আপনজন ডেস্ক: পশ্চিমবাংলা শিল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গতবারের পরিসংখ্যানকে ছাপিয়ে গেল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুদিনের সপ্তম বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে বুধবার আলিপুরের ধনধান্য অডিটোরিয়ামে জানান, এবারের বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনে ৩.৭৬ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। ২০২২ সালের বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছিল ৩.৪২ লক্ষ কোটি টাকা। সূত্রের খবর, লগ্নি প্রস্তাবের বৃহৎ অংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে। এছাড়াও উৎপাদন, পরিকাঠামো, কৃষি ও কৃষিজ পণ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্কিল ডেভেলপমেন্ট, পর্যটন সহ একাধিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে। বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটের সমাপনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসব প্রস্তাব এসেছে। সম্মেলনে মোট ১৮৮টি সমঝোতা স্মারক (মউ) এবং লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তির ক্ষেত্রে গতবারকে ছাপিয়ে গেছে এবারের বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলন। গতবার বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনে ১৩৭টি মৌচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এবারের বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলন গতবারকে ছাপিয়ে যাওয়ায় স্বভাবতই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।সমাপনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এবারের বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনে বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশের পাঁচ হাজার প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। শুধুমাত্র ব্রিটেনে থেকে অংশ নিয়েছেন ৪০জন প্রতিনিধি। এই বিপুল সংখ্যক প্রতিনিধি অংশ নেওয়ায় তাদেরকে অভিনন্দন জানান মুখ্যমন্ত্রী। বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলন নিয়ে যে স্বপ্ন ছিল তা পূরণ হতে চরেছে বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।এদিন তার বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উপর জোর দেন। তিনি বলেন, শিল্পের বিকাশের কেন্দ্রবিন্দু হল গ্রাম। রাজ্যের গ্রাম জুড়েই রয়েছে প্রায় ৯০ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠী। তাই আজ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের দিন।এছাড়া তিনি জানান, রাজ্য চর্ম শিল্প ১০ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। সব মিলিয়ে দেশে যখন কর্মসংস্থানের হার ৪০ শতাংশ কমেছে তখন বাংলায় তা বেড়েছে ৪২ শতাংশ।’
এই সাফল্য বাংলার উন্নয়নের জোয়ারের জন্য হয়েছে বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।মুখ্যমন্ত্রী এদিন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করে বলেন, রাজ্যে শপিং মল হওয়ায় বহু মানুষ সেখানে যান। কিন্তু ছোট ছোট দোকানদারদের বিক্রিতে ভাটা পড়েনি। তাদেরও ভাল ব্যবসা হচ্ছে। তাই তাদের নিজেদেরকে ছোট বলে ভাবা উচিত নয়।মুখ্যমন্ত্রী তার বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় সরকারের চরম সমালোচনা করেন ক্যাশলেস লেনদেনে উৎসাহিত করার জন্য। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, ক্যাশলেস লেনদেন এখনও সেভাবে সর্বত্র পৌঁছয়নি। কারণ, সাধারণ মানুষ এখনও অভ্যস্ত হয়নি ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে। তাই ক্যাশলেস ইকোনিমির নামে ডিজিটাল ইন্ডিয়া গড়ার পরিকল্পনায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না। অথচ, গ্রামই কর্মসংস্থানে দিশা দেখায়। কৃষি থেকেই সৃজনশীলতা, দিশা দেখাচ্ছে গ্রাম। বাংলার শিল্পই আগামী দিনে দেশের সেরা শিল্পের ঠিকানা। এর পিছনে যুক্তি দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলায় দক্ষ শ্রমিকের যেমন অভাব নেই তেমনি তার ক্ষেত্র তৈরির ও পরিকাঠামোর জন্য প্রস্তুত রাজ্য। বাংলাই দেশের উত্তর পূর্বের গেটওয়ে, সরকার শিল্পবান্ধব। তাই পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ করে শিল্প তৈরির উপযুক্ত ঠিকানা হয়ে উঠছে।এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, অতিরিক্ত কর শিল্পপতিদের উপর বোঝা তৈরি করছে। শিল্পপতিদের উপর কেন্দ্রীয় এজেন্সি লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার অভিযান নিয়ে সুর চড়িয়ে মমতার অভিযোগ, শিল্পপতিদের গলার টুটি টিপে ধরার চেষ্টা করছে এজেন্সি। একই সঙ্গে, এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে কেন্দ্রীয় সরকার একটি দল পরিচালনা করবে ও রাজ্য সরকার অন্য রাজনৈতিক দল পরিচালনা করবে। এটা তো স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু আমি মনে করি মানুষের উন্নয়নের জন্য সব সময় সকলকে এক হয়ে কাজ করা উচিত। কেন্দ্রে যে রাজনৈতিক দল থাকুক না কেন রাজ্যে অন্য দল থাকলে কেন বঞ্চিত হবে তা বুঝতে পারি না। সবার একসঙ্গে কাজ করা উচিত।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct