আলম সেখ, কলকাতা, আপনজন: গতকাল নিজের ৫০ তম জন্ম বার্ষিকীতে সংবর্ধিত হলেন চিত্রকার মুজিবুর রহমান। দা বেঙ্গল সিনে সোসাইটি উদ্যোগে দা ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও উদযাপন করা হয় মুজিবুর রহমানের সাফল্য। মুজিবুর রহমানের জীবন যাত্রার কাহিনী শুনিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান, বরণ করে নেওয়া হয় অতিথিদের, হাতে তুলে দেওয়া হয় মুজিবুর রহমানের সাফল্যকে ঘিরে তৈরি হওয়া সংবর্ধনা - পঞ্চাশ বছর পূর্ণ পঞ্চাশটি তথ্যচিত্র সম্পূর্ণ, যার উদ্যোক্তা বেঙ্গল সিনে সোসাইটি। সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড: কে. এ মহিত তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে বলেন - চলচ্চিত্র গুণগত মান ও শিল্পকে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য দা বেঙ্গল সিনে সোসাইটি নানান ভূমিকা নিয়ে থাকেন ২০২৩ সালের ভূমিকা ছিল তথ্যচিত্রের উপর, তাই তথ্যচিত্র জগতের সাথে জড়িত সমস্ত চিত্রকারের মধ্যে থেকে আমাদের নির্বাচন কমিটি বেছে নেন মুজিবুর রহমানকে। মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে মুর্শিদাবাদের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন, ছোটো বেলা থেকেই নাট্যকার হওয়ার সপ্ন দেখেন কিন্তু রাজ্য সরকারের ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স করার পর ১৯৯৭ সালে টিউশনের ২৫০০ টাকা নিয়ে মুম্বই পাড়ি দেন তারপর শুরু হয় মুজিবুর রহমানের সাফল্যের সিঁড়ি, ২০০৭ সালে কলকাতায় ফিরে সম্পূর্ণ নিজের পরিচালনায় মুন্সি প্রেমচাঁদকে নিয়ে তথ্যচিত্র প্রকাশ করেন, শুরু হয় তথ্যচিত্র জগতের এই অধ্যায়। বেগম রোকেয়া, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম এই রকম ৫০ টি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেন মুজিবুর রহমান, জালিয়ানওয়ালাবাগ, পলাশীর যুদ্ধের চক্রান্তে নিয়ে তৈরি করেন তথ্যচিত্র যেন বাস্তব ফুটে উঠেছে সেই ঘটনা, যেটি ২০২৪ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে স্থান পেয়েছে, এছাড়াও তিনি মুজিবুর রহমানের অসংখ্য তথ্যচিত্র নিয়ে বিস্তারিত বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে নিয়ে তৈরি হওয়া তথ্যচিত্র যাদবপুর ইউনিভার্সিটি সহ আন্তর্জাতিক জায়গায় স্থান পেয়েছে।
যুক্তরাজ্য থেকে আগত এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটি অধ্যাপক নিল ফ্রেজার ও এডিনবার্গ নেপিয়ার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক বাশাবি ফ্রেজার অনুষ্ঠানে আসতে পেরে নিজেদের গর্বিত মনে করেন, মুজিবুরের প্রশংসায় অধ্যাপক বাশাবি ফ্রেজার বলেন রবীন্দ্রনাথ কে নিয়ে করা তথ্যচিত্র আন্তর্জাতিক জায়গায় স্থান অধিকার করে, এডিনবার্গ নেপিয়ার ইউনিভার্সিটিতে সেটি দেখানো হয় অতিথি আসেন কানাডা, জাপান থেকে। মুজিবুরের প্রশংসায় সভাকে মুখরিত করেন কলম পত্রিকার সম্পাদক আহমদ হাসান ইমরান। তিনি বলেন, মুজিবুর যেই সময়ে মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কলকাতায় এসেছে সেই সময়ে টিকে থাকাও মুস্কিলকর ছিল কিন্তু সে তার মনের জোরে সক্ষম হয়েছে আমরাও তার নানান কাজে যুক্ত থেকেছি। এছাড়াও তিনি ভারতবর্ষের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে বক্তৃতা দেন, মানুষকে আজ মানুষের দৃষ্টিতে দেখা হয় না ধর্মের দৃষ্টিতে দেখা হয় তাই ধ্বংসের পথে চলে যাওয়া ভারতবর্ষকে স্বপ্নের ভারত গড়তে মুজিবুর ভূমিকা নেবে এই আশা আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন।
সকলের থেকে প্রশংসিত হয়ে মুজিবুর অশ্রু ভেজা নয়নে তাঁর জীবনের দুঃখজনক ঘটনা গুলো বর্ননা করেন কিভাবে তিনি তাঁর পিতাকে কষ্ট দিয়েছেন, পরিবারের পাশে না দাঁড়িয়ে নিজের সপ্ন পূরণের লক্ষে মুম্বই চলে গেছেন, বিপদে কাকে পাশে পেয়েছেন, কারা কাজে সহযোগিতা করেছে সব কিছুই উল্লেখ্য করে একটাই দাবি করেন মুজিবুর রহমান। আমার জীবনে একটাই লক্ষ্য, জীবনের শেষ পর্যন্ত ও মৃত্যুর পরেও আমার নাম যেনো থাকে ফিল্মওয়ালা। তিনি উপস্থিত নতুন গতির সম্পাদক এমদাদুল হক নূর সাহেব কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন “২০০৩ সালে নূর সাহেব আমাকে নিয়ে সর্বপ্রথম লিখেছেন, সমাজের নজরে পরিচয় করিয়েছেন। উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ, লেখক, অধ্যাপক, সাহিত্যিক, সমাজকর্মীদের সম্মুখে মুজিবুর সেই সমস্ত ব্যক্তির নাম নেন যারা ওনার পাশে থেকেছেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবী হাজী মুহাম্মদ খলিল, অধ্যাপক আমজেদ হোসেন, শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী মুন্সী আবুল কাসেম, আমানত ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান শাহ আলম, লেখক আলিমুজ্জামান, প্রাক্তন ডব্লুবিসিএস অফিসার ইনাস উদ্দিন প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন প্রফেসর সুজিত বোস প্রাক্তন ভিসি, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। অনুষ্ঠানের সহযোগী আয়োজক সংস্থা হিসেবে ছিলেন দা বেঙ্গল প্রফেশনালস, বেঙ্গল এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, অল বেঙ্গল হোমিওপ্যাথি ডক্টরস ফোরাম ও হাসান মির্জা চেরিটেবল ট্রাস্ট। এদিন বেঙ্গল এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের তরফেও সংবর্ধনা দেওয়া হয় মুজিবুর রহমানকে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct