দেশ-বিভাগ পরবর্তী পশ্চিমবাংলার একটি শক্তিধর পরিবার থেকে উত্থিত খাজিম আহমেদ প্রায় ছয় দশক ধরে নিরলস বৌদ্ধিক চর্চা আর সাহিত্য নির্মাণে সম্পৃক্ত হয়ে রয়েছেন। তাঁর ‘চেকার্ড’, আর ‘মাভেরিক’ জীবনের বর্ণময় পরিচয় বর্তমান আলোচনাটির মারফত উত্থাপন করা হচ্ছে। অনেকেই তাঁকে এই বঙ্গের বাঙালি মুসলমানদের মর্যাদার অন্বেষক হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। তাঁর অগণন রচনার অনিঃশেষ গ্রহণযোগ্যতা উভয়বঙ্গে তাঁকে বিশিষ্ট করে তুলেছে।
(২)
শুরু হল কথা বলা
আমার প্রিয় সাহিত্যপত্র ‘অন্তিক’-এর কৃষ্টিবান যুবা সম্পাদক পরম প্রিয় রাজন গঙ্গোপাধ্যায়-এর অভিপ্রায় হচ্ছে শহর বহরমপুর যেন স্বয়ং একটি চরিত্র হয়ে ওঠে। উপরন্তু লেখকের স্মৃতি-সত্তা বিস্মৃতির বিষয়টিও যেন এই শহরের দলিল হয়ে ওঠে। সেই বাবদেই এই আলোচনাটির অবতারণা।
পাশ্চাত্যের ইংরেজি সাহিত্যে এতদবিধ আলোচনার যেন অন্ত নেই। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে এমন রেওয়াজ বেশি নেই। আগ্রহ উদ্দীপক বিষয় এই যে উনিশ শতকের বাঙালি জীবনের আঁতের খবর, শহরের জীবনের, ব্যক্তি জীবনের সম্পৃক্ততা নিয়ে বহু তীর্যক রচনা রয়েছে এবং সেগুলো বাংলাভাষা ও ইংরেজি ভাষায় অনুদিত হয়ে ইতিহাসের উপাদান হয়ে রয়েছে। বেশ কিছু আত্মস্মৃতিও রয়েছে। সে সবের পাঠ ‘Bliss’-এর পর্যায়ে পড়ে।
স্থান মাহাত্ম্য এবং লেখক জীবনের সঙ্গে সম্পর্কের নজির দেওয়া যাক: চার্লস ডিকেন্স কেন্ট এবং হায়াম নামক দুটো জনবসতি সম্পর্কে এমন হৃদয়স্পর্শী বর্ণনা করেছেন যে তা লেখকের সঙ্গে বসতির, বসতির সঙ্গে লেখকের জীবন একসঙ্গে মিলে মিশে গেছে। ‘A Tale of two Cities’ তো কিংবদন্তি বা ‘লেজেন্ড’-এর পর্যায় পড়ে। স্মর্তব্য হেমিংওয়ের জীবনের সঙ্গে তাঁর প্রাণের শহর পাম্পলোনা কি আলাদা করা যায়? পাম্পলোনার সাংস্কৃতিক জীবনের সঙ্গে তাঁর প্রাণের শহর পাম্পলোনা কি আলাদা করা যায়? পাম্পলোনার সাংস্কৃতিক জীবন পর্যন্ত হেমিংওয়ের জীবন দর্শনের দ্বারা প্রভাবিত। বহু ‘সাবুত’ হাজির করা যেতে পারে কিন্তু আমাদের উদ্দেশা বা ‘মকসদ’ সেটি নয়। একটি বিশেষ সাহিত্য নির্মাণের প্রবণতার কথা বলতে চাইলাম মাত্র।
বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষজনের মধ্যে সম্প্রীতি সঞ্চারের অগ্রচারী সৈনিক অধ্যাপক রেজাউল করীমের জন্যই শহর বহরমপুর আমার স্মৃতি-সত্তায় আমূল প্রোথিত হয়ে গেছে। শহরের বিদ্বৎসমাজের কাছে আমার মতো অকৃতী অধমকে এক লহমায় গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিলেন মাত্র একটি করে চিঠির মাধ্যমে। যে সমস্ত মান্যজনের কাছে আমাকে পাঠিয়েছিলেন, তাঁরা ছড়িয়েছিলেন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। ঐতিহাসিক কাশিমবাজার, সৈয়দাবাদ, খাগড়া, বহরমপুর, গোরাবাজার ইত্যাকার অঞ্চলের নানা মহল্লায়। এঁদের মধ্যে বিশিষ্টরা হলেন ‘জনমত’ সাপ্তাহিক সাহিত্য-সংবাদ সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকার সম্পাদক রাধারঞ্জন গুপ্ত, ঈপ্সিতা গুপ্ত, ‘গণকণ্ঠ’ সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক প্রাণরঞ্জন চৌধুরী, ‘অনীক’ পত্রিকার তেজি, জেদি সম্পাদক দীপংকর চক্রবর্তী। তিনি মুর্শিদাবাদ ‘বীক্ষণ’ নামক পত্রিকারও প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, ‘মুর্শিাদবাদ খবর’ পত্রিকার পরিচালকমণ্ডলীর সদস্য বিমল চক্রবর্তী ইত্যকার ব্যক্তিত্ব। কলকাতার বিভিন্ন দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত আমার নানান লেখাপত্তর সম্পর্কে ওয়াকিফহাল ছিলেন সৌম্যেন্দ্রকুমার গুপ্ত। তিনি নিজেই ঈপ্সিতা গুপ্তর মাধ্যমে আমাকে তাঁর ‘আত্মজের কুলুঙ্গি’-তে বসিয়ে দিয়েছিলেন। এক অতলান্তিক আর অনিঃশেষ স্নেহ-ভালোবাসায় আমি আজও কৃতজ্ঞ হয়ে রয়েছি। সেই কৃতজ্ঞতা চিরন্তন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বর্ণিত ‘বিধাতা-পুরুষ’-ই জানেন সৌম্যেনদা আমাকে এত স্নেহ কেন দিয়েছেন।
১৯৬৫ থেকে ১৯৭৫-এর জীবন আমাকে সতত তেড়েফুঁড়ে বেড়িয়েছে। স্বভাবতই শহর বহরমপুরকে আপন করতে আমাকে মনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে। এ বাবদে আমাকে অভিভাবকের মতো আগলে রেখেছিলেন অধ্যাপক রেজাউল করীম, রাধারঞ্জন গুপ্ত, ঈপ্সিতা গুপ্ত, প্রাণরঞ্জন চৌধুরী, গীতা চৌধুরী, দীপংকর চক্রবর্তী, আবুল হাসনাত আর মজিবর রহমান। গত শতকের আটের দশকে ‘জনমত’ পত্রিকার দায়িত্ব প্রায় আমার ওপর ছেড়ে দিয়েছিলেন। এমন পরম সৌভাগ্যের বিষয় খুব কমই ঘটে থাকে। পরম শ্রদ্ধেয় রাধারঞ্জন গুপ্ত ‘গোষ্ঠদা’ নামে ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। বিভাগ পরবর্তী পশ্চিমবালায় তিনি একমাত্র বাঙালি হিন্দুজাত সম্পাদক যিনি ‘জনমত’ পত্রিকার ‘ইদ সংখ্যা’ প্রকাশ করেছিলেন। অতিথি সম্পাদক ছিলেন নুরুল ইসলাম মোল্লা। হুগলির সন্তান। জঙ্গিপুর কলেজে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন। অকালপ্রয়াত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রখ্যাত অধ্যাপক ও সাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রিয় ছাত্র ছিলেন। শহর বহরমপুরের গৌরবের অজস্র গল্প গোষ্ঠদার কাছে থেকে শুনেছি, জেনেছি, পড়েছি। এই শহরের ‘যথার্থ বড়ো মানুষ’ সম্পর্কে চর্চা করেছেন অধ্যাপক সৌম্যেন্দ্রকুমার গুপ্ত। সে সব মূল্যবান সম্পদ আমার মধ্যেও সঞ্চারিত করেছিলেন। ড. রামদাস সেন (১৮৪৫-৮৭), (‘বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ’-এর অন্যতম ট্রাস্টি), আইনবেত্তা রাধাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, ঐতিহাসিক রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায়, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতিবিদ এবং সাম্প্রতিক গবেষণায় ‘ecological pioneer’ হিসাবে স্বীকৃত রাধাকমল মুখোপাধ্যায় (১৮৮৯-১৯৬৮) বিপুল পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। এই চারজন কৃতী পুরুষ বিশ্বের যে কোনো প্রথম শ্রেণির বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করার তুলনারহিত ক্ষমতা রাখতেন। বস্তুত এমন কৃতী সন্তান শহর বহরমপুরের অনেক মর্যাদা বৃদ্ধির দাবিদার। রামদাস সেন তো শহর বহরমপুরের প্রথম আন্তর্জাতিক বাঙালি।
অধ্যাপক রেজাউল করীম, রাধারঞ্জন গুপ্ত, শ্রদ্ধাভাজন শশাংকশেখর সান্যাল, সর্বোপরি মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও স্মৃতির কিছু কথা আলোচনার মধ্যে নিয়ে আসা হল। মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্কের বিষয়টি কলকাতাকেন্দ্রিক কিন্তু বহরমপুরের অল্প স্মৃতি এখানে তুলে আনা হচ্ছে: মহাশ্বেতা দেবী গত শতকের আটের দশকে প্রতি বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে লালদিঘি পাড়ার পিতৃ নিবাসে আসতেন। মণীশ ঘটক তথা যুবনাশ্বের স্মরণে বাড়িতে পরিবারের প্রায় পুরো সদস্যবর্গ হাজির থাকতেন। কঞ্চিদি, সারিদি, অপলাদি, সোমাদি, টান্টুদা কঞ্চিদির ‘হ্যাজব্যান্ড’ সমীর দাশগুপ্ত— সবাই। নবারুণ ভট্টাচার্যকে আমি লালদিঘির বাড়িতে কখনও দেখিনি। সপ্তাহ ধরে হাঁস কিংবা দেশি মুরগির ঝাল ঝোল আর ‘চাউলমণি’ চালের গরম ভাত— এই ছিল বাঁধা মেনু। টান্টুদা (মৈত্রেয় ঘটক) বলতেন, ‘নো ঝুট ঝ্যামস, ওনলি চিকেন’। সঙ্গে কড়া পানীয়। সক্কালবেলায় নির্ভেজাল পান্তাভাত। সে ভাত ভেজান থাকত সারারাত মাটির হাঁড়িতে। খাওয়া হত খুবই নরম করে সেদ্দ করা লালগোলার বড়ি দিয়ে। লবণ বা নুনের পরিমাপটা একটু কড়া থাকত। দিদি, দাদা, জামাইবাবুরা আসার আগেই এসবের ব্যবস্থা করে রাখতেন গোরাবাজারস্থ জমিদারিবাসীন বিজনদা অর্থাৎ কিনা বিজন ভট্টাচার্য। এই বিজন ভট্টাচার্য হলেন মণীশ ঘটক প্রতিষ্ঠিত ‘বর্তিকা’ পত্রিকার ম্যানেজার। মহাশ্বেতাদির সম্পাদনা কালে পত্রিকার প্রকাশক। দিদির বিশ্বস্ত সহযোগী। ‘বর্তিকা’ যেহেতু ‘ভ্রাতৃসংঘ’ এর কাগজ ছিল একদা সেই হেতু ক্লাবের সঙ্গে সংযোগ রক্ষার দারিত্ব ছিল বিজন ভট্টাচার্যের ওপর। বিজনদা অকৃতদার ছিলেন।
শহর বহরমপুরের সংস্কৃতি-মনস্ক নারী-পুরুষ মহাশ্বেতাদির সঙ্গে অবশ্যই দেখা করতে আসতেন। এটাই ছিল দস্তুর। প্রায় প্রত্যেক আগন্তক সন্দেশ বা ছানাবড়া আনতেন। ঘটক পরিবারের কেউই মিষ্টি পছন্দ করতেন না। শুধুমাত্র সোমাদি অল্পস্বল্প খেতেন। অতিথিদের মধ্যেই সন্দেশ বা অন্যবিধ মিষ্টি বিতরিত হত। প্রতিমা (আমার স্ত্রী)-র জন্য একটি পুরো প্যাকেট বরাদ্দ থাকত। দেওয়ার সময় মহাশ্বেতাদি বলতেন, এটি তোমার জন্য নয়। এটি আমহার্স্ট স্ট্রিটের কন্যাটির জন্য। চিনি ছাড়া ‘খুশবু’-দার গোলাবি চা-এর চল ছিল ও বাড়িতে। রান্না করতেন একটি শক্তপোক্ত সাঁওতাল কন্যা। থাকতেন বহরমপুর ‘সম্রাট হোটেল’-এর পশ্চিমদিকের একটি ছোট্ট পাড়ায়। এঁর বোন বালিগঞ্জ গার্ডেন্স/ বালিগঞ্জ স্টেশন রোডে মহাশ্বেতা দেবীর ফ্ল্যাটের প্রাত্যহিক কাজকর্ম সামলাতেন। ‘লাঞ্চের’ পর মিষ্টিপাতা পান ছিল দিদির খুবই প্রিয়। পান সংগ্রহের দায়িত্ব ছিল এই স্নেহভাজনের ওপর। ‘দুলাল কালী ভান্ডার’ (গোরাবাজার) থেকে পান নিতে হত। পানের নির্মাতা কল্যাণ দত্ত জানত, কোন জাতীয় জর্দা খান দিদি। সোমাদি আর অপলাদি সাদা পান খেতেন। কঞ্চিদি একটি জর্দা পাঁচ কৌটো করে নিয়ে যেতেন। একবার জিজ্ঞেস করলাম, দিদি তোমার যোধপুর পার্ক-এর পাড়াতেই তো পেতে পারো বা গড়িয়াহাট মোড়ে। স্মিত হেসে বললেন, মহামান্যা কমলা বসুকে দেবার সময় বলব এগুলো শহর বহরমপুরের একটি বিশেব দোকান থেকে আপনার জন্য এনেছি। খুশবন্ত দিং-এর জবানিতে ‘ক্যাডিলাক কমুনিস্ট’ জ্যোতি বসুর স্ত্রী-ই হচ্ছেন সম্মানিতা কমলা বসু। চুরুট বা সিগার পান করতেন সমীরদা। সেসব চৌরঙ্গি থেকে চামড়ার ছোটো বাক্সে নিয়ে আসতেন। এমন একটি চামড়া নির্মিত সিগারেট কেস সমীরদা আমাকে দিয়েছিলেন। সেটি এখনও রাখা আছে। মহাশ্বেতাদির সিগারেট ব্র্যান্ড ছিল দেশি ‘পানামা’, বিদেশি ‘ডানহিল’, ‘রথম্যান্স’ বা শেষ পছন্দে ‘৫৫৫’। কিনতাম ‘কল্পনা’ সিনেমার উলটো দিকের ‘পিয়াসী’ থেকে। একবার বহরমপুর কলেজিয়েট স্কুলে একটি আলোচনাসভায় এসে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর সুস্থ হয়ে আর ধূমপান করেননি। ‘তওবা’ করে দেন। ১৯৮৮ সালে তাঁর সম্পাদিত পত্রিকার (বর্তিকা) একটি বিশেষ সংখ্যার সম্পাদনার দায়িত্ব ছেড়ে দেন আমার ওপর। সে কথা তিনি সম্পাদকীয়, ‘প্রতিক্ষণ’ এবং দৈনিক ‘বর্তমান’ পত্রিকায় লিখলেন খোলাখুলি, ‘মুসলিম সমাজ ভাবনা’ সংখ্যার কৃতিত্ব পুরো খাজিম আহমেদের প্রাপ্য। ‘খাজিম পশ্চিমবাঙলায় ক্রমেই পরিচিততরো হয়ে উঠছেন।’ পরিশ্রম করে সে আর একটি সংখ্যা করুক এমন নির্দেশও দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি সময়ের আকালের কারণেই হয়ে ওঠেনি।
৩১ ডিসেম্বর দিদি কলকাতা চলে যেতেন। আবার এক বছরের ‘ইন্তেজার’। সেই বাড়িটি আর নেই। ওখানে একটি তথাকথিত ‘বুর্জ খলিফা’ দাঁড়িয়ে আছে। মণীশ ঘটক আর মহাশ্বেতা দেবীর স্মরণে একটি গ্রন্থাগার হতে পারত।
অজস্র বৃক্ষরাজির মধো দক্ষিণ খোলা ফুলের বাগান সহ ছিল মনোরম বাড়িটি।
সুকুমার রায়ের জন্মশতবার্ষিকীতে মহাশ্বেতাদির আসার কথা ছিল ভ্রাতৃসংঘে। অসুস্থতা এবং বাস্ততা হেতু তিনি অপারগ হলেন। কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে জানালেন, ‘আমার পরিবর্তে ভ্রাতৃপ্রতিম খাজিম আহমেদ সুকুমার রায় সম্পর্কে আলোচনা করবেন।’ দিদির ‘ইজ্জত’ রক্ষার জন্য আমার জ্ঞান মোতাবেক প্রস্তুত হলাম। ৯০ মিনিট আলোচনান্তে বিশিষ্ট আইনজীধী কিশলয় সেনগুপ্ত আমাকে স্নেহবশে জড়িয়ে ধরলেন। মহাশ্বেতাদি নেই। কিশলয়দা নেই। আমার ৭৬ হল। সাম্প্রদায়িকতার উদগ্র বিষ তামাম রাষ্ট্রব্যবস্থাকে গ্রাস করেছে, অদ্ভুত এক আঁধার-এর মধ্যে রয়েছি আমরা। এমন হতাশার মধো দিদির কথা মনে পড়ে।
তিনি থাকলে গৌরকিশোর ঘোষের মতোই বলতেন, নিষ্ক্রিয়তাও পাপ! বাঁচার জন্য শিরদাঁড়াটা সোজা করুন!
একবার ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে শিশুর মতো বললেন, খাজিম অধ্যাপক করীমকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করো তো— আমরা ভাই-বোনেরা এবং পরিবারের অন্যরা মিলিয়ে ছবি তুলব। সঙ্গে পম্পুকেও ডেকো। ছেলেটি নষ্ট হয়ে গেল! আর তুমি তো সব ছবিতে আমার পাশে থাকবে। অধ্যাপক করীমকে বললাম, তিনি তো মহাখুশ। মৃদু হেসে বললেন, ‘আমার ছাত্রী সোমা থাকবে তো!’ জানানো হল পুরো পরিবার থাকবে। একদিন বাদেই তাঁকে নিয়ে মহাশ্বেতাদির বাড়ি চলে গেলাম।
তিনি ‘পেশাদার ফটোগ্রাফার’ খাগড়া থেকে ডেকে এনে বসিয়ে রেখেছেন। প্রায় দু-ঘণ্টা আবেগে নানান গল্প। মণীশ ঘটকের সঙ্গে তাঁর কত হার্দিক সম্পর্ক ছিল, বারে বারে বললেন সে কথা। এক গোছা ছবি রয়েছে আমার হেফাজতে। এসব স্মৃতি কেউ ভোলে, কেউ ভোলে না।
(চলবে)...
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct