আপনজন ডেস্ক: অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সভাপতি মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি এক বিবৃতিতে বলেন, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধ অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। এটি স্পষ্টতই ইসরায়েলের অপকর্ম এবং আকসা মসজিদের বাড়াবাড়ি ও অবমাননার একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। তিনি বলেন, বাস্তবতা হল, ইসরাইল একটি দখলদার রাষ্ট্র, যা নিপীড়ন ও নিপীড়নের ছায়ায় উসমানীয় খিলাফতের পতনের পর পশ্চিমা শক্তিগুলো কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং দুঃখজনকভাবে এর পরেও ইসরায়েল তার সীমানার বাইরে দখল করে চলেছ। তিনি অভিয়োগ করেন, জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদ বেশ কয়েকবার সিদ্ধান্ত নেয়, ইসরাইলকে ১৯৬৭ সালের সীমানায় ফিরে যেতে হবে। কিন্তু তারা তাতে কোনো মনোযোগ দেয়নি এবং দুঃখজনকভাবে মহান শক্তিগুলো এসব সত্ত্বেও ইসরাইলকে সমর্থন করে ও ইসরায়েলের উন্মুক্ত নিপীড়নকে সমর্থন অব্যাহত রাখে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোদীজি ভারতের ঐতিহ্যকে উপেক্ষা করে নিপীড়িতদের পরিবর্তে নিপীড়কের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন এবং ঘোষণা করেছেন, এটি সমগ্র জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং দুঃখজনক। অথচ, বাস্তবতা হল ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলের নিপীড়নকে রক্ষা করে হামাস। তার জন্রই এই যুদ্ধ। মাওলানা রহমানির মতে, এর সমাধান হচ্ছে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ঘোষণা এবং ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি উভয়ের জন্য ন্যায়বিচার।ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সাম্প্রতিক বড় আকারের শত্রুতার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশটির দুটি প্রধান মুসলিম সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ ও জামায়াতে ইসলামী হিন্দ। তারা অবিলম্বে দুই পক্ষের মধ্যে শত্রুতা বন্ধের ও আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া, কেরলে জমিয়তুল উলামার পক্ষ থেকে তিরুঅনন্তপুরমে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থনে ও ইসলায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল বের হয়।
এদিকে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা মাহমুদ আসাদ মাদানি গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের উপর ইসরায়েলি হামলা ও আবাসিক এলাকায় ভারী বোমাবর্ষণের নিন্দা জানিয়েছেন।এক বিবৃতিতে তিনি ইসরায়েল ঘোষিত যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানান। মাওলানা মাদানি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, আরব লীগসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবিলম্বে হস্তক্ষেপ ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান। মাওলানা মাদানি বলেন, জমিয়ত ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে, যারা ৭৫ বছর ধরে ইসরায়েলি নিপীড়ন ও সহিংসতা সহ্য করেছে, যার ফলে তাদের বর্তমান ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, তারা নিজেদের মাতৃভূমিতে বন্দি হিসেবে বসবাস করছে এবং তাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও মসজিদ আল-আকসা রক্ষার জন্য নিরলসভাবে সংগ্রাম করছে।ভারতের জাতীয় গণমাধ্যমে চলমান যুদ্ধের পক্ষপাতদুষ্ট চিত্রায়ণে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের সংগ্রামকে “সন্ত্রাসবাদ” হিসাবে বর্ণনা করায় মাওলানা মাদানি গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি মহাত্মা গান্ধি, পণ্ডিত নেহরু এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী সহ ভারতের বিশিষ্ট নেতাদের ফিলিস্তিনিদের প্রতি ধারাবাহিক সমর্থনের কথা তিনি তুলে ধরেন।মাওলানা মাদানি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের মধ্যস্থতায় প্রভাবশালী ভূমিকা পালনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি আহ্বান জানান। তিনি ন্যায়বিচারের নীতির ভিত্তিতে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের জীবন রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে তার প্রভাবকে যাতে কাজে লাগান তার জন্য আর্জি জানান।অন্যদিকে, আর এক মুসলিম সংগঠন জামায়াতে ইসলামী হিন্দের সভাপতি সৈয়দ সাদাতুল্লাহ হুসাইনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সাম্প্রতিক বড় আকারের শত্রুতার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এটা ভুলে গেলে চলবে না যে বর্তমান সহিংসতা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে ডানপন্থী নেতানিয়াহু সরকারের ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফল। তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলের দখলদারিত্ব ও বসতি স্থাপনের অব্যাহত নীতি এবং আল-আকসা মসজিদের উস্কানিমূলক অবমাননা এই অঞ্চলকে শান্তি ও স্থিতিশীলতার কোনো গুরুতর সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct