আপনজন ডেস্ক: গাজায় ইসরায়েলের ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেই হামাসের প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। তার সরকার মার্কিন সরকারের একতরফা কোনও নিষেধাজ্ঞাকেই স্বীকৃতি দেবে না বলে দেশটির সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি জোর গলায় তিনি বলেছেন। হামাস এবং ফিলিস্তিনে কর্মরত অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিদেশি সমর্থকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রেক্ষিতেই এই মন্তব্য করেছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। মঙ্গলবার সংসদে আনোয়ার বলেন, ‘আমি এইগুলাসহ কোনো ধরনের হুমকি মেনে নেব না। এই পদক্ষেপটি একতরফা এবং বৈধ নয় কারণ আমরা, জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে, শুধু জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তগুলোকেই স্বীকৃতি দেই।’
তিনি বলেন, মালয়েশিয়ানরা হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে এমনকি এই সংগঠনটির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেবে না তার দেশ। দ্যা ডিপ্লোম্যাটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১ নভেম্বর মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ হামাস আন্তর্জাতিক অর্থায়ন প্রতিরোধ আইন পাস করেছে, যা এখন সেনেটের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। বিলের মাধ্যমে তারা হামাস, ফিলিস্তিন ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) বা তাদের সহযোগীদের সহায়তাকারী বিদেশি ব্যক্তি, সংস্থা এবং সরকারগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চায়। ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি পূর্ণ সমর্থন পোষণকারী আনোয়ার ইব্রাহিম স্পষ্টভাষায় বলেছেন, তার সরকার বিলটির অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করছে। তবে যাই হোক না তার সরকার হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে। যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরায়েলের সবচেয়ে স্পষ্টবাদী সমালোচকদের একজন আনোয়ার ইব্রাহিম। তিনি গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণকে ‘এই বিশ্বে বর্বরতার নমুনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন ৭ অক্টোবরের হামলার মূল কারণ ছিল ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ইসরায়েলের দখল। হামলার পর মালয়েশিয়ার একজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে ফোনালাপ করে হামাসের সঙ্গে মালয়েশিয়ার যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে তা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।
মালয়েশিয়ার নেতা গত সপ্তাহে দাবি করেছিলেন, যুদ্ধের শুরু থেকেই মার্কিন সরকার তার সরকারের ওপর হামাসের অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য কূটনৈতিক চাপ নিয়েছিল, তবে দেশটি তার স্বাধীন অবস্থান বজায় রাখবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিকে হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ৩২ দিনের মাথায় ফিলিস্তিনের গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতি ও ত্রাণসহায়তা পৌঁছানোর পথ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে পশ্চিমা শিল্পোন্নত সাত দেশের জোট জি–৭ (গ্রুপ অব সেভেন)। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গাজায় মানবিক সংকটের দ্রুত অবনতির বিষয়টি সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে আমরা জোর দিচ্ছি। আমরা মানবিক দিক বিবেচনায় সাময়িক সময়ের জন্য যুদ্ধবিরতির পক্ষে। একই সঙ্গে (গাজায়) জরুরি ত্রাণসহায়তা পৌঁছানো, বেসামরিক মানুষদের চলাচল ও (হামাসের কাছে) জিম্মি ব্যক্তিদের মুক্তির জন্য একটি পথ (করিডর) তৈরি করার পক্ষে।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনসহ যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান ও ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বিবৃতিতে গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ, বেসামরিক নাগরিকদের চলাচল এবং জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিতের দাবি জানান। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫৬৯ জনে। যাদের মধ্যে ৪ হাজার ৩২৪ জন শিশু। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে ২৩ লাখ গাজাবাসীর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বাস্তুহারা হয়েছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct