আমিরুল ইসলাম, কলকাতা: বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় পালিত হলপবিত্র ফাতেহা ইয়াজ দাহাম। মূল অনুষ্ঠানটি হয় কলকাতার ৪ নং হাজি মুহাম্মদ মহসিন স্কোয়ারের দরবার পাকে ও ২২ নং খানকা শরীফ লেনের মসজিদ পাকে। এছাড়াও মেদিনীপুরের জোড়া মসজিদ ও মাযার পাকে, পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গল কোটের কারিগর পাড়া কাদেরিয়া মসজিদ ও মাযার পাকে, বিহারের পূর্ণিয়া জেলার হযরত রওশনগঞ্জের মসজিদ ও মাযার পাকে এবং ভারত ও বাংলাদেশে অবস্থিত সিলসিলা এ কাদেরিয়ার বিভিন্ন খানকা শরীফ ও মসজিদ পাকে দিনটি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হয়।
৫৬১ হিজরির ১১ ই রবিউস সানি(১১৬৬ খ্রিঃ) এই বিশেষ দিনেই মহান সুফি সাধক ‘বড়ো পীর সাহেব’ নামে খ্যাত ‘গওসুল আযম দাস্তগীর’ হযরত শায়েখ সৈয়দ আব্দুল কাদির জিলানি পাকের বেসালে হক (দেহান্তর) হয়েছিল। ফারসিতে ‘ইয়াজ দাহাম’ মানে এগারো। তাই ওই দিনটিকে ‘ফাতেহা ইয়াজ দাহাম’ বলা হয়। আজ থেকে প্রায় হাজার বছর পূর্বে ৪৭০ হিজরির ১লা রমযান (১০৭৮ খ্রিঃ) ইরানের গিলান (আরবিতে জিলান) শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মহান সুফি সাধক হযরত আবু সালেহ মুসা ছিলেন ইমাম হাসান (রা.)এর বংশধর আর মাতা হযরত উম্মুল খায়ের ফাতিমা ছিলেন ইমাম হুসায়ন পাকের বংশ থেকে। তাই তাঁকে ‘আল হাসানী ওয়াল হুসায়নী’- বলা হয়। অল্প বয়সেই তিনি শিক্ষালাভের জন্য ইরাকের বাগদাদ শহরে চলে যান এবং কঠোর সাধনা ও প্রজ্ঞার দ্বারা সে যুগের শ্রেষ্ঠ আলেম হিসাবে পরিচিত হন। তিনি মৃতপ্রায় ইসলামকে পুনরুজ্জীবিত করেন, তাই তাঁকে বলা হয় ‘মুহিউদ্দিন’। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর জ্ঞান-গর্ভ ওয়াজ শুনতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ বাগদাদ শরীফে ছুটে আসতেন। তাঁর রচিত কিতাবের মধ্যে ‘ফতুহুল গায়েব’ ও ‘গুনিয়াতুত্তালিবীন’ বিশ্ব বিখ্যাত। সর্বোচ্চ সুফি তরিকা ‘কাদেরিয়া তরিকা’-র তিনিই প্রতিষ্ঠাতা যা পরবর্তীকালে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রতি চান্দ্র মাসের ১১ তারিখ তাঁর ‘গিয়ারভি শরীফ’ পালিত হয়ে থাকে। বাগদাদ শরীফে তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাতেই তাঁর মাযার শরীফ নির্মিত- যেখানে যিয়ারতের জন্য ভারত, বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ সারাবছরই ভীড় করেন।
কথিত আছে প্রায় আড়াইশো বছর আগে (১৭৬৬ খ্রি:) তার ১৫ তম বংশধর হযরত আব্দুল্লাহ আল জিলানী আল বাগদাদী (রহ) ইরাকের বাগদাদ শরীফ হয়ে ভারতে তশরিফ আনেন। তিনি ফিরে গেলেও দুই শাহযাদা পাক কে রেখে যান। ‘গওসে সানী’ পাক হযরত সৈয়দ শাহ যাকের আলী আল কাদেরী (রহ) বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটে অবস্থান করেন। আর অন্য শাহযাদা ‘কুতুবে বারী’ পাক হযরত সৈয়দ শাহ রওশন আলী আল কাদেরী (রহ) বিহারের পূর্নিয়া জেলার হযরত রওশন গঞ্জ পাকে অবস্থান করেন। এই দুই স্থানেই তাঁদের মাযার পাক রয়েছে ও কাদেরিয়া তরিকার পুণ্য স্থান হিসাবে পরিচিত। এই সমস্ত অনুষ্ঠান ‘সিলসিলা এ কাদেরিয়া’ -র বর্তমান সাজ্জাদানশীন হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ) পাকের ২৩ তম বংশধর সৈয়দ শাহ ইয়াসূব আলী আলকাদেরী আলবাগদাদী (রহ) র পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct