আপনজন ডেস্ক: বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ রবিবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নজিরবিহীনভাবে আক্রমণ করলেন। একই সঙ্গে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রর সাজ পোশাক ও প্রসাধনী নিয়েও মন্তব্য করলেন। ২৯ নভেম্বর কলকাতায় বিজেপির সমাবশে নিয়ে রবিবার খড়্গপুরে এক পথসভায় অংশ নেন মেদিনীপুরের বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ। সেই পথসভায় তিনি সিবিআইয়ের আগাম পদক্ষেপ কি হবে তার পূর্বাভাস জানিয়ে দেন। দিলীপ ঘোষ বলেন, পশ্চিমবাংলায় রাজ্যের মন্ত্রী ও শাসক দলের বিধায়করা জেলে রয়েছেন। দিল্লিতে দু’জন মন্ত্রী জেলে রয়েছেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে তলব করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তাহলে কেন দিদিকে (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) এজেন্সিগুলি তলব করবে না? যদি তার পরিবারের সদস্যদের এজেন্সিগুলি তলব করে তবে তাকে কেন ছাড় দেওয়া হবে? তিনিই সব কেলেঙ্কারির আসল হোতা। দিলীপ ঘোষ আরও বলেন, তাঁর এত ভাই বোন বাড়ির লোক সবাই ডাক পাচ্ছে। আসল জায়গাটা তো ওটাই। উনি কেন ছাড় পাবেন? সিবিআইয়ের উচিত তাঁকে এক কাপ চায়ের জন্য ডাকা। তাকে অবশ্যই সিবিআই দ্বারা পরিবেশিত গরম চায়ের স্বাদ নিতে হবে। আমি মনে করি আগামী বছর তিনি এমন সুযোগ পাবেন। কিন্তু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা হওয়া উচিত, কারণ বাংলার মানুষও তাই চায়।দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যকে স্মরণ করিয়ে দেয় শুভেন্দু অধিকারীকে। সম্প্রতি তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার সক্রিয়তা নিয়ে আগাম মন্তব্য মিলে যাওয়ায় তৃণমূল প্রশ্ন তুলেছিল, বিজেপি কি তাহলে বকলমে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে চালাচ্ছে? তাহলে তারা আগে যা বলছে, সেটাই পরে ঘটছে কেন তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। সেই বতির্কের মধ্যে দিলীপ ঘোষের মমতাকে নিয়ে মন্তব্য নতুন করে রাজনৈতিক আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।এ বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সহ-সভাপতি জয় প্রকাশ মজুমদার বলেন, বিজেপি কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলির “অপব্যবহার” করছে। বিজেপি নেতারা অদূর ভবিষ্যতে এজেন্সিগুলি কী করবে তার পূর্বাভাস দিচ্ছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, এই ধরনের পূর্বাভাস সত্য হচ্ছে।
জয়প্রকাশ আরও বলেন, আজ দিলীপ ঘোষ বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করা হবে। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই), ইডি এবং আয়কর বিভাগ বিজেপির ফ্রন্টাল সংগঠনে পরিণত হয়েছে। দল তাদের অপব্যবহার করছে।অন্যদিকে, রবিবারই দুর্গাপুরের এক সভায় তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে নিয়ে চরম কটাক্ষ করেছেন দিলীপ ঘোষ। দিলীপ ঘোষ মহুয়ার চেহারা নিয়ে কটাক্ষ করে বলেন, গোরে মুখরে পে কালা কালা চশমা। আপনারাই ছবি দেখুন। এই চশমার দাম আপনারা জানেন? গগলসের দাম ২ লক্ষ টাকা। ভ্যানিটি ব্যাগটারই দাম তো ১ লক্ষ টাকা। যে ঘড়িটা হাতে, তার দাম ৩ লক্ষ টাকা। দিল্লির যে কোয়ার্টারে থাকেন, তার সংস্কার হয়েছে কয়েক কোটি টাকায়। আর, এসবের বিনিময়ে তিনি দেশের সুরক্ষা বেচে দিয়েছেন।এছাড়া দিলীপ বলেন, মহুয়া মৈত্র সংসদে ইংরেজিতে গালাগালি করেছেন। উত্তর না-দিয়ে গালাগাল করে যাচ্ছেন। উনি বলছেন, টাকা নিইনি উপহার নিয়েছি। কিন্তু, লিপস্টিক, স্নো-পাউডার, চকচকে চেহারা। সবটাই আসলে গোরে গোরে মুখরে পে কালা কালা চশমা। সব প্রমাণ এখন বের হচ্ছে। দোষী প্রমাণ হলে তো শাস্তি হবেই।উল্লেখ্য, সংসদের এথিক্স কমিটির মুখামুখি হওয়ার পর মহুয়া মৈত্র অভিযোগ করেছিলেন, তাকে বেশ কিছু ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা হয়েছে যা অনৈতিক। কোন হোটেলে ছিলেন, আর কারা ছিল এসব প্রশ্ন করায় মহুয়া এথিক্স কমিটির বিরুদ্ধে নারী বিদ্বেষের অভিযোগ তোলেন। এবার মহুয়াকে নিয়ে দিলীপ ঘোষের ‘গোরে গোরে মুখরে পে কালা কালা চশমা’ মন্তব্য ফের সেই নারী বিদ্বেষী মনোভাবকে উসকে দিল। তবে, এখনও এ নিয়ে মহুয়অ মৈত্র কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct