আপনজন ডেস্ক: দিল্লির কৃষি ভবনে মধ্যরাতের রাজনৈতিক টানাপাড়েনের পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধিদল পশ্চিমবঙ্গকে বকেয়া কেন্দ্রীয় তহবিল নিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির সাথে দেখা করতে ব্যর্থ হয়েছিল। তাদেরকে হেনস্থা করায় দিল্লি পুলিশের মুখ পুড়েছিল। সেই ঘটনার চারদিন পর কলকাতায় এসে মন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি জানিয়েছেন, এমএনআরইজিএস এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মতো প্রকল্পগুলিতে বাংলাকে অর্থ আটকে রাখার বিষয়ে আন্দোলনরত তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার এই শহরে আসা। তিনি পালিয়ে যাননি।
তবে তার আগমন এমন এক দিনে, যখন রাজভবনের বাইরে তৃণমূলের লাগাতার ধর্না টানা তৃতীয় দিন এবং দলের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল দার্জিলিংয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বকেয়া টাকা আদায়ে তার হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
এ িবষয়ে শনিবার বিকেলে সল্টলেকের বিজেপি দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি বলেন, কেন্দ্র কর্তৃক এমএনআরইজিএস এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অর্থ ছাড়া সম্পর্কিত সমস্ত নথি আমি নিয়ে এসেছি। তিনি বলেন, ‘এই শহরে তৃণমূলের যে কোনো জায়গায় তারা আমাকে চায়, আমি তাদের সঙ্গে বসতে প্রস্তুত। এমনকি রাজ্য পঞ্চায়েত বিভাগও যদি জায়গা পছন্দ করে তবে আমি তাতে রাজি আছে। কিন্তু তারা আলোচনায় বসতে রাজি হবে কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। কারণ তারা কথা বলতে চায় না, তারা কেবল তাদের নাটক চালিয়ে যেতে চায়।
মন্ত্রীর আলোচনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানানো হয়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মন্ত্রীকে আমাদের ধর্না মঞ্চে আসতে দিন এবং এখানে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে দিন।
‘নৈতিক বিজয়’ দাবি করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কয়েকদিন আগে তিনি আমাদের অফিস থেকে বের করে দিয়েছিলেন। আজ তার কলকাতায় আগমন প্রমাণ করে আমাদের প্রতিবাদের কারণে কেন্দ্র চাপের মধ্যে রয়েছে।
এই সপ্তাহের শুরুতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার সংসদ সহকর্মী মহুয়া মৈত্র উভয়েই দাবি করেছিলেন যে সাধ্বী নিরঞ্জন দলের নেতা এবং জব কার্ডধারীদের একটি অংশের সাথে দেখা না করেই “তার অফিসের পিছনের দরজা থেকে পালিয়ে গেছেন”।
দলের অভিযোগ, তৃণমূল প্রতিনিধিদলকে ৯০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি কখনো কোথাও থেকে পালিয়ে যাইনি। বিপরীতে, আমি সেদিন আমার অফিসে আড়াই ঘন্টা তাদের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু তৃণমূল এই আলোচনা আয়োজনে কোনও আগ্রহ দেখায়নি এবং পরিবর্তে তারা যে নাটক তৈরিতে আগ্রহী ছিল, তার দিকে মনোনিবেশ করেছিল।
‘পালানোর’ অভিযোগের জবাবে নিরঞ্জন বলেন, ‘এটা মিথ্যে। আমি প্রতিদিন ৪ নম্বর গেট থেকে ভবনে প্রবেশ করি এবং একই গেট ব্যবহার করে আমার অফিস থেকে বের হই। গত মঙ্গলবারও আমি সেটাই করেছি। আমার অফিসের পেছনের কোনো গেট নেই।
তিনি বলেন, ‘আলোচনায় আগ্রহ না থাকলে আমি কি এখানে আসতাম? ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে কেন্দ্রের পাঠানো দুর্নীতির সতর্কবার্তা বারবার উপেক্ষা করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্য বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার ও শুভেন্দু অধিকারীর পাশে দাঁড়িয়ে মন্ত্রী বলেন, ২০০৫ সালের আরইজিএ কেন্দ্রকে এই পরিস্থিতিতে তহবিল বন্ধ করার ক্ষমতা দেয় এবং আমরা আইনের বাইরে কিছুই করিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি কোনো অন্যায় করে থাকি, তাহলে তারা কেন আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে না? কারণ তারা জানেন, যদি তাঁরা তা করেন, তাহলে আদালত অবিলম্বে দুর্নীতির সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেবে।
তবে, তৃণমূলের দাবি মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজভবনে ধর্না মঞ্চে যে দেখা করবেন না তা প্রায় নিশ্চিত।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct