আপনজন ডেস্ক: আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ৩৮৮ রানকেও হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। পুনেতে গতকাল কুইন্টন ডি কক আর রেসি ফন ডার ডুসেনের জোড়া শতকে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৫৭ রান তোলার পরও তাই মনে হচ্ছিল, নিউজিল্যান্ডকে আটকাতে এই রান যথেষ্ট তো?
কিন্তু মার্কো ইয়ানসেনের গতি আর কেশব মহারাজের ঘূর্ণিতে সেটি হয়েছে যথেষ্টর চেয়েও অনেক বেশি। ৩৫.৩ ওভারে ১৬৭ রানে নিউজিল্যান্ডকে অলআউট করে দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ জিতেছে ১৯০ রানে। বিশ্বকাপে রানের হিসাবে নিউজিল্যান্ডের এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হার। ম্যাচ শেষে তাই উল্টো প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে নিউজিল্যান্ডের টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার সিদ্ধান্তটাই। দক্ষিণ আফ্রিকার এই ব্যাটিং লাইনআপকে আগে ব্যাট করার সুযোগ দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত ছিল, ইংল্যান্ডের মতো নিউজিল্যান্ডকেও এখন তাড়া করে ফিরতে পারে এ প্রশ্ন। প্রথম চার ম্যাচ জেতার পর কিউইরা হারল টানা তৃতীয় ম্যাচ। এ হার নেট রানরেটেও বড় ধাক্কা দিয়েছে তাদের। অন্যদিকে নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরে হোঁচট খেলেও ৭ ম্যাচে ৬ জয় এবং বেশ স্বাস্থ্যকর নেট রানরেট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে চলে এসেছে প্রোটিয়ারা, সেমিফাইনালের পথেও এগিয়ে গেছে অনেকটাই। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের হার পাকিস্তান, আফগানিস্তান আর শ্রীলঙ্কার সম্ভাবনা কিছুটা হলেও বাড়িয়েছে। রান তাড়ায় নিউজিল্যান্ডের ইনিংস গতি পায়নি মোটেও। প্রথম ম্যাচে বড় ইনিংস খেলার পর থেকেই নিষ্প্রভ ডেভন কনওয়ে জ্বলে উঠতে পারেননি এ ম্যাচেও, এবার ইনিংসের তৃতীয় ওভারে থেমেছেন ২ রানেই। রাচিন রবীন্দ্র ও উইল ইয়াংয়ের দ্বিতীয় উইকেট জুটি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সে অর্থে সফল হয়নি। তবু তাঁদের ৩৬ বলে ৩৭ রানের জুটিই নিউজিল্যান্ড ইনিংসে সর্বোচ্চ। শেষ দিকে গ্লেন ফিলিপসের ৫০ বলে ৬০ রানের ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে একটু অপেক্ষায় রাখতে পেরেছে নিউজিল্যান্ড, কিন্তু সেটিও বেশি সময়ের জন্য নয়। মহারাজ নেন ৪ উইকেট, ইয়ানসেন ৩টি।
বোলিংয়ে ইনিংসের শুরুটা ছিল নিউজিল্যান্ডের পক্ষেই। ট্রেন্ট বোল্ট ও ম্যাট হেনরির বিপক্ষে নতুন বলে বেশ সতর্ক ছিলেন ডি কক, প্রথম ৩৯ বলে করেন মাত্র ২২ রান। টেম্বা বাভুমা অবশ্য চাপ কমান ডি ককের ওপর থেকে, যদিও ২৮ বলে ২৪ রান করে বোল্টের শিকার দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক। প্রথম ১০ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা তোলে ৪৩ রান। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেটের দেখা পেতে নিউজিল্যান্ডকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৪০তম ওভারের শেষ বল পর্যন্ত। ততক্ষণে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণই হাতছাড়া হয়ে যায় গতবারের রানার্সআপদের। ডি কক ও ফন ডার ডুসেন, দুজনই পেয়েছেন ভাগ্যের সহায়তা। ক্যাচ যেমন পড়েছে, তেমনি নিউজিল্যান্ড হাতছাড়া করেছে রানআউটের সুযোগও।
ডুসেন ইতিবাচক ছিলেন শুরু থেকেই। বল একটু পুরোনো হয়ে আসার পর চড়াও হন ডি ককও। ৬২ বলে পূর্ণ করেন অর্ধশতক, জেমস নিশামকে ছক্কা মেরে শতক পূর্ণ করেন মাত্র ১০৩ বলে। শেষ পর্যন্ত ১১৬ বলে ১১৪ রানের ইনিংসে মেরেছেন ১০টি চারের সঙ্গে ৩টি ছক্কা। এবারের বিশ্বকাপে এটি তাঁর চতুর্থ শতক, এক আসরে চারটি সেঞ্চুরি করা তৃতীয় ব্যাটসম্যান হলেন তিনি কুমার সাঙ্গাকারা ও রোহিত শর্মার পর।
৪০তম ওভারের শেষ বলে টিম সাউদির বলে ক্যাচ তুলে ডি কক থামলে ভাঙে ফন ডার ডুসেনের সঙ্গে ২০০ রানের জুটি। চারে উঠে আসা ডেভিড মিলারের সঙ্গে ফন ডার ডুসেনের জুটিতে ৪৩ বলেই ওঠে ৭৮ রান। ১০১ বলে শতক পাওয়া ফন ডার ডুসেন থামেন ১১৮ বলে ১৩৩ রান করে সাউদির বলে বোল্ড হয়ে। এরপর মিলার, হাইনরিখ ক্লাসেন ও এইডেন মার্করাম শেষ ১৭ বলে তোলেন ৪১ রান, শেষ ১০ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা ১১৯ রান। এ নিয়ে টানা অষ্টম ম্যাচে আগে ব্যাটিং করে ৩০০ বা এর বেশি রান তুলল তারা, ওয়ানডেতে যেটি প্রথম ঘটনা। ১৯০ রানের বিশাল হারের হতাশার সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের চোটের তালিকাও আরেকটু দীর্ঘ হয়েছে এদিন। ৫.৩ ওভার পরই ম্যাট হেনরি হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট পেয়ে উঠে যান, তাঁর বদলে বোলিং করা জেমস নিশাম ৫.৩ ওভারে দেন ৬৯ রান। পরে নিশামও চোট পান কবজিতে। দুজনই ব্যাটিং করেছেন, তবে ৪ নভেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে পরের ম্যাচের আগে এখন দলের পাঁচজন খেলোয়াড়ই পুরোপুরি ফিট নন! পরের ম্যাচে একাদশ কী হবে, এখন হয়তো সে শঙ্কাতেও পড়ে গেছে নিউজিল্যান্ড।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct