আপনজন ডেস্ক: ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের যুদ্ধ শুরুর পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় সৌদি আরব, আমিরাতসহ আরব দেশগুলো সহায়তা কার্যক্রম আগের চেয়ে বহুগুণ বাড়িয়েছে। অন্য দিকে ইসরায়েলের হামলার সমালোচনা করায় পূর্বঘোষণা ছাড়াই পশ্চিমা দেশ ও দাতা সংস্থাগুলো গাজা ও পূর্ব তীরে আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম স্থগিত করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিও)-এর তথ্যমতে অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি, সুইডেনসহ বেশ কিছু দেশ ফিলিস্তিনে সহায়তা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া স্থগিত করেছে। প্রায় ১৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ সহায়তা বন্ধ হওয়ায় এখন জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সরকারসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন তীব্র আর্থিক সংকটে পড়ছে।নভেম্বর মাস শুরুর পর থেকে সৌদি আরব গাজাবাসীর জন্য জাতীয় উদ্যোগে জরুরি তহবিল সংগ্রহ শুরু করে এখন পর্যন্ত ১৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেছে। গত ছয় দিনে খাদ্য, আশ্রয়ণ সামগ্রীসহ ছয়টি ত্রাণবাহী বিমান পাঠিয়েছে দেশটি। তা রিয়াদের কিং খালিদ বিমানবন্দর থেকে মিসরের আল-আরিশ বিমানবন্দর পৌঁছে। সেখান থেকে রাফাহ ক্রসিং হয়ে ত্রাণসামগ্রী গাজার বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য পাঠানো হয়।তা ছাড়া জাতিসংঘ পরিচালিত ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ত্রাণ সংস্থাকে (ইউএনআরডাব্লিওএ) জরুরি সহায়তার অংশ হিসেবে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছে সৌদি আরব। এই অনুদান দিয়ে উদ্বাস্তুদের মধ্যে খাদ্য, আশ্রয়, অখাদ্য আইটেম, ওষুধ, পানি ও স্যানিটেশন সরবরাহ করা হবে। মূলত সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান ও যুবরাজ মোহাম্মদের নির্দেশনায় কিং সালমান হিউম্যানিটারিয়ান এইড অ্যান্ড রিলিফ সেন্টারের তত্ত্বাবধানে এসব সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।এদিকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখা আরব আমিরাতও গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা বাড়িয়েছে।
উপসাগরীয় দেশটি এখন পর্যন্ত ৬৪টি ত্রাণবাহী বিমান পাঠিয়েছে। তা ছাড়া গাজা উপত্যকায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিতে ১৫০ শয্যার একটি ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণে কাজ করছে দেশটি। এতে সার্জারি, অর্থোপেডিক্স, শিশুরোগ, গাইনিকোলজি, অ্যানেসথেসিয়াসহ নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট থাকবে।এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বহনকারী ছয়টি বিমান পাঠিয়েছে তারা। যখন গাজার নাসর, শিফা, কুদসসহ বড় বড় হাসপাতাল খালি করে বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে, তখন স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র কেন্দ্র হিসেবে এ ধরনের ছোট হাসপাতালের গুরুত্ব রয়েছে।আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের নির্দেশনায় দেশটি মানবিক উদ্যোগ ‘গ্যালান্ট নাইট থ্রি’ এর অংশ হিসেবে সার্বক্ষণিক কূটনৈতিক কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ করছে। গত ১১ নভেম্বর সৌদি আরবের রিয়াদে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) ও আরব লীগের জরুরি ইসলামী শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোকে ফিলিস্তিনিদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে বলা হয়। যদিও নৃশংস যুদ্ধ এবং নারী ও শিশুদের হত্যাকাণ্ড বন্ধে সম্মেলনটি প্রত্যক্ষভাবে বড় ভূমিকা রাখেনি, তবে এর পর থেকেই ব্যাপকভাবে আরব দেশগুলোর সহায়তা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct