রঙ্গিলা খাতুন, ভরতপুর, আপনজন: সামনে দুর্গাপূজো। আকাশের মেঘ-রোদ্দুর সঙ্গে শরতের বাতাসে কাশফুল দোলায় মাথা। ইতিমধ্যেই দুর্গাপূজা নিয়ে সাজোসাজো রব। তার আগেই খুশির হাওয়া খড়িন্দা সর্দার পাড়ার আদিবাসী গ্রামে। সম্প্রতির নজীর দেখা গেল ভরতপুর থানার অন্তর্গত খড়িন্দা গ্রামে।প্রসঙ্গত প্রায় ১৫ বছরের চেষ্টাতেও তৈরি হয়নি মন্দির। আড়াই লক্ষ টাকা দিয়ে সেই মন্দির তৈরি করে দিলেন ভরতপুরের তালগ্রামের জিল্লার মির্জা ,আজিজুর মির্জা ও ফুলু বিবি প্রভূতি মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। জানা গিয়েছে স্থানীয় তালগ্রাম পঞ্চায়েতের পিছনেই রয়েছে খড়িন্দা সর্দারপাড়া। প্রায় ১০০টি আদিবাসী ও তপশীলি ভুক্ত পরিবার সেখানে বসবাস করেন। বেশিরভাগ বাড়ি মাটির অথবা ছিটেবেড়া দেওয়া কুড়ে ঘর। পাড়ার বেশিরভাগ বাসিন্দা দিনমজুরের কাজ করেন। এই পাড়ার বটতলায় প্রায় ১৫ বছর আগে একটি মন্দির তৈরির চেষ্টা করেন আদিবাসি সম্প্রদায়ের মানুষ। পাড়ায় চাঁদা তুলে মন্দিরের দেওয়াল চারটি খাড়া করতে পারলেও বাকি কাজ করতে পারছিলেন না প্রায় এক যুগ ধরে। এমন অবস্থায় পাড়ার হিন্দু সম্প্রদায়ের বসিন্দারা অনেকের কাছেই মন্দির তৈরির সাহায্যের জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু সাড়া ও সাহায্য না পাওয়ায় মন্দির তৈরী করতে পারছিলেন না। অবশেষে এক বছর আগে তালগ্রামের বাসিন্দা জিল্লার মির্জার কাছে সাহায্যের আবেদন জানালে সে মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যান্য মানুষের সঙ্গে কথা বলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা সাহায্যের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠল ঝাঁ চক চকে মন্দির। শুধু তাই নয় এই মন্দিরের জন্য কলকাতা থেকে একটি মনষা মুর্তিও এনে মনষা পূজো দিয়ে এই নতুন মন্দির উদ্বোধন করা হয়েছে। সামনে দুর্গাপূজা মুখে হাঁসি ফুটেছে খড়িন্দা গ্রামের ১০০ আদিবাসী পরিবারে। এ বিষয়ে গ্রামের স্বরূপ সর্দার বলেন, “প্রায় ১৫ বছর ধরে আমরা চেষ্টা করেও মন্দির বানাতে পারিনি। তাই গ্রামের সকলে যুক্তি করে জিল্লার সাহেবের কাছে গিয়েছিলাম। জিলার সাহেব একবাক্যে সাড়া দিয়েছেন। মন্দির তৈরির আসল কারিগড় মুসলিম গ্রামের মানুষ। মন্দির তৈরীতে প্রাণ খুলে সাহায্য করবে ভাবতেও পারিনি। কত যে খুশি আনন্দ হচ্ছে বলে বোঝানো যাচ্ছে না। “ এ বিষয়ে জিল্লার সাহেব বলেন “ পাড়ার সকল ছেলে মোড়া ভাই ভাই - সুতরাং হিন্দু হোক কিংবা মুসলিম আমরা এক সঙ্গে বসবাস করি। মন্দির তৈরি করে দিতে পেরে আমরাও খুব খুশি। তাছাড়া হিন্দু ভাইয়েরা আমাদের যে কোনো সমস্যা হলে পাশে এসে সাহায্য করেন। মুসলিম ভাই হিসাবে আমরাও সহযোগীতা করেছি। প্রয়োজনে ভবিষৎতেও করব। “
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct