শেখ কামাল উদ্দীন: তিনি লিখেছিলেন– ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়–’। তিনি কথা রাখেন নি। ফিরে আসেন নি। নাকি ফিরে এসেছিলেন! আমরা চিনতে পারিনি! নাকি ফিরে আসতে চান নি! সব দেখে, শুনে। যে বাংলাকে দেখে তিনি এই ‘রূপসী বাংলা’ কবিতা লিখেছিলেন, সেই বাংলা কী এখন আছে? তাই কি তিনি অভিমান করে ফিরে এলেন না! হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। জীবনানন্দ দাশের কথা বলছি। আজ তাঁর প্রয়াণ দিবস। ১৯৫৪-র আজকের দিনেই তিনি প্রয়াত হন, কলকাতায়। রবীন্দ্র-সমকাল ছাড়িয়ে উত্তরকালেও তিনি বাংলা কাব্য সাহিত্যের ইতিহাসে নিজস্ব স্থান অধিকার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা পালক’ প্রকাশিত হয় ১৯২৭ সালে। তখনও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেঁচে। তৎসত্ত্বে নিজস্বতায় তিনি বাংলা কাব্যে ছাপ রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন সরলতায়, সহজতায়, ইতিহাস বোধে, মৃত্যু-চেতনায়, প্রেম-ভাবনায়, রূপসী বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে।
প্রেমভাবনা:
কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার কেন্দ্রীয় বিষয় প্রেম। আজও যে কোন বাঙালি প্রেমিক সিনেমায় যেমন সুচিত্রা সেনকে প্রেমিকা হিসাবে দেখতে চান, একই রকমভাবে কবিতায় প্রেমিকা হিসেবে বনলতা সেনকে খোঁজেন। ‘হাজার বছর ধরে’ পথ হাঁটার ক্লান্তি নিয়ে ‘দু দন্ড শান্তি’ খুঁজে পান ক্লান্ত প্রেমিক ‘নাটোরের বনলতা সেন’-এর ‘পাখির নীড়ের মতো’ চোখে। শুধু ‘বনলতা সেন’ নয় কবির প্রেমিক কেমন হবে তারও একটি বর্ণনা ‘ডাকিয়া কহিল মোরে রাজার দুলাল’ কবিতায় কবি জানিয়েছিলেন– ‘ডালিম ফুলের মতো ঠোঁট যার, রাঙা আপেলের মতো লাল যার গাল,/ চুল যার শাঙনের মেঘ, আর আঁখি গোধূলির মতো গোলাপী রঙিন;/ আমি দেখিয়াছি তারে ঘুমপথে স্বপ্নে— কত দিন!’ তাইতো তিনি বলেন, ‘এই পৃথিবীর রণরক্ত সফলতা সত্য তবু শেষ সত্য নয়, জ্ঞানের আলোর পথ ধরেই পৃথিবীর মুক্তি ঘটবে, অর্থ নয়, কীর্তি নয়, আমরা অন্তিম মূল্য পেতে চাই প্রেমে।’ ‘তোমাকে ভালবেসে’ কবিতায় ‘ক্ষণস্থায়ী’ জীবনে ‘অনন্তকাল স্থায়ী প্রেমের’ আশ্বাস দিতে গিয়ে কবি লিখেছিলেন, ‘নিত্য প্রেমের ইচ্ছা নিয়ে তবুও চঞ্চল/ পদ্মপাতায় তোমার জলে মিশে গেলাম জল,/ তোমার আলোয় আলো হলাম,/ তোমার গুণে গুণ;/ অনন্তকাল স্থায়ী প্রেমের আশ্বাসে করুণ/ জীবন ক্ষণস্থায়ী তবু হয়।’ কবির প্রেমে কি ভয় ছিল? হারিয়ে যাওয়ার ভয়! তাই পদ্মপাতার ওপর শিশিরকণার মতো তিনি প্রেমকে দেখেছিলেন। তার পরিচয় পাওয়া যায় ‘তোমায় আমি’ কবিতায়– ‘তোমায় ভালোবেসেছি আমি, তাই/ শিশির হয়ে থাকতে যে ভয় পাই,/ তোমার কোলে জলের বিন্দু পেতে/ চাই যে তোমার মধ্যে মিশে যেতে/ শরীর যেমন মনের সঙ্গে মেশে।’ আচ্ছা, সুরঞ্জনা কে? যাকে অন্য যুবকের সঙ্গে কথা বলতে কবি বারণ করেছিলেন– ‘সুরঞ্জনা, অইখানে যেয়ো নাকো তুমি,/ বলো নাকো কথা অই যুবকের সাথে;/ ফিরে এসো সুরঞ্জনা:/ নক্ষত্রের রূপালি আগুন ভরা রাতে।’ তাঁর কবিতায় এমন আরও অনেক কবিতা আছে যেগুলি পাঠ করলে কবি জীবনানন্দ দাশের প্রেমভাবনা সম্পর্কে একটি ধারণা করা যেতে পারে। শুধু সুরঞ্জনা কেন! সুচেতনা। সেই বা কে? তার কাছেই কবি নিজের হৃদয়কে আবদ্ধ রাখেন। তাইতো তিনি বলেন, ‘সুচেতনা, তুমি এক দূরতর দ্বীপ/ বিকেলের নক্ষত্রের কাছে;/ সেইখানে দারু-চিনি বনানীর ফাঁকে/ নির্জনতা আছে।/ এই পৃথিবীর রণ রক্ত সফলতা/ সত্য; তবু শেষ সত্য নয়।/ কলকাতা একদিন কল্লোলিনী তিলোত্তমা হবে;/ তবুও তোমার কাছে আমার হৃদয়।’
ইতিহাসভাবনা:
ইতিহাস ভাবনা কবি জীবনানন্দ দাশের কাব্যে গুরুত্ব পেয়েছে। তিনি কবিতায় ভ্রমণ করেছিলেন সারা পৃথিবী। ‘পিরামিড’ কবিতায় তিনি অতীত স্মৃতি রোমন্থন করে লিখেছিলেন, ‘হে নির্বাক পিরামিড, অতীতের স্তব্ধ প্রেত-প্রাণ/ অবিচল স্মৃতির মন্দির!’ ‘বনলতা সেন’ কবিতাতেও তিনি ইতিহাসের বিভিন্ন স্থান এবং রাজা ও সম্রাট প্রসঙ্গ উত্থাপন করে লিখেছিলেন, ‘সিংহল সমুদ্র থেকে নিশিথের অন্ধকারে মালয় সাগরে/ অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অসুখের ধূসরজগতে/ সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে।’ ‘ঝরা পালক’ কাব্যগ্রন্থের বিভিন্ন কবিতাতেও তাঁর এই ইতিহাসচেতনার পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন, ‘ব্যাবিলন মিশরের মরু ভূসঙ্কটে’। কিংবা ‘আমারে দেখেছে সে যে আসিরীয় সম্রাটের বেশে।’ ‘অনন্দা’ কবিতাতে কবি প্রায় সারা পৃথিবীর কথা লেখেন, ‘তুমি কি গ্রীস পোল্যান্ড চেক প্যারিস মিউনিক/ টোকিও রোম ন্যুইয়র্ক ক্রেমলিন আটলাণ্টিক/ লন্ডন চীন দিল্লী করাচী প্যালেস্টাইন?/ একটি মৃত্যু, এক ভূমিকা, একটি শুধু আইন।’ ‘নগ্ন নির্জন হাত’ কবিতাতে কবি এক প্রাসাদের কথা বলেন, যে প্রাসাদ এক নগরীতে ছিল, সেই নগরী ‘ভারতসমুদ্রের তীরে’ কিংবা ‘ভূমধ্যসাগরের কিনারে’। তাই খোঁজেন কবি। সেই প্রাসাদের মূল্যবান উপকরণগুলি সংগৃহীত হতো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে–
‘ভারতসমুদ্রের তীরে/ কিংবা ভূমধ্যসাগরের কিনারে/ অথবা টায়ার সিন্ধুর পারে/ আজ নেই, কোনো এক নগরী ছিল একদিন, কোন্ এক প্রাসাদ ছিল;/ মূল্যবান আসবাবে ভরা এক প্রাসাদ:/ পারস্য গালিচা, কাশ্মীরী শাল, বেরিন তরঙ্গের নিটোল মুক্তা প্রবাল।’ ‘রাত্রি’ কবিতায় একদিকে ‘ইহুদী রমণী’ অন্যদিকে ‘লিবিয়ার জঙ্গলের’ প্রসঙ্গও আসে।
মৃত্যুচেতনা:
জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুচেতনা সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই যে কবিতাটির কথা মনে পড়ে সেটি হলো ‘আট বছর আগের একদিন’। সবকিছু থাকতেও, বধূ, শিশু, প্রেম তবুও পুরুষের মরার সাধ হলো। ‘শোনা গেল লাশকাটা ঘরে/ নিয়ে গেছে তারে:/ কাল রাতে— ফাল্গুনের রাতের আঁধারে/ যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ/ মরিবার হল তার সাধ। ‘মানুষের মৃত্যু হলে’ কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ লেখেন, ‘মানুষের মৃত্যু হলে তবুও মানব/ থেকে যায়; অতীতের থেকে উঠে আজকের মানুষের কাছে/ প্রথমত চেতনার পরিমাপ নিতে আসে।’ মৃত্যুতেই সব শেষ, একথা তিনি বিশ্বাস করতে চান না বলেই বারবার ফিরে আসতে চান পৃথিবীর বুকে। তাইতো তিনি লেখেন, ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে— এই বাংলায়’। তবে যে শুধু মানুষ হয়েই ফিরতে হবে তা তিনি বিশ্বাস করেন না। নানা পশু পাখির রূপ ধরে তিনি ফিরতে চান এই অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা বাংলায়। তাই বলেন, কখনো ‘শঙ্খচিল শলিখের বেশে’, কখনো ‘ভোরের কাক হয়ে’, কখনো বা ‘হাঁস’ হয়ে তিনি রূপসী বাংলায় ফিরে আসতে চান। ‘শ্মশান’ এবং ‘সন্ধ্যা’ তাঁর কবিতায় একাকার হয়ে যায়। ‘গোলপাতা ছাউনির বুক চুমে’ কবিতায় তিনি লেখেন, ‘চলে গেছে— শ্মশানের পারে বুঝি— সন্ধ্যা হয়ে আসে সহসা কখন,/ সজিনার ডালে পেঁচা কাঁদে নিম—নিম— নিম কার্তিকের চাঁদে।’
প্রকৃতি-প্রীতি:
প্রকৃতি-প্রীতি কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার অনন্য বৈশিষ্ট্য। ‘মৃত্যুর আগে’ কবিতায় তাঁর প্রকৃতি প্রীতির এই পরিচয় পাওয়া পাই–
‘দেখিছি সবুজ পাতা অঘ্রাণের অন্ধকারে হয়েছে হলুদ/ হিজলের জানালায় আলো আর বুলবুলি করিয়াছে খেলা।’ ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’ কবিতাতেও কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার প্রকৃতি, তার সঙ্গে বৃক্ষলতা, নদনদীর অপরূপ বর্ণনা দিয়েছেন। ‘অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে/ চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড়ো পাতাটির নিচে বসে আছে/ ভোরের দয়েল পাখি– চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ/ জাম– বট– কাঁঠালের– হিজলের– অশথের করে আছে চুপ;/ ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে;/ মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে/
এমনই হিজল– বট– তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ।’ এছাড়াও প্রায় সবগুলো ঋতুই তাঁর কবিতায় ঘুরে ফিরে এসেছে। ‘গ্রীষ্ম’ ঋতুর প্রসঙ্গ এসেছে ‘ধূসর পান্ডুলিপি’-র একটি কবিতায়, যেখানে কবি লিখেছেন– ‘সকল পড়ন্ত রোদ চারিদিকে ছুটি পেয়ে জমিতেছে এইখানে এসে,/ গ্রীষ্মের সমুদ্র থেকে চোখের ঘুমের গান আসিতেছে ভেসে’। ‘মাঠের গল্প’ কবিতার ‘পেঁচা’ অংশে তিনি লিখেছেন– ‘প্রথম ফসল গেছে ঘরে,/ হেমন্তের মাঠে ঝরে ঝরে/ শুধু শিশিরের জল;/ অঘ্রানের নদীটির শ্বাসে/ হিম হয়ে আসে/ বাঁশপাতা—মরা ঘাস—আকাশের তারা!’ ‘হেমন্ত’ তাঁর কবিতায় বারবার উচ্চারিত হয়েছে। ‘হেমন্ত’ ঋতু কী কবির প্রিয় ঋতু? না হলে বারবার কেন হেমন্তের প্রসঙ্গ ঘুরেফিরে আসে তাঁর কবিতায়! যেমন, ‘পিপাসার গান’ কবিতায়, ‘হেমন্তের রৌদ্রের মতন/ ফসলের স্তন’, ‘বিড়াল’ কবিতায় হেমন্তের প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, ‘হেমন্তের সন্ধ্যায় জাফরান রঙের সূর্যের নরম শরীরে’, ‘নাবিকী’ কবিতাতেও তিনি হেমন্তের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে লেখেন, ‘হেমন্ত ফুরায়ে গেছে পৃথিবীর ভাঁড়ারের থেকে/ এ রকম অনেক হেমন্ত ফুরায়ছে/ সময়ের কুয়াশায়;’। ‘শতাব্দী’ কবিতাতে ‘হেমন্তরাত’ ‘অবোধ ক্লান্ত অধোগামী’ হয়ে আসে কবির কবিতায়। ‘অবসরের গান’ কবিতায় শীতের প্রসঙ্গে কবি লিখেছেন– ‘আমি সেই সুন্দরীরে দেখে লই—নুয়ে আছে নদীর এপারে/ বিয়োবার দেরি নাই— রূপ ঝরে পড়ে তার— শীত এসে নষ্ট করে দিয়ে যাবে তারে!’ আবার ‘ইতিহাসযান’ কবিতায় শীত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘কখনও শীতের রাতে যখন বেড়েছে খুব শীত’, বসন্তের প্রসঙ্গ পাই ‘পাখিরা’ কবিতায়, যেখানে তিনি লেখেন, ‘ঘুমে চোখ চায় না জড়াতে—/ বসন্তের রাতে/ বিছানায় শুয়ে আছি;/ —এখন সে কত রাত!’
উপমা প্রয়োগ:
কবিরা তাঁদের কাব্যকে পাঠকের কাছে আরো সৌন্দর্যমন্ডিত করে উপস্থাপনা করার জন্য অলংকারের আশ্রয় নেন। বিভিন্ন অলংকার তাঁদের কাব্যে প্রয়োগ করেন। কবি জীবনানন্দ দাশও তার ব্যতিক্রম নন। অনেকগুলি অলংকারের প্রয়োগ তাঁর কাব্যে থাকলেও উপমা অলংকার তাঁর কবিতায় সব থেকে বেশি লক্ষ্য করা যায়। তাই এখানে আমরা তাঁর উপমা অলংকারগুলি সম্পর্কেই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখছি। যেমন, ‘পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন’ (বনলতা সেন), ‘দুধের মতন শাদা নারী’ (সবিতার), ‘শালের মতো জ্বলজ্বল করছিল বিশাল আকাশ’ (হাওয়ার রাত), ‘জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা’ (বোধ), ‘আঁখি গোধূলির মতো গোলাপী রঙিন’ (ডাকিয়া কহিল মোরে রাজার দুলাল), ‘রাঙা আপেলের মতো লাল যার গাল’ (ডাকিয়া কহিল মোরে রাজার দুলাল), ‘নীল হওয়ার সমুদ্রে স্ফীত মাতাল বেলুনের মতো গেল উড়ে’ (হাওয়ার রাত), ‘টোমাটোর মতো লাল গাল নিয়ে শিশুদের ভিড়’ (জুহু)
পশুপাখি:
কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় জানা-অজানা, শ্রুত-অশ্রুত, পরিচিত-অপরিচিত, অপেক্ষাকৃত স্বল্প পরিচিত পশুপাখির প্রসঙ্গ এসেছে। এই পশুপাখিগুলি সম্পর্কে তিনি বিচিত্রধর্মী বিশেষণ ব্যবহার করেছেন। এখানে তাঁর ব্যবহৃত এই ধরনের কয়েকটি পশুপাখির উল্লেখ করা হলো। যেমন—শকুনবধূ, টুনটুনি, পুরোনো পেঁচারা, অলস মাছি, ঘাইহরিণী, বুনো হাঁস, খইরঙা হাঁস,
বালিহাঁস, সোনালি চিল, গাঙচিল, ছিন্ন খঞ্জনা, লক্ষ্মীপেঁচা, কিশোরের পায়ে দলা মুথাঘাস, বউকথাকও, দুরন্ত শকুন, গঙ্গাফড়িং, কালো নীল হলদে পাখি, খয়েরি শালিখ।
কবি জীবনানন্দ সম্পর্কে বিশিষ্টদের মন্তব্য:
১.রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনানন্দ দাশকে ২২ অগ্ৰহায়ণ ১৩২২ শান্তিনিকেতন থেকে লেখা একটি চিঠিতে তাঁর কবিতা সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘তোমার কবিত্ব শক্তি আছে তাতে সন্দেহমাত্র নেই। কিন্তু ভাষা প্রভৃতি নিয়ে এত জবরদস্তি কর কেন বুঝতে পারি নে।’
২. ‘ধূসর পান্ডুলিপি’-র আলোচনা প্রসঙ্গে বুদ্ধদেব বসু জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে বলেন, ‘এই আলোচনা আমি দীর্ঘ করলুম কেন না জীবনানন্দ দাশকে আমি আধুনিক যুগের প্রধান কবি ব’লে বিবেচনা করি, এবং ধূসর পাণ্ডুলিপি তাঁর প্রথম পরিণত গ্রন্থ।’
তাঁর কবিতা সম্পর্কে জীবনানন্দ দাশের নিজের মূল্যায়ন:
১.একটি চিঠিতে সুরজিৎ দাশগুপ্তকে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমার কবিতা সম্বন্ধে চারদিকে এত অস্পষ্ট ধারণা যে আমি নিজে এ বিষয়ে একটি বড়ো প্রবন্ধ লিখব ভাবছিল কিন্তু শরীর বড় অসুস্থ কোন কাজই করতে পারছি না।
২.‘কবিতার কথা’ প্রবন্ধে জীবনানন্দ দাশ নিজের কবিতা সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমাকে অনুভব করতে হয়েছে যে, খন্ডবিখন্ড এই পৃথিবী, মানুষ ও চরাচরের আঘাতে উত্থিত মৃদুতম সচেতন অনুনয়ও এক এক সময় যেন থেমে যায়– একটি-পৃথিবীর-অন্ধকার-ও-স্তব্ধতায় একটি মোমের মতন যেন জ্বলে ওঠে হৃদয়, এবং ধীরে ধীরে কবিতা-জননের প্রতিভা ও আস্বাদ পাওয়া যায়।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct