সজল মজুমদার : এক বা একাধিক নানা প্রাকৃতিক ও মানবিক কারণে পৃথিবী ও তার বায়ুমণ্ডলের মধ্যে তাপীয় সমতার আকস্মিক বা ধীরগতিতে পরিবর্তন ঘটে চলেছে। আবহাওয়া ও জলবায়ুর এই অস্বাভাবিক আচরণকেই সাধারণত জলবায়ু পরিবর্তন বলে। জলবায়ু পরিবর্তনে অপার্থিব এবং পার্থিব নানা কারণ সমূহ রয়েছে। যদিও পার্থিবকরণগুলো পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে খরা অস্বাভাবিক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় অনিয়মিত বর্ষা পরিবর্তিত জলচক্র এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় গুলো এখন প্রায় নিয়মিত হয়ে পড়েছে। অতি উষ্ণায়ন, ভূমিকম্প ,সামুদ্রিক ঝড়, বন্যা, মেরু প্রদেশে বরফ গলন, হড়পা বান ,পাহাড়ি ধস ,বিষাক্ত গ্রীন হাউস নির্গমনের ফলে ওজোন স্তরের ক্রমাগত ক্ষয়, দূষণ, সর্বোপরি বৃক্ষ ছেদন এসব কারণগুলো বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনকে আরও ত্বরান্বিত করে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনকে ঠেকানোর জন্য তথা জলবায়ুকে স্থিতিশীল রাখবার জন্য প্রতিবছর বিশ্বের উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো একজোট হয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন সম্মেলনের আয়োজন করে থাকে। সেখানে পরিবেশ জলবায়ু রক্ষার জন্য একগুচ্ছ এজেন্ডাও গৃহীত হয়। তবে এত কিছু পদক্ষেপের পরেও পৃথিবীর সামগ্রিক উষ্ণতা কি স্থিতিশীল পর্যায়ে আছে!!? নাকি পৃথিবীর উষ্ণতা ক্রমাগত উর্ধ্বমুখী!!? উত্তরটা কি সহজেই অনুমেয় !!! প্রসঙ্গত বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে United Nations Framework Convention on Climate Change এর Conference of Parties( COP) প্রতিবছর বিশ্বের নানান স্থানে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। COP 26 স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো, COP 27 মিশরের Sharm El Sheikh এ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর এ বছরের COP28 সম্মেলনের আসর সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের এক্স পো সিটিতে আগামী 30 থেকে 12 ই ডিসেম্বর আয়োজিত হতে চলেছে।প্রায় ২০০ টি দেশের 70,000 প্রতিনিধি এই জলবায়ু পরিবেশ সম্মেলনে আমন্ত্রিত থাকতে পারেন। উপস্থিত থাকবেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, বিশ্বের তাবর বাণিজ্যিক, জলবায়ু বিজ্ঞানী, স্থানীয় জনগণ, সাংবাদিক, বিভিন্ন ক্ষেত্রের এক্সপার্ট, স্টেকহোল্ডাররা। আসন্ন COP28 সামিটে যে তিনটি মূল বিষয়ে আলোকপাত করা হতে পারে তা হল, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের তাগিদে ২০৫০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার যতটা সম্ভব কমানো বা বাঁচানো, পৃথিবীব্যাপী স্থিতিশীল অনুকূল জলবায়ু কে ধরে রাখার জন্য সমাজকে আরো ক্ষমতায়ন প্রদান, জলবায়ু সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য বিশ্বের সমস্ত দেশের নীতি,প্রকল্প তথা জলবায়ু অর্থ লগ্নি কে আরো জোরদার করা ইত্যাদি। অন্যদিকে এবারের COP 28 সামিটে যে বিষয়গুলো অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখা হয়েছে তা হলো, জলবায়ু সংকটকে রোখা, এবং 2030 সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা 1.5 সেলসিয়াস বৃদ্ধির বিষয়কে হ্রাস করা, প্রকৃতিতে মানুষের সুষ্ঠুভাবে বসবাসের জন্য প্রাণবন্ত জলবায়ু পরিবেশ পরিকাঠামো তৈরি তথাপি বিপন্ন প্রায় প্রজাতিগুলোকে রক্ষা করা, নির্দিষ্ট জলবায়ু বাজেট প্রস্তুত করা প্রভৃতি। উল্লেখ্য সারা বিশ্বে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ সংরক্ষণ সহ সচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে COP 27 সামিটে UAE সহ ইন্দোনেশিয়া, ভারত শ্রীলংকা অস্ট্রেলিয়া জাপান স্পেন প্রভৃতি দেশগুলো নিয়ে Mangrove Alliance for Climate (MAC) জোট গঠিত হয়েছিল। তবে এবারের সামিটে ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ এবং ম্যানগ্রোভ বাস্তুতন্ত্র কে পুনরুদ্ধারের জন্য UAE একটি ম্যানগ্রোভ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডার অনুমোদন দিতে পারে। যেটিকে Global Mangrove Alliance এবং UN Climate Change এর সাথে মিলিতভাবে সংযুক্ত করে Mangrove Breakthrough Agenda হিসেবে পেশ করা হতে পারে। পৃথিবীর যেসব দেশে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ রয়েছে সেসব দেশের সরকার, সাধারণ সমাজ, পরিবেশ প্রেমী, বাস্তু তন্ত্রবিদ, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সকলে একত্রে জোটবদ্ধ হয়ে জীব বৈচিত্রের এই মূল আধার টিকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসবে। আগামী 2030 সালের মধ্যে বিশ্বের 15 মিলিয়ন হেক্টর জুড়ে অবস্থিত ম্যানগ্রোভকে রক্ষা এবং পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য এবারের সামিটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হতে পারে। পরিশেষে, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনকে স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য বিশ্বের ছোট বড় রাষ্ট্রগুলো একজোট হয়ে কাজ করে চলেছে। এভাবে স্থিতিশীল উন্নয়নের সমস্ত লক্ষ্যগুলো পূরণের মাধ্যমে এই সুন্দর পৃথিবীকে আগামী প্রজন্মের জন্য আমরাই বাসযোগ্য করে রেখে যেতে পারবো। এই প্রচেষ্টাতেই সকলকে সংকল্পবদ্ধ হতে হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct