আপনজন ডেস্ক: স্কুল সার্ভিস কমিশন থেকে ধর্মতলায় বিরোধী দলের মিটিং, একের পর এক মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের পরাজয় নিয়ে এবার মুখ খুললেন খোদ তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শদাতাদের ভুল পরামর্শের জন্য রাজ্য সরকার বারে বারে হাইকোর্টে হারছে বলেও মন্তব্য করেন কুনাল ঘোষ। তার ফলে দলের মুখপাত্র হিসেবে যে চরম অস্বস্তিতে পড়ছেন সেকথা জানান কুনাল ঘোষ। কুনালের বক্তব্য, উপরমহল থেকে যেসব পরামর্শ রাজ্যকে দেওয়া হচ্ছে তাতে নতুন নতুন ইস্যু তৈরি হচ্ছে। সেই ইস্যুর মোকাবিলায় কিছু করার থাকছে না কুনাল ঘোষের। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট ২১ জুলাই তৃণমূলের সভা করা নিয়ে সাবধান বাণী দেওয়ায় আরও বেকায়দায় পড়ার আশঙ্কা করছেন কুনাল। রাজ্য সরকারের আরও বেইজ্জতি হওয়ার আশঙ্কা তাকে কুরে কুরে খাচ্ছে।ঘোষ জোর দিয়েছিলেন যে দলের মধ্যে কিছু নেতার “অত্যাধিক আত্মবিশ্বাস” জনসাধারণের ভাবমূর্তিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।উল্লেখ্য, ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে বিজেপি ২৯ নভেম্বর সভা করার জন্য অনুমতি চেয়েছিল কলকাতা পুলিশের কাছে। সেই সভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর হাজির থাকার কথা। কিন্তু কলকাতা পুলিশ সভা করার অনুমতি না দেওয়ায় বিজেপি আদালতের শরণাপন্ন হলে কলকাতা হাইকোর্টের একক বেঞ্চ সভা করার অনুমতি দেয়। তার বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার ডিভিশন বেঞ্চে গেলে শুক্রবার হাইকোর্টে ফের হেরে যায় রাজ্য সরকার। শুধু তাই নয়, ২৯ নভেম্বর বিজেপির সভার অনুমতি দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি, প্রধান বিচারপতি প্রয়োজন হলে ২১ জুলাই তৃণমূলের সভাও বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
এদিন প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হীরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানিতে নির্দেশ দেওয়া হয় ধর্মতলাতেই সভা করতে পারবে বিজেপি। কিন্তু শুনানির সময় রাজ্য সরকারের তরফে আইনজীবী কিশোর দত্ত আর্জি জানান, ভিক্টোরিয়া হাউজের সামনের পরিবর্তে বিজেপিকে রানি রাসমণি রোডে সভা করার অনুমতি দেওয়া হোক। কারণ, যানজট সৃষ্টি হতে পারে ভিক্টোরিয়া হাউজের সামনে সভা করলে। তখনই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম বলেন, যানজট এ রাজ্যে নতুন কিছু নয়। কেউই রাজ্যের মানুষের অসুবিধা নিয়ে ভাবেন না। তা তারা সরকারি কর্মচারী হোন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কিংবা রাজনৈতিক দল। সবাই রাস্তা আটকে মিছিল মিটিং করেন। পুলিশ তাতে অনুমতিও দিয়ে দেয়। কিশোর দত্তের আর্জির জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা একটা কাজ করছি, ২১ জুলাইয়ের সভাও বন্ধ করে দিচ্ছি। কোনও সভা নয়, কোনও কর্মসূচি নয়, কোনও প্রতিবাদ নয়। যদি অন্য দল ওখানে সভা না করতে পারে, তা হলে ২১ জুলাইয়ের সভাও বন্ধ করে দেওয়া হবে। সকলকে সমানভাবে দেখাই একমাত্র সমাধান।প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘গতকাল বালিগঞ্জ এলাকায় রাত ৩টে পর্যন্ত ড্রাম বাজিয়ে লরিতে লোকজন শোভাযাত্রা করেছে। ৪-৫ দিন আগে দেখলাম ট্রাকের মাথায় একটি শিশুকে নিয়ে লোক যাচ্ছে। ধরে বসার কিছু নেই। পণ্যবাহী গাড়িতে করে মানুষ যাচ্ছে। পুলিশ তবু কিছু বলছে না।কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের এসব মন্তব্য ঘিরেই তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ শুক্রবার তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। কুনাল বলেন, বিজেপিকে সমাবেশ করতে বাধা দেওয়ার “অনুরূপ ভুলগুলি” অজান্তেই গেরুয়া শিবিরের জন্য প্রচার তৈরি করছে। কুণালের অভিযোগ, যারা রাজ্যকে পরামর্শ দেন, তাদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকেই রোজ বেইজ্জত হতে হচ্ছে। তাই তৃণমূলের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করা তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ছে। কুনালের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে রাজ্য সরকারকে আরও বেইজ্জতি হতে পারে। কুনালের বক্তব্য, বিজেপির সভার ব্যাপারে আপত্তি না জানালেই হত। কারণ, সাধারণ নাগরিক হিসেবে তার মত এক দল সভা করার অনুমতি পেলে অন্য দলকেও সভা করার অনুমতি দেওয়া দরকার। বরং, বিজেপিকে এক্ষেত্রে সভা করার অনুমতি না দিয়ে তাদেরকে ফায়দা করে দিচ্ছে বলে তার ধারণা। কুনাল এ ব্যাপারে কংগ্রেস নেতা কৌস্তুভ বাগচির গ্রেফতারের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। কুনাল বলেন, কৌস্তুভকে কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করে তাকে নেতা বানিয়ে দিয়েছে, যার কোনও প্রয়োজন ছিল না।তবে, যেভাবে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ধর্মতলা চত্বরে ২১ জুলাইয়ের সভা সহ সব ধরনের সভা মিছিল বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তাতে রাজ্য সরকার এভাবে চলতে থাকলে যে ২১ জুলাইয়ের মিছিলে কোপ পড়বে সেকথা দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাইলেন কুনাল তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct