গাজায় সর্বাত্মক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। এতে বেসামরিক নাগরিক ও হামাসের হাতে বন্দীদের মৃত্যু বাড়লে যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রভাবশালীদের প্রতিক্রিয়া কী হবে? ইসরায়েল হামাসকে ক্ষমতাচ্যুত ও ধ্বংস করতে চায়। হামাস না থাকলে গাজায় ক্ষমতায় কে থাকবে? কারণ, সেখানে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের গ্রহণযোগ্যতা নেই। তাহলে কি গাজায় ইসরায়েলের প্রত্যক্ষ দখলদারি প্রতিষ্ঠিত হবে? এমন হলে সংকট আরও জটিল রূপ নেবে। লিখেছেন আলী রীয়াজ।
গাজায় ইসরায়েলি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে যে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, সেখানে যে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলছে এবং এক ভয়াবহ শরণার্থী পরিস্থিতির সূচনা হতে যাচ্ছে, তার সাম্প্রতিক পটভূমি সবার জানা। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামাসের সামরিক অভিযানের পর ইসরায়েল গাজায় নির্বিচার বিমান হামলা শুরু করে। এখন স্থল, জল আকাশপথে হামলার প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। ১৯৭৩ সালের ‘ইয়ম কিপুর’ যুদ্ধের ৫০তম বার্ষিকীর পরদিন ভোরে হামাস ইসরায়েলে কয়েক শ রকেট নিক্ষেপ করে। একই সঙ্গে আকস্মিক স্থল অভিযান চালায়, যাতে প্রায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহত হন। অন্তত ১৫০ ইসরায়েলিকে বন্দী করে গাজায় নিয়ে আসা হয়েছে। নিহত ও বন্দীদের মধ্যে ইসরায়েলি ছাড়াও আছেন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিক। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ইসরায়েল অবিরাম বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে কমপক্ষে ২ হাজার ৬০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ৭৫০ শিশু ও ৫২৮ নারী রয়েছেন। ইসরায়েলের এসব হামলার লক্ষ্যবস্তু হাসপাতাল ও বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকদের ঘরবাড়ি। ইসরায়েল ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, তারা উত্তর গাজায় স্থল অভিযান চালাবে। তাদের নির্দেশে সেখানকার ১১ লাখ ফিলিস্তিনি গাজার দক্ষিণাঞ্চলে সরে যাচ্ছেন। এই পদক্ষেপ ইতিমধ্যে শরণার্থী পরিস্থিতি তৈরি করেছে। মিসরের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ থাকায় শরণার্থীদের থাকতে হবে গাজায়। ইতিমধ্যেই খাবার, পানি, এমনকি ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। তাঁদের কাছে সাহায্য পৌঁছানোর কোনো ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।
হামাসের হামলার কারণে কি অভিযান
কয়েক দিন ধরে গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত সাম্প্রতিক এই ঘটনাবলি প্রচারিত হলেও এই অসম যুদ্ধের কারণ যে ৭ অক্টোবরে হামাসের অভিযান নয়, তা ফিলিস্তিনের ইতিহাস যাঁরা জানেন, তাঁরা বুঝতে পারেন। ১৯৪৭ সাল থেকে ফিলিস্তিনিদের গৃহহীন করা, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমারেখাকে অগ্রাহ্য করে ইসরায়েল রাষ্ট্রের সীমান্ত তৈরি এবং ক্রমাগত ফিলিস্তিনিদের তাঁদের ভূমিতেই অধিকারহীন করার যে প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক সমর্থনে ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদে চলছে, সাম্প্রতিক ঘটনাবলি তারই ধারাবাহিকতামাত্র। সর্বশেষ অধ্যায়ের সূচনা প্রকৃতপক্ষে ২০০৭ সালে। গাজায় হামাস নির্বাচিত হওয়ার পর ১৬ বছর ধরে সেখানে ইসরায়েলের অবরোধ চলছে। এই অবরোধের ফলে সেখানকার ২৩ লাখ মানুষ কার্যত একটি উন্মুক্ত কারাগারে বাস করছেন—এটিই ৭ অক্টোবরের পটভূমি। হামাসের পক্ষ থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ও গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা নতুন ঘটনা নয়। ২০১২, ২০১৪ ও ২০২১ সালেও দুই পক্ষে বড় ধরনের সংঘাতের ইতিহাস আছে। এসব যুদ্ধে বিশেষত ২০১২ ও ২০১৪ সালে দুই পক্ষ সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু তাতে ফিলিস্তিনিদের লাভ হয়নি। এসব চুক্তির অনেক বিষয়ই ইসরায়েল বাস্তবায়ন করেনি। আগের সংঘাতের তুলনায় এবার ইসরায়েলে হামাসের হামলা অনেক বড় এবং এর প্রতিক্রিয়াও হবে বড়। আক্রমণের মাত্রা ও কৌশলের দিক থেকে হামাস ইসরায়েলকে বিস্মিত ও পরাভূত করেছে। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রতিরক্ষা বাহিনী এত দিন যে অপরাজেয় ভাবমূর্তি, এমনকি দম্ভ তৈরি করতে পেরেছিল, এই হামলা তাকে চূর্ণ করে ফেলেছে। ফলে এবার ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া হবে আরও বেশি ভয়াবহ। তারা দেখাতে চাইবে, প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা কোনো বাধা মানবে না। এটি নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের ইঙ্গিত দেয়। আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির কোনো তোয়াক্কা ইসরায়েল করে না, তা যে আরও নগ্নভাবেই ঘটবে, ইতিমধ্যেই তার লক্ষণ সুস্পষ্ট। তবে ইসরায়েলের এই নির্বিচার বোমা হামলায় হামাসের হাতে বন্দীদের যে মৃত্যু ঘটছে এবং ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে, সেটা ইসরায়েলি বাহিনীর জন্য কতটা বাধা হবে, সেটা দেখার বিষয়। এসব নিয়ে ইসরায়েলে নেতানিয়াহু সরকারের ওপরে চাপ বাড়বে, এমন অনুমান করা যায়।
কেন হামলা চালাল হামাস
হামাসের এ অভিযান দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার ফসল। এর প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, তা বিবেচনা না করেই হামাস এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে হয় না। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, হামাস কেন এখন এ ধরনের অভিযানের সিদ্ধান্ত নিল। অবস্থাদৃষ্টে আরও প্রশ্ন ওঠে—হামাসের জন্য এই হামলার প্রতিক্রিয়া কী; ইসরায়েল যে ব্যাপক অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে, তার লক্ষ্য কী এবং এই সংঘাত অতীতের মতো গাজা ও ইসরায়েলেই সীমিত থাকবে কি না। হামাস একাধিক কারণে এমন বড় হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেই প্রতীয়মান হয়। এর মধ্যে আছে আঞ্চলিক রাজনীতিতে পরিবর্তন। কয়েক বছর ধরে ইসরায়েলের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সম্পর্কের উন্নতি হামাসের জন্য বড় ধরনের এক ধাক্কা হিসেবে হাজির হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কার্যত ফিলিস্তিনিদের পাশ কাটিয়ে কিংবা বলা যেতে পারে ফিলিস্তিন প্রশ্নকে বাদ দিয়ে এই অঞ্চলে যে শান্তি প্রতিষ্ঠার কূটনীতি শুরু করেছিল, তা হামাসের জন্য অস্তিত্বের সংকট তৈরি করেছে। এ ক্ষেত্রে সৌদি আরব-ইসরায়েল সম্পর্কের স্বাভাবিকীকরণ হলে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আর কোনো সম্ভাবনা থাকবে বলে মনে হয় না। ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির আওতায় পশ্চিম তীরে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন যে ‘ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র’, তা আর ফিলিস্তিনিদের স্বপ্ন দেখায় না। ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও হামাসের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে থাকবে। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বছরের বেশি সময় ধরে সংকটে আছেন। তাঁর প্রতি সমর্থন কমছিল এবং তিনি বিভিন্ন আইনি সমস্যার মোকাবিলা করছিলেন। নিজেকে রক্ষায় তিনি ফিলিস্তিন প্রশ্নে আরও উগ্রপন্থী নীতি গ্রহণ করছিলেন, এতে তিনি আরও উগ্র দলের সমর্থন পেয়েছেন। হামাস বুঝে গেছে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে ইসরায়েলের ক্ষমতায় যাঁরা আসবেন, তাঁরা আরও বেশি যুদ্ধংদেহী হয়ে উঠবেন। হামাসের নেতৃত্বের এ ধারণার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করা যায়। নেতানিয়াহু যেভাবে বিপদগ্রস্ত হচ্ছিলেন, এই হামলা তাঁকে সেই বিপদ থেকে রক্ষাই করবে।
প্রভাবশালী রাষ্ট্রের কী ভূমিকা
হামাসের ওপরে ইসরায়েলের এই হামলার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া হতে পারে দুই ধরনের। প্রথমত, একে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে হামাস, হিজবুল্লাহ, ইসলামিক জেহাদের মধ্যে একধরনের ঐক্য গড়ে উঠবে। এর প্রতি ইরান ও সিরিয়ার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ—দুই ধরনের সমর্থন থাকবে। হামাস একে ইতিবাচক বলেই বিবেচনা করছে। এই সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিন্তু এর ভূরাজনৈতিক দিক বিবেচনা নেওয়া দরকার। ইরান ও সিরিয়ার প্রধান সমর্থক হচ্ছে রাশিয়া। রাশিয়া এ ধরনের অস্থিতিশীলতার প্রতি সমর্থন দেবে না। কেননা এতে এই অঞ্চলে রাশিয়ার স্বার্থ ও প্রভাব ক্ষুণ্ন হবে। ইতিমধ্যে এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি ও প্রভাব কমেছে। এখন এ ধরনের একটি জোট যদি ইসরায়েলের ভেতরে ও বাইরে অনিয়ন্ত্রিত হুমকি হিসেবে হাজির হয়, তবে তা যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও এই অঞ্চলে প্রভাবশালী করতে সাহায্য করবে। সেটা নিশ্চয় রাশিয়ার স্বার্থের পক্ষে যাবে না। একই বিবেচনায় চীনের অবস্থানও অনুরূপ। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইতিমধ্যে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সঙ্গে এক ঘণ্টার বেশি সময় আলোচনা করেছেন। এটা আপাতদৃষ্টে বিস্ময়কর মনে হলেও হামাসের অভিযানকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে সংঘাত যুক্তরাষ্ট্র ও চীন—উভয়ের স্বার্থের বিরুদ্ধেই যায়। দ্বিতীয় সম্ভাবনা হচ্ছে, ইসরায়েল গাজায় অভিযান চালিয়ে হামাস নেতৃত্বের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে সক্ষম হবে। ইতিমধ্যেই জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত তাঁদের অভিযানের এমন লক্ষ্যের কথাই বলেছেন। এ ধরনের লক্ষ্য রাজনৈতিক রেটরিক (বাগাড়ম্বর) হিসেবে যেমনটা শোনায়, বাস্তবায়নের পথ ততটাই কঠিন। কেননা এর জন্য দরকার গাজার সর্বত্র ইসরায়েলের উপস্থিতি। ২০১৪ সালে ইসরায়েল গাজায় যখন অভিযান চালিয়েছিল, সেই সময় কয়েক মিটার এলাকা দখল করতেই দুই সপ্তাহ লেগেছিল। এবার পরিস্থিতির আরেকটি দিক হচ্ছে, হামাসের হাতে বন্দী ইসরায়েলিরা। ইসরায়েলের গোয়েন্দারা জানেন না, বন্দীরা কোথায় আছেন, কাদের হাতে আটক আছেন এবং এ ধরনের অভিযান তাঁদের মৃত্যুই ডেকে আনবে কি না। এ ধরনের অভিযানে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটবে। এতে এখন পর্যন্ত যাঁরা ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন করছেন, তাঁরা সেই অবস্থানে থাকবেন কি না, সেটা বিবেচ্য। সাধারণ নাগরিকদের প্রাণহানির ঘটনায় ইতিমধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় সংগত কারণে প্রতিবাদ হচ্ছে, এই প্রতিবাদ আরও বাড়বে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে বিদেশি বন্দীদের বিষয়। ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র আগের মতোই সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। এতে আগেও ব্যত্যয় হয়নি, এবারও হবে না। এটি দীর্ঘদিন ধরে অনুসৃত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির দ্বিচারিতার একটি উদাহরণ।
মার্কিনদের দৃষ্টিভঙ্গি
ইসরায়েলের অভিযানে হামাসের হাতে বন্দী মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু হলে তা যুক্তরাষ্ট্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে। গত বুধবার করা এক জনমত জরিপে দেখা যায়, ৬৫ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত প্রত্যক্ষভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন করা। কিন্তু লক্ষণীয় হচ্ছে, ৪৫ বছরের কম বয়সী উত্তরদাতাদের মাত্র ৪৫ শতাংশ এমন মনে করেন। সংঘাত অব্যাহত থাকলে এবং ইসরায়েলের অভিযানে মার্কিন নাগরিক নিহত হলে এ অবস্থা থাকবে কি না, সেটা নিশ্চিত নয়। তদুপরি এখন পর্যন্ত মার্কিন গণমাধ্যমগুলোতে গাজার ধ্বংসযজ্ঞের ছবি দেখানো হচ্ছে সীমিত আকারে। এটা বাড়লে জনমতে তার প্রভাব পড়বে।গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় হচ্ছে, তাকে কেবল গাজা ফ্রন্ট মোকাবিলা করলেই চলবে না। দেশের উত্তরাঞ্চলের সীমান্তে সিরিয়া ও লেবানন থেকে হিজবুল্লাহর চাপ আসতে পারে। ইতিমধ্যেই এই সীমান্তে ইসরায়েলের ভেতরে রকেট নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। হিজবুল্লাহর প্রধান সমর্থক ইরান এই যুদ্ধে জড়াতে আগ্রহী হবে না। তবে ইরানি নেতারা হিজবুল্লাহকে এ কাজ থেকে বিরত রাখবেন, এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। এ ছাড়া একই সময়ে পশ্চিম তীরেও প্রতিবাদ ও সহিংসতা শুরু হতে পারে। ফলে গাজায় অভিযান চালালে ইসরায়েলকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। এতত্সত্ত্বেও এটা নিশ্চিত, ইসরায়েল প্রতিশোধের ভয়াবহতা দেখাতে গাজায় স্থল অভিযান চালাবে। তাদের কথিত লক্ষ্য হামাসকে ধ্বংস করা হলেও আশু লক্ষ্য হবে গাজার উত্তর এলাকা দখলে নেওয়া। গাজার একটি অংশকে কার্যত ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এনে সেটা নিয়ে আগামী কয়েক মাস বা বছর ইসরায়েল দর-কষাকষি করবে। হামাস ১৫০ জন বন্দী করেছে ইসরায়েলের হাতে তাদের ৫ হাজার ২০০ বন্দীকে মুক্তির জন্য। কিন্তু ইসরায়েল শেষ পর্যন্ত তাকে গাজা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহারের শর্ত বানিয়ে ফেলতে চাইবে। ইসরায়েলের নেতারা যদিও বলছেন, তাঁরা এই দফায় হামাসকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে এবং ধ্বংস করতে চান। কিন্তু তা আদৌ সম্ভব কি না, সেটা একটা প্রশ্ন। আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে, এই লক্ষ্যে ইসরায়েল সফল হলে গাজার প্রশাসন কাদের দিয়ে পরিচালিত হবে? ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) সেখানে কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, হামাসের বাইরে সেখানে কোনো রাজনৈতিক শক্তি নেই। এর অর্থ দাঁড়াবে, ইসরায়েলের প্রত্যক্ষ দখলদারি প্রতিষ্ঠা। তার পরিণতি হবে আরও সহিংসতা, যা ইসরায়েলের ভেতরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এসবই ইঙ্গিত দেয়, পরিস্থিতি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে জটিল রূপ নিয়েছে।
আলী রীয়াজ যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct