চত্রার বিল
সাঈদুর রহমান
চত্রার বিলে প্রতিবছর এই সময় প্রচুর পানি থাকে।টলটলে পানিতে ভরে ওঠে পুরো মাঠ।ছোট বিলটিকে মিনি সাগরের মত মনে হয়।বিলের ঠিক মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে একটা রাস্তা।গত বছর পিচ ঢালাই করেছে।রাস্তার দুই পাশে হাজারো পর্যটক আনাগোনা করছে।বিদেশি বা দূরের কোন পর্যটক নয়।স্থানীয় পর্যটক। বড় জোর আট থেকে দশ কিলোমিটার দূর থেকে আসা প্রকৃতি প্রেমিক মানুষ।যেখানেই প্রকৃতির লানন্যের পরিস্ফুটন ঘটে ধারের কাছে যেখানেই একটু ঘুরে আসে। এদের দূরে যাওয়ার মত সামর্থ নাই। কক্সবাজার বা সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়ার মত অনেক ইচ্ছে থাকলেও সামর্থ্য তাদের নিরাশ করে দেয়। ওরা চত্রার বিল কেই দুনিয়ার সবচেয়ে সেরা পর্যটন কেন্দ্র ভাবে। যাকে বলা যায় দইয়ের স্বাদ ঘোলে মিটানোর মতো।তবে যেকোনো সমুদ্র উপকূলের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় সৌন্দর্য বিবেচনায়।যাহোক এবার পানি কম হয়েছে।বৃষ্টি একেবারেই নামে নাই বললেই চলে।তবু মানুষ আসছে খুব।প্রতি বছরের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ। এবার বিলে পদ্মফুলের সংখ্যা বেশি।এত পদ্মফুল কোনো বছর দেখা যায় নাই। পুরো বিলটাই যেন পদ্ম রঙে রঙিন। বিকেলের পড়ন্ত সূর্যের আলো পদ্মফুলের উপর পড়লে কী এক স্বর্গীয় আভার সৃষ্টি হয় বলে কয়ে শেষ করা যাবে না।মানুষ এই বিলের সেই রূপ না দেখে থাকতে পারে না।তাই তো বিকেল হলে শত কাজের ফাঁকে একটু আনন্দ উপভোগ করার মানসে বের হয় বিলের সান্নিধ্যে। বিলের সান্নিধ্য যে ভালো লাগে তা বোঝাই যায়, সন্ধ্যা পার হয়ে গেলেও মানুষ কি এক দুনির্বার আকর্ষণে বিলের কাছ থেকে ফিরতে চায় না।এ বছরে আরেকটি আকর্ষণ যোগ হয়েছে। মধ্য বিলের রাস্তার দুই পাশ দিয়ে বৈদ্যুতিক লাইট দিয়েছে। লাইটের আলো বিলের পানি আর পদ্ম ফুলের মেরুণ রঙ, মোহনীয় রূপ তৈরি করে দেয় স্বয়ং বিধাতা।চোখের তারায় লেগে থাকে এর রূপ লাবন্য।ভরে যায় মনের সাধ আহ্লাদ সব।সৃষ্টি কর্তার অপার মহিমা, যে এত সুন্দর ভাবাই যায় না।তবু ভাবতে হয়।ভাবনা গুলো আরো সুন্দর হয়ে ওঠে।উপরন্তু পানি আর পদ্মপাতা ঠেলে ঠেলে,নৌকায় চড়ে বিল ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা।শত শত কিশোর কিশোরীর বৈকালিক এই পদ্মপাতা, পদ্মফল ছেঁড়ার উল্লাস দেখে হৃদয় ভরে ওঠে।আর আছে মাঝে মাঝে শাপলা ফুল। অত্যন্ত সুন্দর।শিশুরা শাপলা ফুলের মোহে পাগল হয়ে ওঠে। আর প্রকৃতির নির্মল বায়ু দেহে এক অনাবিল প্রশান্তির ঢেউ বয়ে যায়। শরত কালের এই রূপ বৈচিত্র সত্যি চত্রার বিলে এক সৌন্দর্যের আধার সৃষ্টি করেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct