নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা, আপনজন: ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলার নিন্দা এবং ফিলিস্তিনিদিরে প্রতি সহমর্মিতা দেখালেন আইএসএফ নেতৃত্ব। আইএসএফ বিধায়ক পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকী সহ আইএসএফের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড দখল করেই ইজরায়েলের জন্ম। ১৯৪৮ সাল থেকে এই ভূখণ্ড দখল করে ইসরায়েল সম্প্রসারিত হয়েছে। ১৯৪৯ সালের প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ প্যালেস্তিনীয়কে উচ্ছেদ করা হয় তাদের মাতৃভূমি থেকে। চার শতাধিক গ্রাম ও শহর ধ্বংস করে নাম বদলে সেখানে গড়ে তোলা হয় ইসারায়েলি জনপদ। আইএসএফের অভিযোগ, গত ৭৫ বছর ধরে এক নাগাড়ে প্যালেস্তাইনের জমি দখল করছে ইজরায়েল। গাজা কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছে গত ১৬ বছর। গত ৭ তারিখে হামাস অতর্কিতে হামলা চালায় ইজরায়েলের মধ্যে। এই প্রথম এই বড় মাপের হামলা চালিয়েছে হামাস। এই হামলাকে অছিলা করে গাজাকে ধুলিসাৎ করতে নেমে পড়েছে ইজরায়েল। অথচ, হামাসের এই অভিযানের আগে শুধুমাত্র বছরে ৪৫ শিশু সহ ২৪০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিসিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। চলতি শতাব্দীর প্রথম দশক থেকেই ইজরায়েল গাজায় চারটি দীর্ঘ সামরিক হামলা করেছে। সালগুলি হলো ২০০৮, ২০১২, ২০১৪ এবং ২০২১। ঐ হামলাগুলিতে হাজার হাজার প্যালেস্তিনীয় নিহত হয়েছেন। তার মধ্যে বহু শিশুও রয়েছে। ধ্বংস হয়েছে কয়েক হাজার বাড়ি, স্কুল এবং অফিস ভবন। ২০০৮ সালের হামলায় আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ অস্ত্র, ফসফরাস গ্যাসের ব্যবহার করেছে ইজরায়েলি সেনা। সেই ইসরায়েল সরকারকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সমর্থন করায় নিন্দা জানিয়েছে আইএসএফ।ইস২০১৪ সালে, ৫০ দিনের ব্যবধানে, ইসরাইল ৫০০ শিশু সহ ২,১০০ টিরও বেশি প্যালেস্তিনীকে হত্যা করেছিল।এই মুহূর্তে গাজাতেও যথেচ্ছভাবে ফসফরাস গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে।
এই লড়াই ক্রমবর্ধমান দখলদার জায়নিস্ট ইজরায়েলের বিরুদ্ধে নিজভূমে পরাধীন প্যালেস্তাইনিদের মাতৃভূমি রক্ষার লড়াই এবং এটা পরিষ্কারভাবে বোঝা প্রয়োজন যে ইহুদি ধর্ম আর জায়নবাদের মধ্যে আকাশপাতাল তফাত রয়েছে। জায়নবাদ হল এমন একটি নীতি যেটা ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়। এটা এমনই একটা নীতি যেখানে অন্য কোন সভ্যতা, সমাজ, মানুষ, ধর্মকে এরা মানা যাবে না। তৈরি হবে ইহুদি জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র। সেখানে অন্য কোন ধর্ম বা সমাজের মানুষ থাকবে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে। এরা গণতন্ত্রের বড়াই করে কিন্তু কাজ করে জাতিগত গণতন্ত্র (ethnic democracy) প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। এখানে আরবদের সমস্তধরণের নাগরিক সুখ সাচ্ছন্দ্য থেকে বঞ্চিত রেখে আলাদা করে রাখা হচ্ছে। প্যালেস্তিনিরা আজ নিজভূমে পরবাসী। আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি। প্যালেস্তিনিদের স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বাঁচার পূর্ণ অধিকার আছে। কিন্তু জায়নবাদীরা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করে গাজায় কার্পেট বোম্বিং করে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে উদ্যত। গাজায় এই কয়েকদিনে যতজন মারা গেছে তার ৬০ শতাংশ শিশু ও নারী। নারীঘাতী, শিশুঘাতী ইজরায়েল সরকারকে ধিক্কার জানাচ্ছি।পাশাপাশি আজকের বিজেপি পরিচালিত ভারত সরকারের ইজরায়েল ঘেঁষা নীতিকে আমরা তীব্র নিন্দা করছি। আমরা বুঝি যে জায়নবাদীদের সঙ্গে এখানকার বর্ণবাদীদের গলায় গলায় ভাব হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু দশকের পর দশক ধরে ভারত প্যালেস্তাইনের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার পক্ষে থেকেছে। সেই নীতি থেকে সরে আসা কোনমতেই বরদাস্ত করা যাবে না। জোট-নিরপেক্ষ নীতি, অ্যাফ্রো-এশিয়ান জোট যেটা ছিল উপনিবেশবাদী সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী, সেই জোটকেই জলাঞ্জলি দিচ্ছে ভারতের বিজেপি সরকার। আমরা এর তীব্র বিরোধী।“প্যালেস্তাইন থেকে জায়নবাদী নেতানিয়াহু সরকারকে হাত উঠাতে হবে। *অবিলম্বে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে।গাজায় বিদ্যুৎ, জল, খাদ্য সরবরাহ করার ব্যবস্থা করতে হবে। আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থাগুলিকে গাজায় প্রবেশের নিরাপত্তামূলক করিডর দিতে হবে।সর্বোপরি, স্বাধীন প্যালেস্তিনীয় জনগণের স্বভূমির বৈধ অধিকারকে রাষ্ট্রসঙ্ঘ দ্বারা স্বীকৃতি কে সুনিশ্চিত করতে হবে।দ্বি-রাষ্ট্র মোতাবেক প্রস্তাবের বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে।প্যালেস্তাইনের ভূমি বেদখল করা চলবে না। ইজরায়েলের অবৈধ বসতি তৈরি বন্ধ করে হবে। পূর্ব জেরুসালেমকে প্যালেস্তাইনের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct