সঞ্জীব মল্লিক, বাঁকুড়া, আপনজন: শস্য বিমায় ব্যাপক বেনিয়ম, ছাতনায় একটি গ্রামেই ২২ জন ভুয়ো কৃষককে শস্য বিমা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ।নিজস্ব জমি না থাকা সত্বেও ২২ জনকে ভুয়ো কৃষক হিসাবে দেখিয়ে শস্য বিমা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। অন্যদিকে গ্রামের প্রকৃত কৃষকদের জমির পরিমাণ কমিয়ে তাঁদের নামমাত্র শস্য বিমা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাঁকুড়ার ছাতনা ব্লকের হাউসিবাদ গ্রামের এই ঘটনা সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসেছে কৃষি দফতর। অভিযোগ পাওয়ার পরই শুরু হয়েছে তদন্ত। গত কয়েকবছর ধরে এ রাজ্যের কৃষকরা খারিফ ও রবি মরসুমে নিজেদের শস্য বিমা করার সুযোগ পাচ্ছেন। দুটি মরসুমে পৃথক পৃথক ভাবে নিজেদের চাষযোগ্য জমির বিবরণ সহ শস্য বিমা করার জন্য ব্লক স্তরের কৃষি দফতরে আবেদন জানান কৃষকরা। সেই আবেদনের তথ্য যাচাই করে কৃষি দফতর তা পাঠিয়ে দেয় বিমা সংস্থার কাছে । সেই তথ্যের ভিত্তিতেই রাজ্য সরকার বিমার প্রিমিয়াম জমা করে সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থায়। আবহাওয়া বা অন্য কোনো কারণে ফসল হানি হলে সরাসরি বিমা সংস্থা কৃষকের ব্যাঙ্ক একাউন্টে বিমার টাকা জমা করে। চলতি বছর আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় বাঁকুড়ার ছাতনায় মার খেয়েছে খারিফ মরসুমের আমন চাষ। বৃষ্টির অভাবে বহু জমিতে ধান রোপণের কাজই করতে পারেননি ওই ব্লকের কৃষকরা। সেই কারনে সম্প্রতি বিমা সংস্থার তরফে ছাতনা ব্লকের কৃষকদের শস্য বিমার টাকা পাঠানো শুরু হয়েছে। আর তার শুরুতেই বড়সড় বেনিয়মের অভিযোগ সামনে এসেছে। ছাতনা ব্লকের হাউসিবাদ গ্রামের কৃষকদের একাংশের অভিযোগ গ্রামের প্রকৃত কৃষকরা যে পরিমাণ জমির তথ্য আবেদনের সঙ্গে জমা দিয়েছিলেন তা ইচ্ছাকৃত ভাবে কমিয়ে দিয়েছে কৃষিদফতর। ফলে বিমার নামমাত্র টাকা পেয়েছেন তাঁরা। অন্যদিকে গ্রামের যে সমস্ত কৃষকদের নিজস্ব জমি নেই তাঁদের একাউন্টে মোটা মোটা অঙ্কের বিমার টাকা ঢুকছে। গ্রামবাসীদের দাবী যাদের জমি নেই তাদের আবেদনে হয় অন্যের জমি অথবা ভুয়ো জমির তথ্য দিয়ে বিমার মোটা অঙ্কের টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়দের দাবী শুধু একটি গ্রামেই ২২ জনকে ভুয়ো কৃষক হিসাবে দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা পাইয়ে দেওয়া হলে গোটা ছাতনা ব্লকে দুর্নীতির বহর কতটা তা আন্দাজ করাই মুশকিল। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই স্থানীয় বিডিও, জেলা শাসক এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। এরপরও ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আগামীতে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীরা যাদের ভুয়ো কৃষক বলে দাবী করেছেন তাদের কারো সাফাই তিনি ভাগচাষি আবার কারো সাফাই সবটাই চক্রান্ত। অভিযোগ পেতেই কৃষি দফতর তদন্ত শুরু করেছে। কৃষি দফতরের যুক্তি যাদের ভুয়ো কৃষক বলা হচ্ছে তারা কেউই ভুয়ো কৃষক নয়। তাদের কারো নিজস্ব জমি রয়েছে, কেউ ভাগচাষি। ভাগচাষিরা পঞ্চায়েতের কাছ থেকে সংশাপত্র সংগ্রহ করে তা বিমার আবেদনের সাথে যুক্ত করেছিলেন। এরপরও যদি কোনো গন্ডগোল হয়ে থাকে তাহলে তার দায় বিমা সংস্থার। একই দাবি ছাতনা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরও।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct