সাদ্দাম হোসেন, জলপাইগুড়ি, আপনজন: হাসপাতাল, কিন্তু দৃশ্যত যেন ভূতুড়ে বাড়ি। চারিদিকে একবারে স্তব্ধতা, কোথাও দেখা নেই চিকিৎসক ও নার্সদের। শুনশান হাসপাতাল চত্বর। বাড়ির কাছে বলে সেই হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছিলেন প্রসূতি। আচমকাই ওঠে প্রসব যন্ত্রণা। হাসপাতালের বেডে নর্মাল ডেলিভারি হয়ে যায় প্রসূতি। এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি। কিন্তু সদ্যোজাতর কান্নার আওয়াজ কিংবা প্রসূতির প্রসব যন্ত্রণার চিৎকার কোনওভাই পৌঁছয়নি চিকিৎসক, নার্সদের কানে। হাসপাতালের বেডেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকেন প্রসূতি। নাড়িও কাটা হয়নি । বেডেই মল, আর তাতে মেখেই পড়ে থাকে সদ্যোজাত। দেখা মিললো না চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীদের। পরে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু শিশুর। গুরুতর অভিযোগ ঘিরে শোরগোল ধূপগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে।ধূপগুড়ির বারোঘড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ভেমটিয়া এলাকার বাসিন্দা নুরিনা পারভিন। বৃহস্পতিবার প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ধূপগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি হন। রাতে প্রসব যন্ত্রণা বাড়তে থাকে।পরিবারের অভিযোগ, পাশে যখন চিকিৎসক ও নার্সদের থাকার কথা তখন প্রসূতি বিভাগে কাউকে পাওয়া যায়নি। উল্টে জুটেছে নার্সদের কটূক্তি। এরপর রোগীর আত্মীয় পরিজনদের চিৎকার চেচামেচিতে হাসপাতালের অন্যত্র থাকা নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীরা তখন ছুটে আসেন। কিন্তু ততক্ষণে সন্তানের জন্ম দিয়ে দিয়েছেন প্রসূতি।মল মূত্র মাখা অবস্থায় বেডের মধ্যেই পরে থাকে তারা এবং তার সন্তানের শ্বাসকষ্টও শুরু হয়ে যায়। কারণ শিশুর মুখ দিয়ে মল ঢুকে গিয়েছে। পরে নার্সরা এসে পরিস্থিতির সামাল দেন।রোগীর পরিবারের অভিযোগ, বেশ কিছুক্ষন ওই অবস্থায় পরে থাকায় অসুস্থ হয়ে পরে। এর পরেই কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশু ও তার মাকে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে রেফার করে । হাসপাতালে ভর্তি থাকা অন্তঃসত্ত্বা মহিলা স্বপ্না রায় বলেন, প্রায় রাতে নার্স চিকিৎসক তাদের থাকার জায়গায় থাকেন না। আজকে যখন মহিলার যন্ত্রনা শুরু হয় তখন পরিবারের লোকেরা চিৎকার চেচামেচি শুরু করে, তবে নার্স চিকিৎসক আসার আগেই বেডে সন্তানের জন্ম নেয়। অনেকক্ষণ নোংরা মাখা অবস্থায় পড়ে থাকে। নুরিনা পারভিনের শ্বশুর আব্দুল জলীল অভিযোগ করেন , যখন যন্ত্রণা ওঠে তখন হাসপাতালে চিকিৎসক নার্সদের ডাকতে গেলে আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। তারা না থাকায় বেডেই বাচ্চাটি জন্ম নেয়। প্রসবের পর সদ্যোজাত বেড থেকে নীচে পড়ে যায়। তাদের গাফিলতিতেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে আর কোনো উপায় না পেয়ে তাকে জলপাইগুড়ি রেফার করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সদ্যোজাত ও মা-কে প্রথমে জলপাইগুড়ির মাতৃমাতে রেফার করা হয়। সেখান থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয় সদ্যোজাতর।
সদ্যোজাতর বাবার অভিযোগ শামিম রাব্বানী বলেন, শুধু ডাক্তার ও নার্সের গাফিলতির জেরেই এই পরিণতি। জলপাইগুড়ি হাসপাতাল নিয়ে গেলে সেখান থেকে রেফার করা হয় উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শুক্রবার সকালে মারা যায়। আমার সন্তানের মৃত্যুর জন্য ধূপগুড়ি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য দপ্তর দায়ী। আমি থানায় অভিযোগ দায়ের করবো। প্রশ্ন হল এত কিছু হয়ে গেল। কোথায় ছিলেন কর্তব্যরত নার্স কিংবা চিকিত্সক? যদিও কর্তব্যে গাফিলতি ও কর্মী সংখ্যা কমের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। কর্তব্যরত চিকিৎসক ধৃতরঞ্জন ডিন্দা। তিনি বলেন, “নার্স সহ অন্যান্যরা ডেলিভারি ওয়ার্ডে কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তারা খবর পাওয়া মাত্রই ছুটে যান। শিশুটির শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কারণ তার মুখ দিয়ে মল ঢুকে গিয়েছে।” সদ্যোজাতকে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল স্থানান্তরিত করা হয়।ধূপগুড়ি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অঙ্কুর চক্রবর্তী বলেন, আমি বাইরে রয়েছি তবে কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি নার্সরা অন্য একটি অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। শিশুটি বেডের মধ্যে জন্মেছে জানতে পেরেছি। শ্বাসকষ্ট হচ্ছিলো বলে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল রেফার করা হয়। তবে মৃত্যু হয়েছে শিশুটির সেই বিষয়টি আমার জানা নেই খোঁজ নিয়ে দেখছি। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, সদ্যোজাতর শুধু মাথা বেরিয়ে এসেছিল! যেখানে প্রসূতি হাসপাতালে ভর্তি। সেখানে নার্স-চিকিত্সক থাকা সত্বেও এমন ঘটনাই বা কি করে ঘটে? কেন যন্ত্রণার পরও প্রসূতিকে লেবার রুমে নিয়ে যাওয়া হল না? উত্তরগুলো দেবে কে?
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct