নান, রাজা কৃষ্ণনাথ সম্পর্কে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। একদিন আমার সঙ্গে কৃষ্ণনাথ কলেজ দেখতে পর্যন্ত গেলেন। সেবার দু-একদিন ছিলেন। কলকাতায় কোনো কাজে এসেছিলেন, দেখা করে গেলেন। টক দই খেতে পছন্দ করতেন। শহর বহরমপুরে সম্প্রীতির অনুশীলন করতে হয় না, চর্চিত হয়। বহু অভিজাত পরিবারে খণ্ডিত চিন্তার কোনো জায়গা নেই। ‘সবুত’ আমাদের সামনেই রয়েছে— সূর্য সেন রোডস্থ সুইমিং পুলের পাশে বনেদি গঙ্গোপাধ্যায় পরিবার— সম্প্রীতির নজির বহন করছে।
সাপ্তাহিক ‘জনমত’ পত্রিকায় শহর বহরমপুরের জনজীবন, রীতিনীতি, সমাজ-আর্থবিষয়ক প্রবন্ধ, ব্যবসা বাণিজ্য, রাস্তা পথঘাট, মন্দির-মসজিদ-পীর ফকিরের আস্তানা, কাঁসা পিতলের শিল্প, রেশম-তাঁত শিল্প, হাতির দাঁতের কাজ, শোলাশিল্প ইত্যকার বিষয় নিয়ে প্রায় চার দশক ধরে কত লেখক যে কাঁড়িকাঁড়ি লিখেছেন তার ইয়ত্তা নেই। শহর বহরমপুরকে জানতে, তার ট্র্যাডিশনকে বুঝতে ‘জনমত’ যে ভূমিকা পালন করেছে তা অনবদ্য। এই অধম বান্দা ‘আসা যাওয়ার পথের ধারে’ শীর্ষক ফিচারধর্মী কত যে লিখেছে তা আজ নিজেও স্মরণ করতে পারে না। শারদ সংখ্যা ‘জনমত’-এ গোষ্ঠদা আমাকে বিশেষ ‘সিরিয়াস’ প্রবন্ধ লিখতে উৎসাহিত করতেন। গত শতকের আটের দশকে মীর্জা আসাদুল্লা বেগ গালিব (উর্দু সাহিত্যের ‘মশহুর’ কবি) এর ওপর বিশাল একটি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ ছেপেছিলেন। এই শহর তাঁকে বিস্মৃতপ্রায় করে তুলেছে। ‘গণকণ্ঠ’ পত্রিকার সম্পাদক প্রাণরঞ্জন চৌধুরী বাঙালিয়ানার মূর্ত প্রতীক ছিলেন। ধুতি-পাঞ্জাবি-পাম্পশু পরিহিত ঝকঝকে আর অতি সুদর্শন সজ্জন মানুষটি জীবনে ব্যাপক সংগ্রাম করেছেন। তাঁর জীবনসঙ্গিনী মানময়ী গীতা চৌধুরী তাঁর পাশে সহযোগিতার যে নজির সৃষ্টি করেছেন তা অনুসরণযোগ্য। সম্পাদক হিসাবে তাঁর কাগজে শহর বহরমপুরকে বহুভাবে ‘প্রোজেক্ট’ করেছেন। শহর বহরমপুরের বিদ্বৎসমা্জ-এর বর্ণনা এবং বেশ কয়েকজন মনীষী-দার্শনিকতুল্য ব্যক্তির জীবনী যোগ্য প্রাবন্ধিকদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন। আগামী প্রজন্মের কাছে সেগুলো ইতিহাস নির্মাণের উপাদান হিসাবে কাজ করবে। আমাকে দিয়ে তিনি বিস্তর লিখিয়ে নিয়েছিলেন। ‘পীর-ফকিরের আস্তানা: হিন্দু-মুসলমান মিলনভূমি’ শীর্ষক সন্দর্ভ বহু গবেষকের কাজে এসেছে। তাঁদের গবেষণায় সে স্বীকৃতিও রয়েছে। লাগাতার তাগাদা দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছিলেন ‘বঙ্গে ইসলাম: মুর্শিদাবাদে মুসলিম ভাষানুষঙ্গ’। এই গবেষণাজাত সন্দর্ভটি ‘বাসভূমি’ সম্পাদক অরূপ চন্দ্র তাঁর মুর্শিদাবাদ চর্চা শীর্ষক সিরিজের বিশাল সংকলনে মুদ্রিত করেছেন। এ বাবদে অরূপ চন্দ্রের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। এই ভিন্নধর্মী সংস্কৃতি সংক্রান্ত লেখাগুলি প্রকাশে বিশেষ উদারতা কাজ করেছে— এটি সন্দেহাতীত।
দীপংকর চক্রবর্তী উভয় বঙ্গে তথা সারা বিশ্বে বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে সুপরিচিত নাম। তাঁর সম্পাদিত ‘অনীক’ মাসিক পত্রিকা উভয় বঙ্গে চিন্তা-চর্চার একটি নতুন দিকের দিগন্ত খুলে দিয়েছিলেন। অধ্যাপক চক্রবর্তী সম্পর্কে উভয় বাংলায় কোনো না কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র গবেষণা করবে সে বাবদে নিশ্চিত করে বলা যায়। তিনি আমাকে কয়েকটি গবেষণাজাত কাজ করিয়ে নিয়েছিলেন। নজির দেওয়া যাক। ‘বাঙালি মুসলমান জাগরণের অপ্রত্যক্ষ অভিভাবক হাজি মুহাম্মদ মহসীন’, ‘বাঙালি মুসলমান: স্বরূপ সন্ধান’, ‘সৈয়দ আমির আলি: একটি বিতর্ক’, ‘বুদ্ধির মুক্তি: কয়েকজন নায়ক’— এমন সব তর্ক প্ররোচক লেখাপত্র। ‘মুর্শিদাবাদ বীক্ষণ’ জেলার বিষয়ে গুরুত্ব থাকলেও শহর বহরমপুরকে উপেক্ষা করেনি। নাগরিক বহুবিধ সমস্যার বিষয়ে ঝাঁকানি দিয়ে সম্পাদকীয় লিখতেন। এইসব দেশ, সমাজ-রাষ্ট্র সম্পর্কে সচেতন ব্যক্তিবর্গের দ্বারা প্রভাবিত, অনুপ্রাণিত হয়ে বহরমপুরের জীবনকে দেখেছি। ৫০ বছর আগে যা ঘটনার মতো মনে হত আজ তা অতীত স্মৃতি হিসাবে মনের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে অধ্যাপক রেজাউল করীমের মৃত্যুর সময়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকার বিষয়টি আজও আমাকে পিতৃ-বিয়োগের বেদনায় বিদ্ধ করে। লেখার শুরুতে গ্রহণ, বর্জন, আকর্ষণ, বিকর্ষণের কথা বলেছিলাম। এ যাবৎ যা বললাম সবই তো গ্রহণ আর আকর্ষণের। এবার কিঞ্চিৎ বর্জন আর বিকর্ষণের কথা বলি। ১৯৭৮ সালে কে.পি. চট্টরাজ রোডে কর্ণেল দাস রায়ের কাছ থেকে প্রায় আড়াই কাঠা জমি কিনে, কলকাতার চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনালের আর্কিটেক্টকে দিয়ে প্ল্যান করে একটি বড়সড় বাড়ি করেছিলাম। জমি কেনার সময় কর্ণেল অনিল দাস রায়কে মাত্র একজন প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া জানা লোক অনুরোধ করেছিলেন যে তিনি যেন তাঁর স্বধর্মী কোনো ব্যক্তিকে জমিটি হস্তান্তর করেন। কর্ণেল দাস রায় তাকে তাঁর ড্রয়িংরুম থেকে বের করে দেন। উদার মানুষ। তাঁর অনুজ ভ্রাতার বাড়িতেই আমি ভাড়া থাকতাম। দাস রায় পরিবার আমার স্ত্রী প্রতিমা আর আমাকে বিশ্বাসযোগ্য ভালোবাসতেন। যাই হোক বাড়ি করার পর মানসিক একটি চাপের মধ্যে রাখার কৌশল লক্ষ করা যেত। আমরা এসবের তোয়াক্কা করতাম না। ইতোমধ্যে ১৯৯৩ সালে আমরা একটি শিশু কন্যা অ্যাডপ্ট করি। তার সেপটিসেমিয়া ছিল। শহর বহরমপুরের সমস্ত চিকিৎসা শেষ হলে কলকাতায় ডা. এস.পি. খাটুয়া (শিশু বিশেষজ্ঞ)-র ‘ডেট’ নিই। কিন্তু ন্যাশনাল হাইওয়ে ৩৪-এর উপর ‘অ্যাম্বাসাডর’-এর মধ্যেই শিশুটির শেষ নিঃশ্বাস পড়ল। বাড়ি ফিরে দেখি বাড়ির দক্ষিণদিকের পাঁচিলের ভিতর মৃত শুয়োর। এর মধ্যেই শুভ চ্যাটার্জিরি নেতৃত্বে (রৌরব সম্পাদক) ড. মুজিবর রহমানের পরামর্শে শহরস্থ ‘বারো বিঘা’ ‘কবরস্তান’-এ শিশুটিকে সমাধিস্থ করা হল। আমার স্ত্রীর অস্বাভাবিক আচরণে মনোবিকলনের লক্ষণ দেখা দিল— তার আবারও ‘অ্যাডপ্ট’ কন্যা শিশু চাই। বহরমপুর সদর হাসপাতাল থেকে আইনগতভাবে একটি কন্যা সন্তান আবারও দত্তক নিলাম। আমার স্ত্রী স্বাভাবিক হয়ে গেলেন। কন্যাটিকে যত্নে বড় করার অভিপ্রায়ে এই বাড়িটি ছাড়লাম। এবার একটি অভিজাত বাঙালি হিন্দুর বাড়ি কিনলাম। তিনিও প্রথমে রাজি হচ্ছিলেন না। ড. জহর সেন, অধ্যাপক মিহির সেন এবং আইনবেত্তা কিশলয় সেনগুপ্ত আমার জন্য সুপারিশ করলেন, বাড়ি পেলাম। এই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারটি এখন কলকাতায় উল্টোডাঙার ‘ঈশ্বর নিবাস’-এ থাকেন। এই বাড়িতে ভিন্নতর আপদে পড়লাম। আমার বাড়ির সামনে একটি দরিদ্র মুসলিম পরিবার Country Wine বিক্রি করে। উপভোক্তা আমার সিঁড়িতে বসে মদ্যপান, নিষিদ্ধ মাংস ভক্ষণ করে, Cobbler বর্গ শুয়োরের মাংস সমেত মদ্যপান করে। মুসলমানরা গোমাংস ব্যবহার করে। আমার স্ত্রী বাঙালি হিন্দু— স্বভাবতই বিব্রত হয়ে গেলাম। প্রথম বাড়ি বর্জন করলাম, দ্বিতীয় বাড়ি বিকর্ষণের সিদ্ধান্ত নিলাম। কেননা কন্যাটিকে যথার্থ সুকন্যা করার উদ্দেশ্যেই আমাদের সিদ্ধান্ত। এইবারে ধীরে সুস্থে একটি যথার্থ ভব্য পাড়ার প্রয়োজনীয় আয়তনের একটি ফ্ল্যাট নিয়ে মর্যাদার সঙ্গে কন্যাটিকে গ্রেসফুলি বড় করা গেছে। শেষমেষ শুভবোধেরই জয় হয়েছে। মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ। মনুষ্যত্বের মহত্ত্বে অপরাজিত বিশ্বাস রাখা জরুরি। এবারে আবার গ্রহণ আর আকর্ষণের বার্তা দিয়ে শেষ করি।
শেষ কথা
আমার কিশোর বেলার বহরমপুর কোর্ট স্টেশন নিয়ে যে মুগ্ধতা তা আজও অমলিন হয়ে রয়েছে। অতি লম্বা বা সুদীর্ঘ প্ল্যাটফর্ম নয়, অনতিদীর্ঘ কিন্তু আড়ে-বহরে অনেক বড়। বাড়িঘর। পূর্ব দিকে নয়া আধুনিক ঝকঝকে বসতি নানান গাছ-গাছালিতে পাখ-পাখালি মজে রয়েছে। উত্তরে দূর প্রান্তে চলে যাওয়া রেললাইন। উত্তরপশ্চিমে রেল কোম্জলের পার্ক, বাগান, সুদৃশ্য মনোরম অতিথিশালা। সীমানার বাইরে উত্তর-পশ্চিমে ‘ডিসেন্ট লাইফ’-এর আমোদ-প্রমোদের ‘ইন্তেজাম’। পশ্চিমে মূল শহর। আধুনিক চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল কলেজ আর হাসপাতাল। পাশেই একদা অর্থাৎ ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত যুদ্ধ বিমান অবতরণের বিস্তীর্ণ মাঠ। সবটাতেই যেন একটি ‘Grandeur’। শহর বহরমপুরের মধ্যস্থলে আজকের লালদিঘি তো একটি ‘ফেনোমেনা’। ক্যান্টনমেন্ট রোড বা পুরোনো কালেক্টরেটের গাম্ভীর্য আর টেক্সটাইল কলেজের আভিজাত্য তো আমাদের শ্লাঘার কারণ হয়ে রয়েছে। মুক্ত বাতাসের কুলকুল ঝলক স্কোয়ারফিল্ডে। আর এই স্কোয়ারফিল্ড তো ‘পরবর্তী-মোগলদের’-ই অবদান। ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর লালিত ‘রেন ট্রি’-র সারি তো পরবর্তী রাজধানী কলকাতার ক্যাসুরিনা অ্যাভিনিউ-এর কথাই তো মনে করিয়ে দেয়। এসবই তো গ্রহণ আর আকর্ষণের কারণ।সোজাসুজি বলতে কী মানুষকে কাছে পাওয়াই সর্বোত্তম অর্জন। আমার অনুজদদের মধ্যে থেকে মনুষ্যত্বের সন্ধান পেয়েছি যেমন অকালপ্রয়াত কৌশিক রায়চৌধুরী, শঙ্খ গুপ্ত, সোনালি গুপ্ত, খাইবার আলি মিঁয়া, অনল আবেদিন, সৈয়দ তৌফিকুল ইসলাম, রাজন গঙ্গোপাধ্যায়, শ্যামল দাস, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌতম বিশ্বাস, অভিরূপ বিশ্বাস, অমিত বিশ্বাস এবং অরিন্দম চন্দ্র।অনতিলম্বা ‘কোর্ট স্টেশন’-এর় কথা বলতে গিয়ে অন্যবিধ কথাও তো বললাম। কিন্তু রেলগাড়ির কামরা বা ‘খোপ’-গুলোর কথা কি ভোলা যায়! ‘খোপ’-গুলো যেন সাময়িক বাসস্থান। জীবনের নানা পরিস্থিতি আর মানসিকতার পরিচয় বহন করে চলে। স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ায়। মায়াকুহক জীবনও দাঁড়ায়। ট্রেন চলে। জীবনও চলে। আমার শৈশবের সেই মুগ্ধতা যেন এই কথাটিই বলে, ‘জিন্দেগি লম্বি নেহি/বড়ি হোনি চাহিয়ে।’ (শেষ)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct