এম মেহেদী সানি, স্বরূপনগর, আপনজন: আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের মুখে বনগাঁ কেন্দ্রের অন্তর্গত স্বরূপনগর বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে তৃণমূলকে পরাজিত করে বিজেপি বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিল। তারপর থেকে বিজেপির দখলে থাকা বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা শুরু করেছে তৃণমূল ।সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় চলছে বিজয়া সম্মিলনী নামের জনসংযোগ কর্মসূচি। কিন্তু স্বরূপনগরে বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান ঘিরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বরূপনগর পশ্চিম ব্লক সভাপতি অলোক মন্ডলের নেতৃত্বে মেদিয়া বাজারে বুধবার বিকেলে বিজয়া সম্মিলনী হওয়ার কথা থাকলেও দেখা যায় তার উল্টো ছবি ৷ বিজয়া সম্মিলনী তো দূরের কথা, অনুষ্ঠানের বিষয়ে এলাকার তৃণমূল কর্মীরা কিছুই জানেন না বলে অভিযোগ উঠেছে । এ প্রসঙ্গে অলোক মন্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না, বিজয়া সম্মিলনীর দিন এবং সময় নির্ধারণ আমার সঙ্গে আলোচনা করে করা হয়নি ৷’ কার্যত কিছুটা দায় এড়িয়ে অলোক বাবু বলেন, ‘যাদের প্রভাবে দিনক্ষণ ঠিক হয়েছিল, তারা যদি অনুষ্ঠান করত আমি থাকতাম ৷’ যদিও সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী ব্লক সভাপতির তত্ত্বাবধানেই এই বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ৷ অন্যদিকে, গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনের টিকিট বন্টনের সময় ব্লক সভাপতি হিসেবে গুরুত্ব না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন অলোক মণ্ডল ৷ কিন্তু স্বরূপনগর পশ্চিম ব্লকের অন্তর্গত কতিপয় আঞ্চলিক নেতার দাবি- বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্লক সভাপতি অলোক মন্ডলের টিকি খুঁজে পাওয়া যায়নি ৷
রাজ্যে দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের ওপর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এজেন্সি ইডি,সিবিআই-এর অতি সক্রিয়তার আবহে বিজয়া সম্মিলনীর মধ্যে দিয়ে সংগঠনকে মজবুত করতে তৎপরতা শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ এরই মাঝে স্বরূপনগরের তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আগামী লোকসভা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে কি না তা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে ৷অন্যদিকে, বৃহষ্পতিবার স্বরূপনগর উত্তর এবং দক্ষিণ ব্লকের দুটি স্থানে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের নির্দেশনা অনুযায়ী দুটি বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠিত হবে ৷ জানা গেছে, একইদিনে স্বরূপনগরের একাধিক পঞ্চায়েত এলাকায় পৃথকভাবে বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করা হচ্ছে ৷ যদিও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস ৷ তিনি বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি, এটা হওয়া ঠিক নয়, যদি এমনটা হয় দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ৷’ এ বিষয়ে স্বরূপনগরের বিধায়ক তৃণমূল নেত্রী বীনা মন্ডলও কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন ৷ তিনি বলেন, ‘আঞ্চলিক নেতৃত্বদের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে হবে ৷’ অন্যদিকে, বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার মনে হয় ব্লক সভাপতিরা আঞ্চলিক সভাপতিদেরকে মানিয়ে নিয়ে চলতে পারছে না, যে কারণে আঞ্চলিক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতিরা নিজেদের মতো করে বিজয়া সম্মেলনীর আয়োজন করছে ৷ তবে সবাই তৃণমূল, জোড়া ফুলের বাইরে কেউ নয়’ বলে মন্তব্য করেন আবুল কালাম আজাদ ৷ স্বরূপনগর দক্ষিণ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি কিংকর মন্ডল অবশ্য বলেন বলেন, ‘এভাবে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, সাধারণ কর্মীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন, বিষয়টি জেলা সভাপতিকে জানাবো ৷’ স্বরূপনগর উত্তর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি জিয়াউর রহমানের দাবি, ‘কিছু মানুষ সব সময় দলের বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে দলকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে, যারা পঞ্চায়েত নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেস, সিপিএম, আইএসএফকে সমর্থন করেছিল, ভোটের পরেই আবার দলে এসে সমস্যা সৃষ্টি করছে ৷ এরাই দলীয় নির্দেশ ছাড়াই পৃথকভাবে বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করছে ৷’ এদিকে, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসতেই বিজেপি অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়েননি ৷ বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রিপন বিশ্বাস বলেন, ‘তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এটা নতুন কোনো বিষয় নয়, দীর্ঘদিন ধরে এদের মধ্যে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব চলছে, স্বরূপনগরে বিধায়কের গোষ্ঠী তেমন কোনো কাজকর্ম করতে পারছেন না, অপর গোষ্ঠী সব করছেন বলেও দাবি বিজেপি নেতা রিপন বিশ্বাসের ৷
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct