নিজস্ব প্রতিনিধি, বসিরহাট, আপনজন: বিশ্বকাপে নেটে বল করে প্রশংসিত হয়েছেন। পাক ক্রিকেটার বাবর আজম জিন্নার বোলিং-এ মুগ্ধ হয়ে জার্সিও উপহার দিয়েছেন। আঙুলের চাপে যেন স্বপ্নরাও আন্দুলিত হয়। ক্রিকেট বিশ্বকাপের মাঠে নেট বোলিং-এ মাঠ কাঁপাচ্ছেন উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বসিরহাটের বিবিপুরের হত দরিদ্র পরিবারের ছেলে জিন্না মন্ডল। বাবা পেশায় জেলে কোন রকমে অভাব অনটনে সংসার চালান। অভাবী সংসারে জিন্নার ক্রিকেটের হাতেখড়ি গ্রামের রাস্তায় পড়ে থাকা মুচি ডাব নিয়ে। সেখান থেকে টেনিস বলে হাত পাকিয়ে পাড়ার মাঠে খেলা শুরু। এরকম গ্রামে না আছে ভালো কোচ না ক্রিকেট কোচিং সেন্টার। টেনিস বলে ভাল খেলেই এলাকার এক ক্রিকেটপ্রেমীর নজরে পড়ে জিন্না। তার খেলা দেখে বিনা পয়সায় খেলা শেখাতে রাজি হন কোচেরা। এখন সে সিএবি ক্রিকেট লিগে খেলছে। ক্রিকেট ময়দানে জিন্নাকে গড়ে উঠতে সাহায্য করছেন বাংলার ক্রিকেটার সৌরভ সরকার। নিজের বড়ি থেকেই কাকড়া মির্জানগর স্টেশন দূরত্ব পায় ১০ কিলোমিটার। ভোর রাতেই গোটা গ্রাম তখন শুনশান। সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল বছর একুশের ছেলেটা। রাতের বেলা কেউ এখন হুড়মুড়িয়ে সাইকেল চালানো দেখে অবাক হন না। সকলেই জানেন, জিন্না সাইকেল চালিয়ে ফার্স্ট ট্রেন ধরতে ছুটছে। সাইকেল চালিয়ে স্টেশন, অতঃপর সেখান থেকে কলকাতা। অনুশীলন শেষে বাড়ি ফিরে জিন্না জানলার ছেঁড়া পর্দার ফাঁক দিয়ে ওইটুকুই আশার আলো ঘরের মেঝেয় এসে পড়েন।
কলকাতা ময়দানের দ্বিতীয় ডিভিশন ক্লাব সেন্ট্রাল ক্যালকাটা ক্লাবের বছর একুশের ছেলেটি পাকিস্তানের নেটে বল করার সুযোগ পেয়ে চমকে দিয়েছে বাবর আজমদের। আনকোরা বোলারের সামনে পাক ব্যাটসম্যানরা সমস্যায় পড়েন। বোলিং মুগ্ধ করলেও বল করার টেকনিকে কিছু ত্রুটি ছিল জিন্নাহর। সেটাই শুধরে দেন মর্নি মর্কেল। আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেটারদের পরামর্শে উদ্বুদ্ধ। নেট বোলার হিসেবে জিন্নাহর ইডেনে বোলিং করার অভিজ্ঞতা নতুন নয়। এর আগে আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালোরের নেটেও বল করেছিলেন। বিশ্বকাপের মঞ্চে ইডেনে নেটে বল করে প্রশংসিত হওয়ার পরে বাংলার সিনিয়র ক্রিকেট দলের প্র্যাকটিসেও নেট বোলার হিসেবে ডাক পেয়েছেন। সেখানেও প্রশংসিত হয়েছে তাঁর বোলিং। ছোটোবেলা থেকেই জিন্না কখনও স্বচ্ছ্বল সংসার দেখেনি। বাবা-মা, দুই ভাই এবং এক বোনকে নিয়েই তাঁর গোটা পৃথিবী। সংসারে যে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, সেকথা বলাই বাহুল্য। তবে বাড়িতে থাকলে বাবার সঙ্গে মাঝেমধ্যেই মাছ ধরতে যায় জিন্নাও। জিন্না খেলার জন্য পাশে পেয়েছেন এলাকাবাসীদের। স্থানীয় বাসিন্দা কাজি মাহমুদ হাসান বলেন, “ জিন্নার গায়ে একদিন দেশের জার্সি গায়ে উঠুক, গ্যালারিতে দেশের পতাকা হাতে জিন্নার খেলা দেখতে চাই আমরা।” জিন্নার ২২ গজের লড়াই হয়ত এখনও সেভাবে প্রচারের আলো পায়নি, কিন্তু তাঁর অদম্য জেদ প্রতিদিন তাঁতিয়ে তুলছে। বাঁধা পেরিয়ে সাফল্যের পথে হাঁটা শুরু। তবে ‘গরীবীর’ কাছে হার মেনে কখনই তিনি থেমে যাননি। বুকে জেদ ও চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। জিন্নার গায়ে একদিন দেশের জার্সি গায়ে উঠুক, গ্যালারিতে দেশের পতাকা হাতে জিন্নার খেলা দেখতে চায় এলাকাবাসী থেকে বসিরহাটের সাধারণ মানুষ।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct