আর্যাবর্তের হিন্দি বলয়ের দুই প্রধান রাজ্য মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড় বিধানসভার ভোট গ্রহণ আজ শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের ভোট হবে এক দফায়। মাওবাদীদের দুর্গ বলে পরিচিত ছত্তিশগড়ে দ্বিতীয় দফার ভোট হচ্ছে। প্রথম দফার ভোট হয়েছিল ৭ নভেম্বর। মিজোরাম রাজ্যে বিধানসভার ভোটও ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজস্থানের ভোট হবে ২৩ নভেম্বর। তেলেঙ্গানার ভোট ৩০ নভেম্বর। এই পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো দেশ। লিখেছেন সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়।
আর্যাবর্তের হিন্দি বলয়ের দুই প্রধান রাজ্য মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড় বিধানসভার ভোট গ্রহণ আজ শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের ভোট হবে এক দফায়। মাওবাদীদের দুর্গ বলে পরিচিত ছত্তিশগড়ে দ্বিতীয় দফার ভোট হচ্ছে। প্রথম দফার ভোট হয়েছিল ৭ নভেম্বর।মিজোরাম রাজ্যে বিধানসভার ভোটও ৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজস্থানের ভোট হবে ২৩ নভেম্বর। তেলেঙ্গানার ভোট ৩০ নভেম্বর। এই পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে আছে পুরো দেশ। কারণ, আগামী বছর এপ্রিল-মে মাসে লোকসভার ভোটের আগে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে এটাই হতে চলেছে শেষ শক্তি পরীক্ষা। সেই অর্থে লোকসভা নির্বাচনের আগে এই পাঁচ রাজ্যের ভোট যেন মহারণের আগে সেমিফাইনাল। ৩ ডিসেম্বর জানা যাবে, গো–বলয়ে ক্ষমতাসীন বিজেপির দাপট কমে বিরোধীদের শক্তিবৃদ্ধি হচ্ছে কি না।মধ্যপ্রদেশের নির্বাচন বিজেপির কাছে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এ রাজ্যে ১৮ বছর ধরে তারা ক্ষমতায়। এ সময়ের মধ্যে মাত্র দেড় বছর তাদের ধারাবাহিকতায় থাবা মেরেছিল কংগ্রেস। ২০১৮ সালের ভোটে কংগ্রেস ক্ষমতা দখল করলেও দল ভাঙিয়ে বিজেপি সেখানে আবার শাসক হয়ে যায়। ধারাবাহিকতা ধরে রাখা বিজেপির পক্ষে জরুরি বলেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ রাজ্যে ৪০টির মতো জনসভা ও রোড শো করেছেন। শুধু তা–ই নয়, ক্ষমতা ধরে রাখার বাসনা ও ঐক্যবদ্ধ কংগ্রেসের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় বিজেপি ওই রাজ্য থেকে নির্বাচিত ৭ সংসদ সদস্যকে ভোটে লড়তে বাধ্য করেছে। তাঁদের মধ্যে তিনজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা নিশ্চিন্তে নেই। গত চারবারের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান জনপ্রিয় হলেও তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বিজেপি এবার আগাম চিহ্নিত করেনি। শুধু এই রাজ্য নয়, পাঁচ রাজ্যেই তাঁরা ভোটে লড়ছেন প্রধানমন্ত্রী মোদির নামে। সে তুলনায় এই প্রথম কংগ্রেসকে জোটবদ্ধ লাগছে। দিগ্বিজয় সিং ও কমলনাথ কাজ করছেন হাতে হাত মিলিয়ে। খাড়গে-রাহুল-প্রিয়াঙ্কা একের পর এক জনসভা করেছেন। প্রতিটি জনমত সমীক্ষায়ও রয়েছে পালাবদলের ইঙ্গিত।মধ্যপ্রদেশ ভেঙে গড়ে উঠেছিল ছত্তিশগড়। সেখানে শাসনক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস। এবারও তা বজায় রাখতে মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল সক্রিয়। বিজেপি এ রাজ্য দখলে উঠেপড়ে লাগলেও জনমত সমীক্ষা এখনো কংগ্রেসের পক্ষে। তাদের একটাই ভয়, দুই পক্ষের আসনপ্রাপ্তির ব্যবধান কম হলে বিজেপি ওই রাজ্যে দল ভাঙানোর খেলা খেলে মধ্যপ্রদেশের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে ফেলবে না তো!
মধ্যপ্রদেশ বিধানসভার মোট আসন ২৩০, ছত্তিশগড়ের ৯০। কর্ণাটকের মতো মধ্যপ্রদেশেও কংগ্রেসের হাতিয়ার বিজেপি শাসনামলের ‘লাগামছাড়া দুর্নীতি’। সেই সঙ্গে সাধারণের মন জয়ে কংগ্রেস নানা ধরনের জনমুখী প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। রাহুল গান্ধীসহ কংগ্রেসের সবাই বারবার বলছেন, তাঁরা চান সাধারণ মানুষের হাতে টাকা দিতে, যাতে তাঁদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। সেটা বাড়লেই অর্থনীতি ভালো হবে। দ্বিতীয়ত, কংগ্রেস তার প্রচারে বলছে, প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য একটাই—আদানি-আম্বানিদের মতো হাতে গোনা কয়েক শিল্পপতির সুরাহা করা। কংগ্রেস চায় কৃষক-শ্রমিক-মজুরের মঙ্গল। সেই লক্ষ্যে কংগ্রেস নারীদের হাতে মাসে দেড় হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভর্তুকি দিয়ে ৪০০ টাকায় রান্নার গ্যাস বিক্রির কথা জানিয়েছে। কৃষিঋণ মওকুফের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং বলেছে, ক্ষমতায় এলে রাজ্যে জাত গণনা করা হবে। বিজেপির হাতিয়ার ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকার, মোদি-মাহাত্ম্য ও উন্নয়ন। কিন্তু শেষবেলায় তারাও দিয়েছে নানাবিধ জনমুখী প্রতিশ্রুতি, যার একটা ‘লাডলি বেহনা’ প্রকল্প। এর মারফত কংগ্রেসের মতো শিবরাজ সিং চৌহানও নারীদের হাতে টাকা দিতে চেয়েছেন। কৃষিপ্রধান ছত্তিশগড়ে বিজেপির অবস্থান তুলনামূলক দুর্বল। এ ছাড়া ওই রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংয়ের ওপরেও বিজেপির বর্তমান নেতৃত্বের বিশেষ ভরসা নেই। কৃষকের সমস্যা সেখানে প্রধান ইস্যু। সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই শিবিরই কৃষিপণ্যের বাড়তি সহায়ক মূল্য নির্ধারণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কংগ্রেসের বাড়তি প্রতিশ্রুতি, আদিবাসী–অধ্যুষিত এ রাজ্যের গরিবদের জন্য রাজ্য সরকার ১০ লাখ বাড়ি নির্মাণ করবে। আর বিজেপি বলছে, তারা ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’র আওতায় ১৮ লাখ ঘর তৈরি করবে। মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ের ছয় দিন পর ভোট হবে রাজস্থানে। সেখানে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ক্ষমতার বদল হয়। সেই নিরিখে এবার কংগ্রেসকে হটিয়ে বিজেপির ক্ষমতা দখল করার কথা। জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী সেই লক্ষ্যে তারা কিছুটা এগিয়েও। কিন্তু রাজস্থানেও বিজেপি ভোটের আগে জানায়নি মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন। মরুরাজ্যে বিজেপির সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বসুন্ধরা রাজে। বিজেপি প্রাথমিকভাবে তাঁকে কোণঠাসা করেও পরে তাঁকে ও তাঁর সব অনুগামীকে টিকিট দিয়েছে। কিন্তু প্রচারে তিনি ব্রাত্য। জনপ্রিয় ধারণা, হিন্দি বলয়ের এই তিন রাজ্যে বিজেপি জিতলেও মুখ্যমন্ত্রী করা হবে নতুন কাউকে। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও রাজস্থানে বিজেপি শাসকের মুখ বদলে দেবে।লক্ষণীয়, এই তিন রাজ্যের জনপ্রিয় ও প্রতিষ্ঠিত তিন নেতা নেত্রী শিবরাজ সিং চৌহান, বসুন্ধরা রাজে ও রমন সিং বিজেপির পুরোনো ঘরানার। প্রত্যেকেই বাজপেয়ী-আদভানিকে তাঁদের নেতা বলে মেনে এসেছেন। অন্য অর্থে এই তিনজনের কেউই নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহর অন্ধ অনুগামী নন। এই তিন রাজ্যে শাসকের মুখ বদলাতে পারলে দেশের সব রাজ্যেই মোদি-শাহর একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম হবে।
সৌ: প্র: আ:
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct