আপনজন ডেস্ক: সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা বন্ধের জন্য ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে টাটা মোটরসকে ১১ শতাংশ সুদে ৭৬৫.৭৮ কোটি টাকা দিতে হবে পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমকে। তিন সদস্যের আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনাল সোমবার এই রায় দিয়েছে। এই রায়ের বিষয়টি টাটা মোটরসের তরফ থেকে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জকে জানানো হয়েছে। টাটা মোটরসকে ২০০৮ সালের অক্টোবরে জমি বিরোধের কারণে পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুর থেকে গুজরাটের সানান্দে ছোট গাড়ি ন্যানো উত্পাদন করতে তাদের প্ল্যান্টটি স্থানান্তর করতে হয়েছিল। ততক্ষণে টাটারা সিঙ্গুরে ১,০০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ করেছে। রেগুলেটরি ফাইলিংয়ে বলা হয়েছে, তিন সদস্যের আরবিট্রাল বা সালিসি ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছে যে ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে প্রকৃত পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত সংস্থাটি প্রতি বছর ১১ শতাংশ সুদসহ ৭৬৫.৭৮ কোটি টাকা আদায় করতে পারে। সিঙ্গুরের অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাসিলিটির ক্ষেত্রে মূলধন বিনিয়োগের ক্ষতি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগম বা ডব্লুবিআইডিসির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়অর কথা বলা হয়েছে। রেগুলেটরি ফাইলিংয়ে বলা হয়েছে, তিন সদস্যের সালিসি ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছে যে ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে প্রকৃত পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত সংস্থাটি প্রতি বছর ১১ শতাংশ সুদসহ ৭৬৫.৭৮ কোটি টাকা আদায় করতে পারে।সিঙ্গুরের অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাসিলিটির ক্ষেত্রে মূলধন বিনিয়োগ ের ক্ষতি সহ বিভিন্ন শিরোনামে ডাব্লুবিআইডিসির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ ের দাবির প্রেক্ষিতে এই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। মুম্বাই-ভিত্তিক অটো মেজরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “তিন সদস্যের সালিসি ট্রাইব্যুনালের সামনে বিচারাধীন সালিশি কার্যক্রম অবশেষে ৩০ অক্টোবর, ২০২৩ তারিখে সর্বসম্মতিক্রমে টাটা মোটরসের পক্ষে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। টাটা মোটরসকে উত্তরদাতার (ডাব্লুবিআইডিসি) কাছ থেকে কার্যক্রমের খরচ বাবদ এক কোটি টাকা আদায়ের অধিকার দেওয়া হয়েছে। উপরে উল্লিখিত চূড়ান্ত সালিশি রায় তৈরির সাথে সাথে সালিশি কার্যক্রম শেষ হয়েছে।২০১০ সালের জুন মাসে টাটা মোটরস ন্যানো উৎপাদনের জন্য সানান্দে একটি নতুন প্ল্যান্ট উদ্বোধন করে, যা এখন বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে।জমি বিরোধের কারণে কারখানাটি পশ্চিমবঙ্গ ের বাইরে সরিয়ে নিতে বাধ্য হওয়ার প্রায় দুই বছর পরে উদ্বোধনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান রতন টাটা এই প্ল্যান্টের উদ্বোধন করেছিলেন। যদিও টাটা গোষ্ঠীর ন্যানো গাড়ি বাণিজ্যিক সফলতা পায়নি।
উল্লেখ্য, বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুরে িটাটার জমি অধিগ্রহণ নিয়ে আন্দোলনে নামেন। দাবি তোলেন, অনিচ্ছুক চাষিদের জমি ফেরত দিতে হবে। ২০০৮ সালে মমতা ব্যানার্জি এবং তাঁর তৃণমূল কংগ্রেসের লাগাতার প্রতিবাদের জেরে টাটাদের বাংলায় ন্যানো ফ্যাক্টরি ছেড়ে গুজরাটে স্থানান্তরিত করতে হয়েছিল। ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূল সরকার টাটাকে কারখানার জন্য বিকল্প জমি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু সংস্থাটি প্রত্যাখ্যান করে বলেছিল, জমি অধিগ্রহণের জন্য ১৫৪ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণের বামফ্রন্ট সরকারের সিদ্ধান্তকে “সম্পূর্ণ বিকৃত এবং অবৈধ” বলে রায় দেয়। টাটা মোটরস সে সময় বলেছিল, একটি ভিন্ন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসার কারণে মামলা চলাকালীন সরকার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে পারেনি।আদালত বলেুছল, অধিগ্রহণটি অবৈধ এমন প্রমাণ থাকলে সরকার তা করতে পারে। টাটা তখন রাজ্য সরকারের সাথে ইজারা চুক্তির অধীনে আরবিট্রাল বা সালিসি ট্রাইব্যুনাল চেয়েছিল যাতে বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।মমতা সরকারকে আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনাল ১১ শতাংশ সুদে ৭৬৫.৭৮ কোটি টাকা টাটা মোটরসকে নির্দেশ দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আদালতের শরাণপন্ন হতে পারে রাজ্য সরকার।অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগমকে ২০১৬ সাল থেকে প্রতি বছর ১১ শতাংশ সুদসহ ৭৬৫.৭৮ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ প্রসঙ্গে বিরোধী দলের নেতৃত্ব ব্যাপক সমালোচনা করেছেন। সংবাদমাধ্যমকে সিপিএমের রাজ্য মুহাম্মদ সেলিম এ সম্পর্কে বলেছেন, রাজ্যের বেকারদের স্বপ্ন ভাঙার পেনাল্টি দিতে হচ্ছে। শুধু ওই টাকা নয়। সঙ্গে ১১ শতাংশ সুদও দিতে হবে। অঙ্কটা দাঁড়াবে ১৬০০ কোটি টাকার বেশি। তিনি আরও বলেন, যে ধ্বংসলীলা সিঙ্গুরে হয়েছিল, তার জন্য তৃণমূল যেমন দায়ী, তেমনই দায়ী বিজেপি। সিপিএম সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, তৃণমূলের অবিমৃশ্যকারিতার জন্য টাটা মোটরস সিঙ্গুরে কারখানা করতে পারেনি। রাজ্যে শিল্পের হাল বেহাল হয়ে পড়েছে। ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে কার্যত তা-ই প্রমাণিত হল। বাংলার মানুষকে ভিক্ষাপাত্র হাতে দাঁড় করাল মমতার সরকার।প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই নির্দেশ দিয়েছে। সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা করতে না-পারায় টাটা মোটরস যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই ক্ষতিপূরণের জন্যই টাটা মোটরসকে ওই অর্থ দিতে বাধ্য থাকবে পশ্চিমবঙ্গ শিল্প উন্নয়ন নিগম। তবে, এই রায়ে রাজ্য সরকার অস্বস্তিতেই পড়ল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct