আপনজন ডেস্ক: গত ৭ অক্টোবর সকালে ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গ্রুপ হামাস। এরপর কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মূলধারার গণমাধ্যমে হামাস যোদ্ধাদের হাতে ইসরায়েলি শিশুদের শিরশ্ছেদের ভয়ংকর খবর, ছবি ও ভিডিও প্রকাশিত হতে থাকে। কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। অবধারিতভাবেই একটি হিংসাত্মক ও তিক্ত যুদ্ধে এসব খবর ও অনলাইন কনটেন্ট বিশেষভাবে উসকানি হিসেবে কাজ করেছে। এই উসকানির সর্বশেষ প্রতিফলন দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের উইল কাউন্টিতে ছয় বছরের ফিলিস্তিনি এক শিশুকে ২৬ বার ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন বাড়ির মালিক। শিশুটির মাও গুরুতর আহত। ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের ক্ষোভ থেকেই এ হামলা করেছেন বলে স্বীকার করেছেন সেই ব্যক্তি। তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ইসরায়েলি শিশুদের শিরশ্ছেদ করে হত্যার ছবি, ভিডিও ও সংবাদ প্রতিবেদনগুলো কিন্তু কেউ-ই কোনো স্বাধীন সূত্র থেকে নিশ্চিত হতে পারেনি। সব তথ্যই সরবরাহ করেছে ইসরায়েলে সামরিক বাহিনী ও সরকার। খবরগুলোর সত্যতা নিশ্চিত হতে না পেরে কিছু কিছু অবশ্য পরে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শিশুদের শিরশ্ছেদ করা নিয়ে সবচেয়ে হাইপ্রোফাইল দাবিটি এসেছিল গত বুধবার রাতে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তখন বলেছিলেন, তিনি সন্ত্রাসীদের হাতে শিশুদের শিরশ্ছেদের ফটোগ্রাফিক প্রমাণ দেখেছেন। হোয়াইট হাউস অবশ্য পরে বিষয়টি পরিষ্কার করে বলে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন শিরশ্ছেদ সম্পর্কিত যেসব সংবাদ প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেছেন, সেগুলোতে ফটোগ্রাফিক প্রমাণ অন্তর্ভুক্ত বা উল্লেখ করা হয়নি। তবে বাইডেনের সেই বিবৃতি পশ্চিমা অধিকাংশ গণমাধ্যমের প্রথম পাতায় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ছাপা হয়েছিল। পরে কেউ কেউ গাজায় প্রতিশোধমূলক ইসরায়েলি হামলায় বেসামরিক মানুষ নিহত হওয়ার ন্যায্যতার সপক্ষে এসব খবরের উল্লেখ করেছেন। হামাসের নামে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত কিছু ছবিতে শিরশ্ছেদকারী সৈন্যদের দেখানো হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে গত বৃহস্পতিবার হামাসের হাতে নিহত ও পুড়িয়ে ফেলা শিশুদের ছবি পোস্ট করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত শিশুদের শিরশ্ছেদের দাবির সমর্থনে কোনো ছবির প্রমাণ কেউ হাজির করেনি। শিশুদের শিরশ্ছেদ এবং নারীদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে হামাস। হামাস বলছে, এগুলো সর্বৈব মিথ্যা। সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই যেকোনো তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে গণমাধ্যমের ব্রেকিং নিউজে এই প্রবণতা এখন বিপজ্জনক রূপ নিয়েছে। ফলে ভুল বা মিথ্যা বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিকৃত তথ্য মুহূর্তের মধ্যে বৃহত্তর দর্শক-শ্রোতার কাছে পৌঁছে যায়। কখনো কখনো সোশ্যাল মিডিয়াই হয়ে ওঠে মূলধারার সংবাদমাধ্যমের খবরের প্রাথমিক উৎস। সেগুলোতে প্রভাবিত হন রাজনীতিক, অধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী শ্রেণি-পেশার মানুষ। সবচেয়ে সমস্যার বিষয় হলো, তাৎক্ষণিক পাওয়া এসব খবরের ফলোআপে পূর্বের তথ্য প্রত্যাহার বা প্রসঙ্গ যোগ করা হলেও সেগুলো আর আগের দর্শক-শ্রোতাদের কাছে সাধারণত পৌঁছায় না। ফলে প্রথম পাঠক বা শ্রোতা ভুল তথ্যই বিশ্বাস করতে থাকেন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিবৃতিটি মূলত ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে একাধিক সংবাদ প্রতিবেদন ও মন্তব্যের ওপর নির্ভর করে দেওয়া হয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct