মহবুবুর রহমান : ‘তাদের হামলার একটি বড় কারণ মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক রাজনীতি। গত কয়েক বছরে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক নেতৃস্থানীয় দেশের সঙ্গে মিত্রতা ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে ইসরায়েল। নিজের নিরাপত্তা ও মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করার জন্য এই মিত্রতা ইসরায়েলের জন্য জরুরিও ছিল।’‘কিন্তু এই পদক্ষেপের প্রভাবে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক রাজনীতিতে যে সম্প্রতি একটি বড় পরিবর্তন ঘটে গেছে— তা আমরা কেউই লক্ষ্য করিনি; আর সেই পরিবর্তনটি হলো— মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের প্রভাব বাড়ছে। ফিলিস্তিনের জন্য স্বাভাবিকভাবেই তা অস্বস্তিকর ও আতঙ্কজনক।’‘আমরা মনে করি, ইসরায়েলের অবশ্যই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা, নিজেদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং জিম্মিদের ঘরে ফিরিয়ে আনার অধিকার রয়েছে; কিন্তু এখানেই তাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। ইসরায়েলকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করতে হবে।’‘আর সেই আইন বলছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই গাজায় নিরপরাধ বেসামরিকদের নিহত হওয়া ঠেকাতে হবে, হাসপাতালে হামলা করা থেকে বিরত থাকতে হবে, পশ্চিম তীরে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে এবং গাজায় ত্রাণ, চিকিৎসা উপকরণ ও মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দিতে হবে।’সম্প্রতি ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঋষি সুনাক। সোমবারের বক্তব্যে তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস আমাকে বলেছেন যে ফিলিস্তিনের লোকজন কী ভয়াবহ ভোগান্তির মধ্যে দিন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতিদিন প্রচুর বেসামরিক মানুষ সেখানে মারা যাচ্ছেন।’‘এখন সেখানে যুদ্ধ চলছে এবং আমরা সাধারণ ফিলিস্তিনিদের জন্য স্থল, জল ও আকাশপথে ত্রাণ সামগ্রীও পাঠাচ্ছি। কিন্তু এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়।’‘মধ্যপ্রাচ্যের ওই অঞ্চলে চিরস্থায়ীভাবে সংঘাত অবসানের একমাত্র উপায় দ্বিরাষ্ট্র সমাধান। এটাই একমাত্র পথ— যার মাধ্যমে সেই অঞ্চলের ইতিহাস এবং বসবাসকারী লোকজনের হৃদয়কে স্বীকৃতি ও সম্মান জানানোর মাধ্যমে আমরা স্থায়ীভাবে শান্তির পথে এগোতে পারি।’‘একটি নতুন ভবিষ্যৎ মধ্যপ্রাচ্যের জন্য অপেক্ষা করছে। সেই ভবিষ্যতের চাবি খুলবে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের মাধ্যমেই। তাই আমরা মনে করি, সংঘাতমুক্ত মধ্যপ্রাচ্যের স্বার্থেই দ্বিরাষ্ট্র সমাধান ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।’তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান মিমাংসা ও শান্তির পক্ষেই সওয়াল করে আসছেন।অতি সম্প্রতি তিনি বলেছেন,” ইসরাইল সন্ত্রাসী রাষ্ট্র,গাঁজায় যুদ্ধাপরাদ করছে।” আমাদের শ্রদ্ধাস্পদ প্রধানমন্ত্রী মোদিজী অতি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত গ্লোবাল সাউথ সামিটে “ইসরাইল -হামাস যুদ্ধে” অগণিত নিরীহ মানুষের প্রাণহানির তীব্র নিন্দা ও ধিক্ষার জানিয়ে যুদ্ধবিরতির জোর সওয়াল করেছেন।প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এমনি মত বিশ্বনেতাদের প্রায় সবারই।তবে সবথেকে ধিকৃত ও উদ্বেগের বিষয় হলো, এই যুদ্ধ দমনে মানবতা বিশ্বশান্তির কথিত ফেরিওয়ালা-মোড়লদের সাধ্যানুযায়ী তৎপরতা ও সক্রিয়তা খুব একটা দৃষ্টি গোচর হয় নি। সজাগ হয়েও নিদ্রাচ্ছন্নতার ভান করে মানবতার কবর রচনা করেই চলেছেন! আফসোস! সাবধান!সবার মনে রাখা চাই,”রিভেঞ্জ অফ নেচার” বলে একটা বিষয় রয়েছে।পরকালে সবাইকে জবাবদিহি হতে হবে ভুলে গেলে চলবে নাপরিশেষে বলতে চাই, বর্তমান পৃথিবীতে চলমান এই ছোট ছোট যুদ্ধক্ষেত্রগুলোই আগামীর পৃথিবীতে ভয়াবহ এক সমস্যা সৃষ্টি করবে, যার বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে পৃথিবীকে হয়তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নামে আরেকটা নরকীয় হত্যাযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করতে হবে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এক্ষুণি থামানো দরকার। ফিলিস্তিন-ইসরাইলকে শুধু সমর্থন নয়, তাদের নিজ নিজ অধিকার বুঝিয়ে দেয়া দরকার। মনে রাখতে হবে, ইসরাইল পারমাণবিক ক্ষমতাধর রাষ্ট্র। ইসরাইলকে এখন সম্পূর্ণ উৎখাত করে সমস্যা সমাধান করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। শুরুতে ৪৩ শতাংশ ভূমি দিয়ে ফিলিস্তিনকে যে ভূমিখণ্ড দেয়া হয়েছিল এখনও ফিলিস্তিনকে সেই ৪৩ শতাংশ ভূমিতেই স্বাধীন ফিলিস্তিন হিসেবে ঘোষণা দেয়া হোক। তাদের আরও ভাবা উচিত, সমাজ এক অখণ্ড জিনিস। অনেকগুলো উপাদান নিয়ে সমাজ গঠিত হয়। পৃথিবীর এক কোণের কোনো সমাজে বিপ্লব হলে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে এসে ধাক্কা লাগে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। পুরো পৃথিবীতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করে। জাতিসংঘের এখনই উচিত স্বাধীন ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের সদস্যপদ দেয়া। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘকে আরও শক্ত হস্তে দমন করতে হবে, অনেকটা কঠোর হতে হবে। পৃথিবীর মানুষ রাশিয়া-আমেরিকার ক্ষমতার দ্বন্দ্বে, রাজনৈতিক স্বার্থে রক্তারক্তি খেলা আর পুনরায় দেখতে চায় না। অনৈতিক ও অমানবিকভাবে অগণিত শিশু,কিশোর,আবাল, বৃদ্ধ বনিতার মৃত্যু মিছিল পৃথিবী বইতে ও সইতে অপারগ। এই রক্তারক্তি খেলা বন্ধ হোক। নির্বিচারে মানুষ হত্যা বন্ধ হোক।মানবতার জয় হোক। জয় হিন্দ।।
সমাপ্ত.....
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct