ইসহাক মাদানি: “স্কুল শুরু হলেও ঘণ্টা বাজে, স্কুল শেষ হলেও ঘণ্টা বাজে।”(ঘণ্টার ধ্বনি যারা বুঝে তাঁরাই বুঝে।)/ পাহারাদার, মুনিব আসলেও বার্কিং করে,/ পাহারাদার, চোর আসলেও বার্কিং করে।/ ( ‘বার্কিং’ ধ্বনি যাঁরা বুঝে তাঁরাই বুঝে।)কেরালায় রাজনিস্ত্রীর কাজ করে একই গ্রামের সেন্টু শেখ আর ঘেন্টু শেখ । কাজের গোঁড়ায় মিলে মিশে একই মনিবের কাজ করে।ইলেকশনের ঘণ্টা বাজলেই দুজনাই ছুটে আসে বাড়ী, একজন সিপিএমের ঝান্ডা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে, আর একজন তৃণমূলের।দেখেশুনে ভাবি এঁরা তো না খাটলে খেতে পায়না তবুও কেন এঁদের উত্পাত বেশী ?তবে ইলেকশেন শেষে মুনিবের কাজে গিয়ে এক সংগে চা পান করে।মধ্যপ্রাচ্যে বিবাদ শুরু হতেই দলীয় ক্যাডারগণ বেরিয়ে পড়েছেন যে যেদেশকে সমর্থন করেন সে দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের ছবি মাথায় গুঁজে।যেমন নিজ প্রিয় খেলোয়াড়ের ছবি আঁকা গেন্জি গায়ে প্রেমিক তার পরিচয় দেয়।শুধু রাজনীতি এবং রাজনীতিতে ধর্মীয় মাত্রা যোগ একই বিষয় নয়।মধ্যপ্রাচ্যে বিবাদ শুরু হতেই কে ঠিক আর কে বেঠিক মাপার জন্য মৌলবী ক্যাডারগণ ফিল্ডে কিক্ করতে শুরু করেছেন।একজন আরব পড়া মৌলবী সাহেব বলছেন হামাস ঢিল না মারলে তো ইজরাইল ফিলিস্তিনিদের মারতো না।তিনি আর এক ভিডিওতে বলেন শীয়াদের আকিদা সঠিক নয়।
পাল্টা ওয়ার শুরু
আর একজন মৌলবী সাহেব বলছেন হামাস ঢিল মেরেছে বেশ করেছে কারন ইজরাইল ওঁরাকে বায়তুল মুকাদ্দাসে নামায পড়তে দেয় না এবং ওঁরা ওঁদের শিশুদেরকেও হত্যা করে।এত বড় কথা এত বড় স্পর্ধা, ওঁরা বলে শীয়াদের আকিদা ঠিক নয়- আরে সুন্নিরা তো মুসলমানই নয় ।এছাড়াও কোনো কোনো মুসলিম দেশের কোনো না কোনো মৌলবী এমনি রণহুঙ্কার দেন দেখে শুনে মনে হয় বিশ্বজয়ে যুদ্ধময়দানে নেমেছেন।সৌদী ও ইরান, ভেদাভেদ সত্বেও এক টেবিলে বসার পরিবেশ তৈরী হয়েছে। বসছেন কথোপকথন হচ্ছে।কিন্তু মৌলবী ক্যাডাররা সেটা মেনে নিতে পারছেন না বলেই মনে হচ্ছে। রাষ্ট্র সংঘে গিয়ে কে ফিলিস্তিনের পক্ষে বলল , কে পক্ষে বলল না ইত্যাদি নিয়ে জোর তরজা চলছে।আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিমদেশে ছাতু খেয়ে আসেননি বলে অনেকের মত আমিও মনে করি।তবে কোন দেশের মন্ত্রী তাকে কি শোনালো বলে বগল বাজাতে পারে কেউ, কিন্তু অনেকের বিশ্বাস তিনি কাজ হাসিল করেই গেছেন।ফির্কায় বন্দী মৌলবীসাহেবগণ এক অপরকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না পারেন না, এঁরা যে কারখানায় তৈরী তাতে ন্যূনতম কমন পলিসি বলে তাঁদের কিছু জানা নেই বা হতে পারে না।আমেরিকা সহ ইউরোপ দেশগুলি সেটাই আন্তরিকভাবে চায়।দেখে শুনে কেউ বলতেই পারেন পক্ষান্তরে ওঁরা যেন ওঁদের সহযোগিতায় করছেন।অনেকদিন থেকেই ভাবছিলাম দুটো বিশ্বযুদ্ধ ইউরোপে হল কেন ? এশিয়ায় হল না কেন ? এবং বর্তমানে যেটা হচ্ছে সেটাও ইউরোপে ?আমার মনে হয়েছে আত্মসম্মান বোধ জীবিত না থাকলে যুদ্ধ হয় না।আত্মসম্মানবোধ দু রকম হয় (এক) ব্যক্তিগত আত্ম সম্মান, তাতে ঘা লাগলে যুদ্ধ হয়।(দুই) আত্মসম্মান নিয়ে উপস্থিত ব্যক্তি দেখছে তাঁর সামনে একজন আর একজনের উপর জুলুম করছে, তিনি জালেমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান তখন যুদ্ধ হয়।
দ্বিতীয় প্রকার যুদ্ধ ন্যায়ের দন্ডে সার্বিকভাবে সমর্থন যোগ্য।
(১) আরবীয় আব্বাশীয় খেলাফত ধ্বংসের মূলে ছিল দুর্বল শাসক এবং ধর্মগুরুদের আত্মকলহ ।
(২)। অনারব উসমানীয় খেলাফত ধ্বংসের কারন ছিল সমসাময়িক অত্যাধুনিক আবিষ্কৃত যন্ত্র ব্যবহারে মুসলিম ধর্মগুরুদের নিষেধাজ্ঞা।ফলে তুরস্কের যুবক শ্রেণি বিদ্রোহ করে ধর্মগুরুর পরিবর্তে ‘ইসলাম’কে আসামীর কাঠগোড়ায় দাঁড় করায়।এরপর মধ্যপ্রাচ্য থেকে আত্ম সম্মানবোধ তথা গায়রাত্ প্রায় শেষ হয়ে যায়।OIC টি পার্টি।ফলে মধ্যপ্রাচ্যে বাঘ বকরির লড়াই হতে পারে কিন্তু যুদ্ধ হতে পারে না।যাঁরা এক সময় দুনিয়ার নিয়ন্ত্রক ছিলেন আজ তাঁরা পরমুখাপেক্ষি।কারনটা কি খুলে বলতে হবে ? বর্জ্য ত্যাগের জন্য সোনার পাত্র ব্যবহৃত হলে গায়রত বাকী থাকে না ।ঘণ্টার ধ্বনি এবং বার্কিং ওয়েভ অবশ্যই সবাই বোঝে না।আপনার সমালোচনা আশা করি।
লেখক অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্য
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct