সাদ্দাম হোসেন, জলপাইগুড়ি, আপনজন: পুলিশের নাকা চেকিং পয়েন্টের একদম উলটো দিকেই চলছে বেআইনিভাবে নয়ানজুলী ভরাট। প্রশ্ন উঠছে কি করে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারির পরেও বন্ধ হয়নি বেআইনিভাবে সরকারি জায়গা দখল, জলাশয় এবং নয়ানজুলী ভরাট। তাহলে কি শর্ষের মধ্যেই রয়েছে ভূত। ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা সাধারণ মানুষেরা প্রশ্ন তুলছেন পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির রেলস্টেশন মোড় সংলগ্ন এলাকার ঘটনা।জানা গেছে, এবার খোদ পুলিশের নাকা চেক পোস্ট এর উল্টো পাশে দিনে দুপুরে চলছে, সরকারি জায়গার জলাশয় ভরাট। কিন্তু নিরব পুলিশ প্রশাসন। পুলিশ প্রশাসন এবং ভূমি সংস্কার দপ্তরের নাকের ডগায় বেআইনি ভাবে এখনো ধূপগুড়ি শহরে জাতীয় সড়কের পাশে থাকা জলাভূমি দখল করে চলছে দিনে এবং রাতে ভরাট করার কাজ। যার কারণে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। বাসিন্দা বরুন কর বলেন, এটা একটা ডোবা ছিলো যার মধ্যে জল ছিল দু’দিন আগেও। কে বা কাহারা রাতের অন্ধকারে ভরাট করলো জানি না। ডোবাটি পুরোপুরি বেআইনি ভাবে ভরাট করা হয়েছে। এখানকার কার্লভার্ট টাও ভরাট করা হয়েছে। দীর্ঘদিন থেকেই ধূপগুড়ি শহরে জমি মাফিয়াদের র্যাকেট সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। প্রশাসনের আমলাদের একাংশে মদদে সরকারি জায়গা প্রথমে দখল তারপর টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওওয়া এবং তার আড়ালে সেই জলাভূমি, নয়নজুলী, ডোবা ভরাট করে বিক্রি করে দেওয়ার কাজ করছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে সরকারি জায়গার পেছনে থাকা জমি কম দামে কিনে মার্সেল পাওয়ার ও টাকার জোরে সরকারি জায়গা দখল করে গোটাটা চড়া দামে বিক্রি করে দিচ্ছে। মূলত জমি মাফিয়ারা প্রথমে সরকারি জায়গার পিছনে থাকা জমিগুলোকে কম দামে কিনছে, তারপর সরকারি জমি, জলাশয় ও নয়নজুলী গুলি ভরাট করে চড়া দামে বিক্রি করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ। ধূপগুড়ি থেকে জলপাইগুড়ি গামী জাতীয় সড়কের পাশে থাকা নয়ানজুলী ও জলাভূমি দিনে দুপুরে এবং রাতের বেলা বালি দিয়ে ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। স্টেশন মোট সংলগ্ন এলাকার এমনই ছবি ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। প্রশ্নে উঠছে পুলিশের নাকা চেকিং পয়েন্টের ঠিক উল্টোপাশে সরকারি জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি যে পুলিশের গাড়ি নিয়মিতভাবে ওই জলাভূমির পাশে এসেই দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের সামনেই চলছে ভরাট প্রক্রিয়া?
বিরোধীদের অভিযোগ শাসক দলের নেতাদের মদদেই এবং প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের যোগসাজশে চলে এই কাজ, তাই কেউই প্রতিবাদ করার সাহস পায়না। কারণ পেছনে রয়েছে জমি মাফিয়া এবং প্রশাসনের একাংশের যোগ। প্রকাশ্য অভিযোগ জানালে হামলার মুখে অথবা হুমকির মুখে পড়তে হতে পারে।এর আগেও ধূপগুড়ি স্টেশন মোড় সংলগ্ন এলাকায় একইভাবে জাতীয় সড়কের পাশে থাকা ডোবা টিনের একটা বেড়া দিয়ে ঘিরে তা দখল করা হয়েছিলো।এমনকি জলাভূমি ভরাট করার প্রক্রিয়া চলছিলো। সংবাদমাধ্যমে সেই খবর সম্প্রচার হওয়ার পর প্রশাসন পদক্ষেপ গ্রহণ করে, আটকে দেওয়া হয় বেআইনিভাবে দখল। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে মামলাও করা হয়। কিন্তু তার কিছুদিন যেতে না যেতেই ফের ধূপগুড়ি শহরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে জমি মাফিয়ারা।অবিলম্বে জলাশয় ভরাট বন্ধ না করলে গ্রীন ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হওয়ার হুমকি দিয়েছে পরিবেশপ্রেমীরা। পরিবেশ প্রেমী সংগঠন ন্যাসের কর্মকর্তা নফসর আলী অভিযোগ তুলেছে, শর্ষের মধ্যেই ভূত রয়েছে তাই প্রকাশ্যে চলছে এভাবে চলছে নয়াজুলি জলাভূমি ভরাটের কাজ। অবিলম্বে এই অবৈধ কাজ বন্ধ করতে হবে। যদিও আমরা দেখেছি ধূপগুড়ি পৌর কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র আশ্বাস দেন, কিন্তু বাস্তবে কোন কাজ করেন না। বিজেপি এর তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে যে শাসক দলের নেতাদের মধ্য দিয়ে অবৈধভাবে চলছে এই জলাশয় ভরাট এবং সরকারি জায়গা দখল শহর জুড়ে।এদিকে ধূপগুড়ি বিধানসভার বিজেপি কনভেনার চন্দন দত্ত বলেন, পুলিশ প্রশাসন এবং তৃণমূল নেতাদের মদত না থাকলে জমি মাফিয়াদের এত বারবারান্ত হতে পারে না। পুলিশ প্রশাসন এবং বিএলআরও অফিসের একাংশের যোগসাজশে সমস্তটা হচ্ছে। যদি পুলিশ প্রশাসন পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আমরা মামলা করব।এবিষয়ে ধূপগুড়ি বিডিও জয়ন্ত রায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা পুর এলাকার অন্তর্ভুক্ত। তাই তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না। যা বলার চেয়ারম্যান বলবেন। ধূপগুড়ি পৌরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্য তথা তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক অরূপ দে বলেন, কোন বেআইনি কাজ করার সময় তৃণমূলের দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে কেউ করে না, যারা করেছে তারা দলের সঙ্গে কোনো ভাবে যুক্ত নয়।আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব এবং জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করবো।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct