অন্য পরিচয়ে
শংকর সাহা
ফটিক বাবুর একমাত্র ছেলে অম্লান। ছোটোবেলা থেকে পড়াশোনায় খুব ভালো অম্লান। ছেলেকে ডাক্তারি পড়াতে গিয়ে স্থাবর-অস্থাবর অনেক কিছু বিক্রি করতে হয়েছে ফটিকবাবুকে ।শুধু বৃদ্ধবয়সের সম্বল সেই পেনশনের সাত হাজার টাকা আর পূর্বপুরুষের সেই ছোট্ট কাপড়ের দোকানটি। আজ অম্লান শহরের মস্তবড়ো ডাক্তার ।তার নাম যশ সকল কিছুই হয়েছে। কিন্তু বিয়ের পর থেকে অম্লান অনেক পাল্টে গেছে। বাবা-মার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে সে বিশেষ চায়না। তার স্ত্রী উর্মিলা এক নার্সিংহোমের মালিক। এক সন্তানকে নিয়ে শহরেরই এক মস্ত বড়ো ফ্লাটে সে থাকে। সে বারের পূজোয় ফটিক বাবু ছেলে আর ছেলের বউয়ের জন্যে কিছু কাপড় জামা পাঠালে একদিন ছেলে বাবাকে ফোন করে জানায় ,..” শুধু শুধু এতগুলো টাকা খরচ করে এগুলো পাঠিও না। সেকেলে ধরনের জিনিস আমরা পড়িনা।সবই কাজের মাসিকে দেওয়া হয়।“ ছেলের সাথে কথা বলার পরে ফটিক বাবু স্ত্রীর দিকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,’’ শোনো অনুপ্রভা,ছেলেরা ছোটো থাকলে বাবা মায়ের স্বাদের জিনিসগুলো মূল্য পায় কিন্তু যখন তারা বড় হয়ে ওঠে তখন কোথায় যেন বাবা মায়ের ইচ্ছেগুলো মূল্যহীন হয়ে পড়ে।“প্রতিষ্ঠিত হবার পর পিতৃদত্ত নামটি অম্লান পাল্টে নেয় সাথে পদবীও । আজ সে অম্লান থেকে সৌরাশীষ ব্যানার্জী শহরের প্রতিষ্ঠিত হার্ট স্পেশালিস্ট। অম্লানের নামবদলটি ফটিক বাবু জানতেন না,জানলে হয়তো কষ্ট পেতেন কারন নামটি ফটিক বাবুর বাবার দেওয়া। সেইদিন দোকান থেকে আসার পর শরীরে অস্বস্তিবোধ করতে থাকেন ফটিক বাবু।‘ রাতে কিছু খাবেনা “-স্ত্রীকে না’ বলে শুয়ে পড়েন তিনি। মাঝ রাতে হঠাত বুকে প্রচন্ড ব্যথা ।সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি। অসহায় স্বামীকে নিয়ে পাগলের মতো কাছের এক নার্সিংহোমে নিয়ে আসেন অনুপ্রভা দেবী। নার্সিংহোমে আসার পড়ে তিনি জানতে পারেন নগদ এক লক্ষ টাকা লাগবে। কিন্তু হাতের কাছে সামান্য হাজার চল্লিশ টাকা ছাড়া আর তেমন কিছুই ছিলনা তার।কিন্তু স্বামীকে বাঁচাতেই হবে তাই অসহায়ভাবে ছুটে যান ডাক্তার বাবুর চেম্বারে। নেমপ্লেটে লেখা সৌরাশীষ ব্যানার্জী,এম.ডি (কার্ডিও সার্জেন) । অনুমতি নিয়ে ভেতরে যেতেই হতভম্ব হয়ে পড়েন অনুপ্রভা দেবী। এ কাকে দেচ্ছেন তিনি? এ তো তার অম্লান,নিজের সন্তান। যাকে দশ মাস গর্ভে ধরেছিলেন। মাকে দেখে চেয়ার থেকে ওঠে অবাক হয়ে ওঠে সে। ছেলে কিছু বলার আগে মা ছেলের পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন,” আমার স্বামীকে বাঁচান ডাক্তারবাবু, ওনি ছাড়া আমার যে কেউ নেই এই পৃথিবীতে?“ সেদিন অম্লান নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। মাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে, “ বাবার কিছু হবেনা। আমি তো আছি মা। আমি অপারেশন করবো বাবার।“পেছন ফিরে সৌরাশীষ বাবু সিস্টারকে ডেকে বলেন,” সিস্টার, ও.টি. রেডি তো? চলুন তাড়াতাড়ি....
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct